পরিবহন বর্তমানে সবুজ উন্নয়ন ও কার্বন নিরপেক্ষতা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে ওঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পরিবহন শিল্পকে সবুজ এবং নিম্ন কার্বন নির্গমনকারী হিসেবে গড়ে তুলা হয়েছে। এ সময় পরিবহন কাঠামোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির যানের ব্যবহার জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
শান তুং প্রদেশের হ্য চ্য শহরে কাস্টম বাস নামের একটি পরিবহন পদ্ধতি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের ব্যক্তিগত পরিবহন চাহিদা পূরণে কাস্টম বাস রুট তৈরি করা হয়েছে। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রুট, আবাসিক কমিউনিটি থেকে অফিসে যাবার বাস রুট ইত্যাদি।
পাবলিক পরিবহন পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দেয়া সবুজ পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। গত বছর চীনা পরিবহন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন যৌথভাবে প্রকাশ করেছে ‘সবুজ পরিবহন কার্যক্রম পরিকল্পনা’। তাতে বলা হয়, উপযুক্ত ও নিম্ন কার্বন জীবনধারাকে উত্সাহিত করতে বাস, সাইকেল ও হাঁটাসহ নিম্ন কার্বন নির্গমনকারী পরিবহন পদ্ধতি ব্যবহারে অধিক গুরুত্বারোপ করা হবে। আগামিতে যান্ত্রিক যানবাহন কমিয়ে এনে সারা চীনের সবুজ পরিবহনের মান উন্নয়ন করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
কাস্টম বাস রুট ছাড়া, সাইকেলের জন্য বিশেষ রোড নির্মাণ, নতুন ধরনের জ্বালানি ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহারে প্রচারণা চালানোসহ চীনের স্থানীয় সরকারগুলো নিজ নিজ ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে এখন সবুজ পরিবহন পদ্ধতির ব্যবহার চীনাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ বাস, টেক্সি ও ডেলিভারি গাড়ির মাধ্যমে নতুন ধরনের জ্বালানি চালিত গাড়ির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪ লাখ ৬৬ হাজার, ১ লাখ ৩২ হাজার ও ৪ লাখ ৩০ হাজার।
চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে বেইজিং থেকে সি আনের নতুন জেলার মধ্যেকার সড়ক পথের হ্যপেই প্রদেশের অংশ চালু হয়েছে। এ হাইওয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের গুণগতমান অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে। উচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এতে ব্যবহার করা হয়েছে। পেইতৌ জিপিএস ব্যবস্থা, বিগ ডেটা, এআইসহ নতুন প্রজন্মের তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। রোডের দু’পাশে ৩,৭০০টির বেশি স্মার্ট বাতি স্থাপন করে প্রয়োজনীয় আলো এবং বিদ্যুত সাশ্রয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
হাই স্পিড ট্রেনও সবুজ পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ২০০৮ সালে বেইজিং-থিয়ান চিন রুটে চীনের প্রথম হাই স্পিড ট্রেন চালুর পর চীনের হাই স্পিড রেলের উন্নয়ন দ্রুত চলছে। প্রতি বছর চীনে ৩,৫০০ কিলোমিটার হাই স্পিড রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। ফলে চীনজুড়ে তৈরি হয়েছে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক হাই স্পিড রেল নেটওয়ার্ক ।
চীনের জাতীয় রেল কোম্পানির উপাত্ত অনুযায়ী, জ্বালানি সাশ্রয় ক্ষেত্রে হাই স্পিড ট্রেন অনকে এগিয়ে। প্রত্যেক যাত্রীর এক’শ কিলোমিটার যাত্রায় বিমানের ১৮ শতাংশ ও বাসের ৫০ শতাংশ শক্তির ব্যয় হয়। অন্যদিকে, চার লেনের হাইওয়ের তুলনায় হাই স্পিড রেলপথে ভূমির ব্যবহার ৫০ শতাংশ কম। পরিবেশ সংরক্ষণের দিক থেকে হাই স্পিড ট্রেনের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ বিমানের ৬ শতাংশ ও গাড়ির ১১ শতাংশ। ২০১২ সাল থেকে ১০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন যাত্রী পরিবহনে হাই স্পিড রেল সড়কপথের তুলনায় ২,৩২০ টন কম কার্বন নির্গমন করেছে।
পাশাপাশি, চীনের হাই স্পিড ট্রেনের বিদ্যুতায়নের হার ৭৪.৯ শতাংশ এবং রেল পরিবহনের তেল খরচ ১৯৮৫ সালের ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন থেকে কমে বর্তমানে ২৩ লাখ ২০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। তার মানে প্রতি বছর কার্বন নির্গমনের পরিমাণ ১ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজর টনে নেমেছে।
বিমান চলাচলের সঙ্গে জ্বালানি খরচের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ল্যান্ডিং গিয়ার খুব দ্রুত ডাউন হয়ে গেলে জ্বালানি খরচ বেশি হয়, আর দেরিতে হওয়াটাও নিরাপদ নয়। তাই চীনের এয়ারলাইনসগুলো বিগ ডেটা ব্যবহার করে ফ্লাইটের বিভিন্ন পর্যায়ের তেল সাশ্রয় পয়েন্ট জানতে পারছে। ফলে সে আনুপাতে পারিচালিত হয়ে থাকে চীনের বিমানগুলো।
বিমান বন্দরেও সবুজ বিপ্লব চলছে। কাগজমুক্ত পরিবহন এখন খুব সাধারণ একটি দৃশ্য। মোবাইলফোন স্ক্যান করে চেক-ইনের ব্যবস্থা থাকায় এখন আর কাগজের টিকেটের দরকার নেই। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কাগজমুক্ত পরিবহনের মাধ্যমে মোট ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের কাগজ সাশ্রয় হয়েছে। চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা চলাকালে চীনে ২০০ কোটির বেশি বারের মতো কাগজমুক্ত সেবা ব্যবহার হবে এবং পর্যটকদের চেক-ইন সময় ২০০ কোটি ঘন্টা হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে চীনের নতুন ধরনের জ্বালানি চালিত গাড়ির অনুপাত ছিল ২০ শতাংশ। কোন কোন জায়গায় বিদ্যুত চালিত গাড়ির অনুপাত ৮০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। (শিশির/এনাম/রুবি)