অক্টোবর ১: সম্প্রতি হুনান প্রদেশ ও তিব্বতসহ বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলের দরিদ্র প্রতিনিধিরা চীনের প্রতিবন্ধী ফেডারেশন আয়োজিত অভিজ্ঞতা-বিনিময় সম্মেলনে অংশ নেন। প্রতিনিধিরা সম্মেলনে নিজেদের গল্প ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
২০১১ সালের মার্চ মাসে একবার গাড়ী দুর্ঘটনার শিকার হন ইয়াং শু থিং। দুর্ঘটনায় তিনি শরীরের বিশেষ ক্ষমতা হারান। এসময় তিনি আত্মহত্যার কথা ভাবতে শুরু করেন ও হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু ইয়াং শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখতে পান। বন্ধুদের উত্সাহে ইয়াং নিজের জন্মস্থানে ফিরে আসেন। তিনি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ফুলের বাণিজ্যিক সমবায় প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছর পর তাঁর কোম্পানির উত্পাদিত পণ্য সফলভাবে ১২টি দেশের বাজারে রপ্তানি হয়। কোম্পানিটি কাছাকাছি ৩০টিরও বেশি গ্রামের ৫৯ জন প্রতিবন্ধীকে এবং ৩৮০টি পরিবারের ১৩৮৬ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং তাঁদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করে।
ইয়াং শু থইং বলেন, কোম্পানি গড়ে তোলার প্রথম দিকে স্থানীয় জেলার পৌর সরকার তাঁকে ঋণ দিয়েছে। পৌর সরকার তাঁকে চীনের আমদানি-রপ্তানি মেলায় অংশ নিতেও সহায়তা করেছে। এ ছাড়া, কোম্পানিটি চীনের কৃষিশিল্প প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় তাঁর কোম্পানি তৃতীয় স্থান লাভ করে।
ইয়াং শু থিংয়ের মতো প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়ার গল্প চীনে আরো আছে। চীনে নিবন্ধিত ৭০ লক্ষাধিক প্রতিবন্ধী সময়মতো দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছেন; ৯০ লক্ষাধিক প্রতিবন্ধী ন্যুনতম জীবনমান পেয়েছেন; ৩০ লক্ষাধিক দরিদ্র ও অক্ষম ব্যক্তি আলাদাভাবে বীমার আওতায় এসেছেন; সাড়ে সাত লাখের বেশি দরিদ্র প্রতিবন্ধী পরিবারের আবাসন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে; ৫.৭৮ লাখ দরিদ্র প্রতিবন্ধী পরিবারকে ভালো জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধিতার কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের সমস্যা সমাধান করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আঞ্চলিক সরকারের পৌর সরকার পর্যন্ত ধারাবাহিক বিশেষ ব্যবস্থা ও নীতি গ্রহণ করেছে। চীনের প্রতিবন্ধী ফেডারেশন ও কেন্দ্রীয় সরকার অন্য ২৬টি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ‘দরিদ্র প্রতিবন্ধী নাগরিকদের দারিদ্র্যবিমোচন কর্ম-পরিকল্পনা, ২০১৬-২০২০’ প্রকাশ করেছিল। এতে বিস্তারিতভাবে প্রতিবন্ধীদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়ার নীতি ও ব্যবস্থা বর্ণনা করা হয়।
চীন সরকারের ধারাবাহিক ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি ও সমাজ সমিতির নির্বাহী মহাসচিব রমিদা সালসিয়াহ আলিসজাহবানা বলেন, চীনের প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনের অভিজ্ঞতা ও নতুন পদ্ধতি অন্যান্য দেশের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ ও শিক্ষণীয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বেইজিং ব্যুরোর মহাপরিচালক লি ছাং ওয়েই বলেন, চীনে সাড়ে ৮ কোটির বেশি প্রতিবন্ধী মানুষ আছে। অন্যান্য দেশের চেয়ে চীনা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি অধিক স্থিতিশীল।
চীনা প্রতিবন্ধী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান চাং হাই তি সম্মেলনে বলেন, বিশ্ব দারিদ্র্যবিমোচন কাজের অভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তিনি আন্তর্জাতিক সমাজকে প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যবিমোচনে আরও কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের ন্যায্যতা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। চীনা প্রতিবন্ধী ফেডারেশন জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশের সরকার, ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে ব্যাপক বাস্তব সহযোগিতা চালাতে ইচ্ছুক। চীন বিশ্বের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেও ইচ্ছুক। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)