চীনের সার্বিক সচ্ছলতা হলো বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে বড় অবদান
2021-09-29 15:45:13

সংবাদ পর্যালোচনা

সেপ্টেম্বর ২৯: গত পহেলা জুলাই চীন ঘোষণা করেছে যে, চীন সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তুলেছে এবং চীনা জাতির সহস্রাব্দের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সমাজ এর প্রশংসা করার পাশাপাশি জানতে চেয়েছে যে, সার্বিক সচ্ছল সমাজ বলতে কী বোঝায়? চীন কীভাবে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠন করলো? চীনের সার্বিক সচ্ছলতা বিশ্বকে কী দেবে? চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয় থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) ‘চীনের সচ্ছল সমাজ’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। শ্বেতপত্রে চীনের সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠন ও অনুশীলন পর্যালোচনা করা হয়েছে, চীনের আধুনিকীকরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের সাধারণ প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

সার্বিক সচ্ছলতা বাক্যাংশে ‘সার্বিক’ শব্দের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। শ্বেতপত্রে দেখা যায় যে, চীনা জনগণ যে ‘সার্বিক সচ্ছলতার’ জন্য চেষ্টা করে, তার অর্থে রয়েছে ব্যাপকতা। অর্থাৎ, টেকসই অর্থনীতি ও সুষ্ঠু উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা, জনগণের গণতন্ত্রের ক্রমাগত সম্প্রসারণ করা, সংস্কৃতির আরও সমৃদ্ধ উন্নয়ন, মানুষের জীবিকার উল্লেখযোগ্য উন্নতি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ঐতিহাসিক পরিবর্তন; যা জনসংখ্যার বড় একটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন অঞ্চল অর্থাৎ শহর ও গ্রামাঞ্চলের অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

 

এতে দেখা যায়, চীনের সার্বিক সচ্ছল সমাজ হলো একটি বহুমাত্রিক ও সর্ব-মহলের সচ্ছল সমাজ। এর মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো ভিত্তি এবং মানুষের জীবিকার উন্নতি সবচেয়ে উপযুক্ত প্রমাণ। শ্বেতপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে চীনের মাথাপিছু বার্ষিক নিষ্পত্তিযোগ্য আয় ছিল মাত্র ১৭১ ইউয়ান। যা ২০২০ সালে এসে ৩২১৮৯ ইউয়ানে পৌঁছায়। বিশেষ করে চীন ঐতিহাসিকভাবে চরম দরিদ্রতা মোকাবিলা করে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া চীন বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক নিশ্চয়তাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রাথমিক চিকিত্সা বীমার আওতায় ১.৩ বিলিয়নের বেশি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো- সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় চীন বনজ সম্পদের সর্বাধিক বৃদ্ধি এবং বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম বনায়নের দেশে পরিণত হয়েছে। ফ্রান্সের চীন-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পিয়ের পিকর্ডে মন্তব্য করেন যে, ‘সার্বিক’ শব্দটি মানে চীনের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র। এসব ক্ষেত্রে চীন অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং তা চীনা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।

কলম্বিয়া-চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান গিলারমো পুয়ানা মনে করেন, একটি সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার জন্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল চীনের বড় সাফল্যই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের একটি মডেল।

 

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সার্বিক সচ্ছল চীনা সমাজ গড়ে তোলা বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে একটি বড় অবদান। একই সাথে, চীন সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠন করে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে চীন টানা ১৫ বছর ধরে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে, যার গড় মান বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ৩০ শতাংশেরও বেশি। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে বিশ্বে চীনা অর্থনীতির গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ বছরের প্রথমার্ধে চীনের অর্থনীতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চীন একটি নতুন উন্নয়ন প্যাটার্ন নির্মাণের গতি বাড়ানোয় তা নিঃসন্দেহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য আরও বিস্তৃত বাজার ও উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

 

একটি গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলায় চীনের অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা অনেক উন্নয়নশীল দেশকে আধুনিকীকরণের নতুন পথ সরবরাহ করেছে। মিশরের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সালাহ আজলি বলেন, ‘দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনের কার্যকর অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য শিক্ষণীয় নমুনা হয়েছে।

 

সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠনে উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতা এখনও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও অভিন্ন সমৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের জন্য, চীনা জনগণ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করবে এবং বিশ্বের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়াবে, মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করবে এবং আরও সুন্দর বিশ্ব গঠনের জন্য অবদান রাখবে।

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)