রোববারের আলাপন- চীনা প্রতিবন্ধী সাঁতারু সু ছিংয়ের গল্প
2021-10-03 19:51:03

অক্টোবর ৩: ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রিও প্যারালিম্পিক গেমসের পুরুষদের ৫০ মিটার বাটারফ্লাই সাঁতারের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় চীনের খেলোয়াড় সু ছিং চ্যাম্পিয়ন হন। প্রতিযোগিতায় তিনি নতুন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। আজ আমরা আপনাদের সঙ্গে তাঁর গল্প শেয়ার করব। 

১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে চীনের হ্যা নান প্রদেশের ফিং তিং শান শহরের উপকণ্ঠের একটি সড়কে এক গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে সু ছিং তাঁর দুটো বাহু হারান। 

দুর্ঘটনার পর সু ছিংয়ের মুখ থেকে হাসি ফুরিয়ে যায়। তিনি সব সময় বাসায় থাকতে শুরু করেন। জানালা দিয়ে মাঝেমাঝে দূরে বন্ধুদের আনন্দের সঙ্গে খেলাধুলার দৃশ্যের দিকে তিনি তাকিয়ে থাকেন। কখনো কখনো সহপাঠীরা তাঁর বাসার নিচে এসে তাঁকে ডাকেন: “সু ছিং, নামো, আমরা একসাথে স্কুলে যাব, কেমন?”

সু ছিং সহপাঠীদের কথা না-শুনার ভান করেন। তাঁর মা সু ছিংয়ের আচরন বুঝেন। তিনি নিচে নেমে সহপাঠীদের তাঁর অবস্থা বুঝিয়ে বলেন। 

এক বছর পর চিকিত্সকের পরামর্শে মা সু ছিংকে নিয়ে উহান শহরের একটি কৃত্রিম অঙ্গ বিক্রির কোম্পানিতে যান।  সেখান থেকে তিনি সু ছিংয়ের জন্য দুটি কৃত্রিম বাহু কিনতে চান। এই কোম্পানির পরিচালক নিজেও এজন প্রতিবন্ধী। তিনি একসময়  বিশ্ব প্রতিবন্ধী টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তিনি সু ছিংকে জিজ্ঞেস করেন: “বাবা, তুমি কী পছন্দ করো?” 

সু ছিং উত্তর দেন: “আমি, আমি স্নান করতে এবং পানিতে খেলতে  পছন্দ করি, ম্যাডাম।”

কোম্পানির পরিচালক সু ছিংয়ের মাকে বলেন, “আপু, সে পানি পছন্দ করে, আপনি তাঁকে সাঁতার প্রশিক্ষণে পাঠাবেন ,কেমন? সে হয়তো নিজেকে আবার খুঁজে পাবে।”

মা পরিচালকের প্রস্তাব শুনেন। নিজ শহরে ফিরে গিয়ে মা সু ছিংকে নিয়ে সাঁতার স্টেডিয়ামে যান। তিনি কোচকে সব বুঝিয়ে বলেন। কোচ সু ছিংকে বলেন, “তুমি সাঁতারের পুলে নামো, একটু চেষ্টা করো।”

সু ছিং সেখানে নামতে অনেক ভয় পান। তিনি তাঁর মাকে বলেন, “মা, পুল অনেক গভীর, আমার ভয় লাগছে!”

মা তাঁকে উতসাহিত করে বলেন, “বাবা, তোমার ভয় লাগবে না, মা তোমার পাশে আছে, তোমার কোনো সমস্যা হবে না।”

মায়ের উতসাহে অবশেষে তিনি মনের ভয় জয় করে পানিতে নামেন। 

কোচের ধারাবাহিক নির্দেশনা ও সাহায্যে সু ছিং অনেক অগ্রগতি অর্জন করেন। এদিকে, কোচ সু ছিংয়ের মানসিক সমস্যাও মোকাবিলার চেষ্টা করেন। তিনি তাঁকে নিয়ে হ্যা নান প্রদেশের প্রতিবন্ধী সাঁতার দল পরিদর্শন করেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ ও জীবন দেখে সু ছিং অনেক অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি মনে মনে ভাবতে থাকেন: “আমিও একদিন তাঁদের মতো হবো।”

অনেক প্রচেষ্টার পর তিনি সুফল অর্জন করেন। হ্যা নান প্রদেশের চতুর্থ প্রতিবন্ধী গেমসের সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি একটি স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্য পদক এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। তখন তিনি অনেক উত্তেজিত হয়ে মাকে বলেন, “মা, দেখো! আমি অন্যদের মতো করতে পারব। আমিও ভাল করতে পারব।”

তাঁর কথা শুনে মায়ের গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে থাকে। তিনি বলেন, “বাবা, তুমি সব সময় সবচেয়ে ভাল।”

সু ছিং অব্যাহতভাবে বেইজিং, লন্ডন ও রিও তিনটি প্যারালিম্পিক গেমসে অংগ্রহণ করে মোট ১০টি স্বর্ণপদক অর্জন করেন। বারোটি  নতুন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। তিনি হচ্ছেন চীনের প্যারালিম্পিক গেমসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণপদক জয়ী সাঁতারু। 

সু ছিং নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, “মানুষ ধ্বংস হতে পারে, তবে কখনো পরাজিত হতে পারে না।” 

(আকাশ/এনাম/রুবি)