কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর প্রদর্শনী শিল্প তার দুর্দিন মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে চলছে। সকল বাধা অতিক্রম করে ধীরে হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে এই শিল্প। অনেক প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে অনলাইন প্রদর্শনী খুবই জনপ্রিয় একটি উপায়ে পরিণত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ১৮তম চীন-আসিয়ান মেলা এবং চীন-আসিয়ান ব্যবসা ও বিনিময় শীর্ষ সম্মেলন সরাসরি ও অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনলাইনে ‘ক্লাউড আসিয়ান মেলা’ তার চিরাচরিত আয়তন সীমা ভেঙ্গে দিয়ে দেশি-বিদেশি সব মহলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। অনলাইনে বহু ক্ষেত্রে সহযোগিতার সূচনা করেছে। প্রদর্শনী শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তাই একে অনেকে প্রদর্শনী শিল্পের টেকসই উন্নয়নের প্রতীক বলে মনে করছেন।
চীন ও আসিয়ানের মধ্যে সংলাপের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার গত ৩০ বছরে দু’পক্ষের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহতভাবে গভীরতর হয়ে এটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাণবন্ত সহযোগিতায় পরিণত হয়েছে। আসিয়ান মেলা ২০০৪ সালে শুরু হবার পর থেকে বিশ্বমুখী চীন-আসিয়ান সহযোগিতার ১১টি দেশ ছাড়িয়ে বিশাল বাজার ও ব্যবসা সুযোগ সৃষ্টি করছে।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে আসিয়ান মেলা প্রথমবারের মতো সরাসরি ও অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে এটি ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে তার ব্যবসা সুযোগ সম্প্রসারণ করে।
অনলাইনে ‘ক্লাউড আসিয়ান মেলা’র পেইজে চীনা পণ্য হল, আসিয়ান জাতীয় হল এবং ‘এক পথ, এক অঞ্চল’ আন্তর্জাতিক হল ইত্যাদির সূচনা করা হয়। তাতে স্থান পায় লাওসের চা, মালয়েশিয়ার পাখির বাসা বা কিউবিলোজসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী হল। থ্রিডি কাল্পনিক প্রদর্শনী হলের মাধ্যমে দর্শকরা খুব কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও প্রদর্শনী পণ্য দেখতে পান এই পেইজে।
অনলাইনে অর্ডার করে থাইল্যান্ডের ফল চীনা বাজারে ডেকে আনতে পারেন তারা। কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানির ব্যবস্থাপক ছিন ছিং সিয়ান বলেন, চলতি বছর থাইল্যান্ডের ডুরিয়ান খুবই জনপ্রিয়। তার অনলাইন বিক্রয় অনেক বেড়েছে।
চীন-আসিয়ান মেলার সচিবালয়ের মহাসচিব ওয়াং লেই বলেন, ‘ক্লাউড আসিয়ান মেলা’ শুরু হবার পর সারা বছরের অনলাইন ও নিয়মিত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়িত হয়েছে। চলতি বছরের মেলা অব্যাহতভাবে অনলাইন-অফলাইন রূপে ‘ক্লাউড প্রদর্শন’, ‘ক্লাউড সম্মেলন’ও ‘ক্লাউড আলোচনা’সহ বিভিন্ন ফাংশন পূর্ণাঙ্গ করে লাইভ পরিচিতিমূলক সেমিনার ও তাতে একের পর এক ভিডিও তত্পরতা সংযুক্ত করা হয়।
প্রদর্শনী অফলাইন থেকে অনলাইনে রূপান্তরিত হয়েছে, তবে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
১. অনলাইন প্রদর্শনীর স্থানান্তর হার খুব বেশি নয়। ওয়াং লেই মনে করেন, অনলাইন প্রদর্শনী প্রধানত খুচরা-বিক্রয় শিল্প। বি-টু-বি হিসেবে প্রদর্শনীতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের চুক্তিতে পৌঁছানোর সংখ্যা খুব বেশি নয়।
