গত ২১ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে এক ভাষণ দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেন, ‘চীন ২০৩০ সালের পর থেকে কার্বন নির্গমন হ্রাস শুরু করবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে একটি কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত হবে। এই দুটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে গেলে কঠিন প্রয়াস প্রয়োজন, তবে চীন যথাযথ প্রচেষ্টা চালাবে। তা ছাড়া, উন্নয়নশীল দেশসমূহকে সুবজ ও নিম্ন কার্বন উন্নয়নে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে যাবে এবং দেশে-বিদেশে আর কোনো নতুন কয়লা-চালিত প্রকল্প নির্মাণ করবে না চীন ।
এই ভাষণের মাধ্যমে কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে তার দুটো লক্ষ্য নিয়ে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলো চীন। মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যৌথ কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞার পাশাপাশি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন অন্য উন্নয়নশীল দেশসমূহকে তাদের নিম্ন কার্বন নির্গমন কার্যক্রমে ব্যাপক সমর্থনের কথাও জানাল চীন। তাতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের দায়িত্বশীল বড় দেশের ভাবমূর্তি ফুটে উঠেছে।
মার্কিন থিঙ্কট্যাংক গ্লোবাল এনার্জি মনিটরিং অরগানাইজেশনের পরিসংখ্যান মতে, চীন বিদেশে আর কোনো নতুন কয়লা-চালিত প্রকল্প বন্ধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার ফলে ৫,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি। তবে তাতে প্রতি বছর ২০ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পাবে। বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েও চীন দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি আর কেবল প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ নেই। কারণ বেশ কয়েক বছর ধরেই চীন বিদেশে কয়লা-চালিত বিদ্যুত কারখানায় তার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে চীনের কয়লা-চালিত বিদ্যুত কারখানার বিনিয়োগ অনেক হ্রাস পেয়েছে।
ব্লুমবার্গ গত ২২ সেপ্টেম্বর জানায়, বর্তমানে বিশ্বের ৭০ শতাংশ কলয়া-চালিত বিদ্যুত কারখানা চীনের বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করছে। চীন ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে বিদেশে ১৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের কয়লা-চালিত বিদ্যুত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছিল, তবে ইতোমধ্যে ৮৮০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের প্রকল্প স্থগিত ও বাতিল করেছে। চীনে ২০১৪ সালের পর ৫২টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র একটি চালু রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে চীন। ২০২০ সালে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও জলশক্তি চালিত বিদ্যুত কারখানায় চীনের বিনিয়োগ ছিল বিদেশি বিনিয়োগের মোট পরিমাণের ৫৭ শতাংশ। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে একটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ। কারণ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে কয়লা উন্নয়ন ও কয়লা-চালিত বিদ্যুত কারখানাসহ এ ধরণের প্রকল্পে বিনিয়োগ বিবেচনা করবে না চীন। বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই নতুন জ্বালানি উন্নয়নে চীন ও বাংলাদেশ সহযোগিতা জোরদার করেছে। ২০১৯ সালে চায়না জাতীয় যন্ত্রপাতি আমদানি ও রপ্তানি কর্পোরেশন ও বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম বিদ্যুত কোম্পানির সঙ্গে এক স্মারক স্বাক্ষর করেছে। দু’পক্ষ পৃথক ৫০ শতাংশ পুজির মাধ্যমে বাংলাদেশে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দূষণমুক্ত জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুব অভিজ্ঞ, যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে রয়েছে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা। নতুন জ্বালানি খাত দু’দেশের সহযোগিতা গভীরতর করার একটি বন্ধন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু-বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির মতে, চীনের এমন সিদ্ধান্ত হবে ‘একটি মহাঅবদান’।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যৌথ কমিউনিটি গঠনের চেতনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিশ্ব, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও বেশি চীনা প্রস্তাব এবং সহযোগিতা প্রদান করবে চীন।
রুবি/এনাম