করোনা মহামারিতে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে দেশের সব স্কুল-কলেজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শ্রেণিকক্ষের পাঠে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। মাঝখানে দুএক জায়গায় শিক্ষার্থীদের করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে বলা যায়। দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
এ অবস্থায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসেই খুলতে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ বিষয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না হলেও আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ অক্টোবর খুলতে যাচ্ছে দেশের প্রধান বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ও বিভাগীয় সেমিনার। দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ২১ অক্টোবর খুলছে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে ৭ অক্টোবর থেকেই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য আতিকুল ইসলাম। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এভাবে অক্টোবরেই বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছে নিজেদের সুবিধা মতো।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন খোদ রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদ। গত ২রা সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে এ সময় রাষ্ট্রপতি বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। শ্রেণিকক্ষ, ছাত্রাবাস, ক্যাম্পাস, অফিসসহ সর্বত্র যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলেন রাষ্ট্রপতি। স্বল্প সময়ের মধ্যে সব শিক্ষার্থীর টিকাদান সম্পন্ন করতে ব্যবস্থা গ্রহণ ও সার্বিক মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি। করোনাকালীন পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাসসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেন রাষ্ট্রপতি।
দেশের স্কুল কলেজগুলো মোটামুটিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যায়গুলো যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করবে এটা আশা করা যায়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ভর্তি পরীক্ষায় হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও হলের বাইরে অভিভাবকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঢিলেমি দেখা গেছে। এটা একেবারেই কাম্য নয়।
এখানে কয়েকটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে:
এক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- শুরুতে শুধু অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ও বিভাগীয় সেমিনারও শুধু তারাই ব্যবহার করতে পারছেন। এ নিয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কিন্তু করোনা মহামারিতে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের হলে তোলার এ সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। অন্য শিক্ষার্থীদের দ্রুত হলে তোলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করছে। কাজেই বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে ধৈর্য্য ধরতে হবে।
দুই. যে সব শিক্ষার্থী করোনার প্রথম ডোজ এখনো পায়নি প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে তাদের টিকা দিয়ে হলে তুলতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নির্দেশনাও রয়েছে।
তিন.১৮ মাস ধরে শিক্ষার্থীরা হলে ছিল না। তাই এ সময়ে হল ফি মওকুফ হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ১৮ মাসের হল ফি দিতে হবে না শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশা করা যায়।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠা নিয়ে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। ৫ অক্টোবর হল খোলার কথা থাকলেও কিছু শিক্ষার্থী ১ অক্টোবর একুশে হল ও শহীদুল্লাহ হলের তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়ে। তাদের দাবি মাসের চারদিন মেসে থাকার জন্য তাদের পুরো মাসের ভাড়া দিতে হবে। ১ অক্টোবর থেকে হল খুলে দেয়ার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। তাই নিরূপায় হয়ে তারা হলে উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে হল ছাড়তে রাজি করাতে পারেনি। এ বিষয়ে এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২ অক্টোবর প্রভোস্ট কমিটির সভায় এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এটা সত্যি যে দীর্ঘ দিন হলের বাইরে থেকে আর্থিকসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। তা সত্ত্বেও তালা ভেঙে হলে ঢোকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীর এ ক্ষেত্রে বিবেচনাপ্রসূত কাজ করেনি। তবে,সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াই বিবেচনাপ্রসূত হবে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।