২. নতুন ক্রয় ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো দরকার। অভ্যন্তরীণ বিখ্যাত ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন, তবে দেশি-বিদেশি অনলাইন-বিক্রয়ের গ্রহণযোগ্যতা এখনো ভিন্ন। কিছু ব্যবসায়ী বাস্তব প্রদর্শনী হলে পণ্য বাছাই করতে এবং ব্যবসায়ীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে অধিক পছন্দ করেন। এছাড়া, কোন কোন দেশের নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণ, ইন্টারনেট গতি এবং অনুবাদের দক্ষতা কেনাকাটার কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলছে।
৩. যৌগিক তথা অনলাইনে ও সরাসরি প্রদর্শনী প্রতিভার চাহিদা বেশি। অনেক বিদেশি প্রদর্শনী ব্যবসায়ীদের চীনা ভাষা ও ইংরেজী ভাষাসহ বহু ভাষা বলার দক্ষতা আছে। তাদের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগে স্পষ্ট প্রধান্য আছে। ভবিষ্যতে প্রদর্শনী শিল্পের উন্নয়নে যৌগিক প্রতিভার চাহিদা আরো বাড়বে।
বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট, বিগ ডাটা, ক্লাউড হিসেব, ভিআর ও এআরসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ও ব্যাপক ব্যবহার বিভিন্ন মহলের আন্তঃযোগাযোগের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে। ফলে প্রদর্শনী শিল্পের দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
গত বছর থেকে ‘ক্লাউড আসিয়ান মেলা’ ইতিবাচকভাবে ডিজিটাল প্রদর্শনী প্ল্যাটফর্ম, ডিজিটাল সম্মেলন প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল ব্যবসায়ী প্ল্যাটফর্ম তৈরী শুরু করেছে।
অনলাইন ও অফলাইনকে সংযুক্ত করে বুদ্ধিমান গ্রাহকদের পরিবেশগত লুপ তৈরী করা হয়েছে। জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনী গ্রুপের মহাপরিচালক ওয়াং জাও ইয়ুন মনে করেন, অনলাইন প্রদর্শনী অফলাইন প্রদর্শনীর সমর্থন থেকে হবে না। গ্রুপটির নিজস্ব গবেষণায় উদ্ভাবিত ডিজিটাল গ্রাহক অধিগ্রহণ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রুপের ‘ক্লাউড’ ক্রেতা সম্প্রসারণ দক্ষতা উন্নত করেছে। এটি প্রতিষ্ঠানকে নিম্ন মূল্যে ডিজিটাল বাণিজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে কারখানা ও পণ্য দেখাতে সহায়তা করবে।
বর্তমানে কুয়াং সি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর নির্মাণ ত্বরান্বিত করা হয়েছে। যাতে পুরোপুরিভাবে প্রদর্শনী প্রকল্পের প্রধান শক্তি, আনুষঙ্গিক পরিষেবা সমর্থন এবং ব্যবসার আধুনিক শিল্প একত্রীকরণের প্রভাব সক্রিয় করা যায়।
চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিআইটি) সাবেক উপ-প্রধান ওয়াং চিন জেং চীন-আসিয়ান প্রদর্শনী জোট প্রতিষ্ঠা করে প্রদর্শনী তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা, পুরোপুরিভাবে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে বহু ধরণের উচ্চ-কার্যকর তথ্য বিনিময়, ও পেশাদার জনশক্তির প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ৮ অক্টোবর চীনের তখনকার প্রধানমন্ত্রী সপ্তম চীন ও আসিয়ান নেতাদের সম্মেলনে ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর চীনের নান নিং শহরে চীন-আসিয়ান মেলার আয়োজন করার উদ্যোগ নেন। তখন থেকে চীন-আসিয়ান ব্যবসা ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনও তার পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। (প্রেমা/এনাম)