চীনা অর্থনীতির মান ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। এটি চীনে উত্পাদিত পণ্যের বৈচিত্র্য ও উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনা বৈশিষ্ট্যময় ও চীনে তৈরী পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ও পাচ্ছে।
বিশ্ববিখ্যাত্ মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক ক্যাসি নিস্ট্যাট (Casey Neistat) সম্প্রতি ইউটিউবে চীনের তৈরী ডিজেআই ড্রোন আনপ্যাক করার ভিডিও প্রকাশ করেছেন। কয়েক মিনিটের ভিডিওতে নিস্ট্যাট ডিজেআই ড্রোনের বিভিন্ন ফাংশন দেখিয়েছেন এবং ট্রাই করেছেন। এ কুল ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করার পর অল্প সময়ে ৪৫ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, চীনের বেসামরিক ড্রোন শিল্প বিশ্বের বাজারে শক্তিশালী প্রতিযোগিতা-শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনের বেসামরিক ড্রোন শিল্প বিশ্বব্যাপী বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ নিজের দখলে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ডিজেআই নব্যতাপ্রবর্তন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানির উত্পাদিত ড্রোন বিশ্বের বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ দখল করেছে। কোম্পানিটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান স্যিয়ে থিয়ান বলেন, তাঁর কোম্পানির ড্রোন ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশে অনেক জনপ্রিয়।
স্যিয়ে বলেন,
“আমাদের প্রযুক্তি অনেক উন্নত। কমপক্ষে সাধারণ ভোক্তাদের বাজারে আমাদের পণ্যের মানে অন্য কোনো ব্রান্ডের পণ্য পৌঁছাতে পারেনি। আমরা প্রায় দুই থেকে তিন বছর ধরে এ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছি।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের মোবাইল টার্মিনাল ব্র্যান্ডগুলো বিদেশী বাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে এবং সাফল্য অর্জন করেছে। অপ্পো ও ভিভোসহ বিভিন্ন বিখ্যাত চীনা ব্রান্ড বিদেশের বাজারে নিজেদের শেয়ার বাড়াচ্ছে। ১২০ কোটি জনসংখ্যার আফ্রিকায় ট্রান্সশন (TRANSSION) নামের চীনা মোবাইলফোন অনেক জনপ্রিয়। এটি আফ্রিকায় ‘মোবাইল রাজা’ হিসেবে পরিচিত। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ সংস্থা আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান কোম্পানি (আইডিসি)’র প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ট্রান্সশন মোবাইল আফ্রিকার বাজারের ৫০ শতাংশেরও বেশি দখলে রেখেছিল। এর মধ্যে স্মার্ট মোবাইল ফোন বাজারের কোম্পানির শেয়ার ৪০ শতাংশেরও বেশি।
ট্রান্সশন কোম্পানির পূর্ব আফ্রিকা বাজারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ওয়াং স্যু বলেন, তাঁর কোম্পানি আফ্রিকায় বাজার উন্নয়ন করেছে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি বলেন,
“দশ বছর আগে আফ্রিকার ভোগ্য বাজারোর সুপ্তশক্তি বিরাট ছিল। আমরা আফ্রিকায় পরিদর্শন ও গবেষণা করার পর বুঝেছি যে, আফ্রিকার নিজের অবস্থা ও রীতিনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পণ্যের চাহিদা আছে। এ নতুন বাজারে আমাদের সুযোগ প্রচুর।”
আফ্রিকার স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য ট্রান্সশন মোবাইল অব্যাহতভাবে বিশেষ ফাংশন উন্নয়ন করেছে। যেমন, কালো ত্বকের জন্য উপযুক্ত ক্যামেরা ফাংশন, স্থানীয় ভাষা, দীর্ঘ স্ট্যান্ডবাই, আফ্রিকান সংগীত, ডাবল এমন কি চারটি সিম কার্ডের ফোন এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণে ক্ষয়রোধ করতে ইউভি স্প্রে অ্যান্টি-জারা প্রযুক্তি, ইত্যাদি। হার্ডওয়্যার উন্নয়নের পাশাপাশি ট্রান্সশন চীনের ওয়েবসাইট কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা করে আফ্রিকান ভোক্তাদের জন্য মোবাইল ইন্টারনেট পণ্য তৈরী করেছে। এতে সংগীত, খেলা ও ক্ষুদ্র ভিডিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি আফ্রিকার ডিজিটাল শিল্পের উন্নয়নে রাখছে ভূমিকা।
বিশ্বের অর্ধপরিবাহী শিল্পেও চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান শীর্ষে। পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের প্রতি চারটি স্মার্ট ডিসপ্লে টার্মিনালের মধ্যে একটি চীনের বিওই’র। ২০২০ সালে বিওই’র তৈরী ডিসপ্লে টার্মিনালের সংখ্যা ছিল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও স্মার্ট ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, মনিটার ও টেলিভিশন উত্পাদনের দিক দিয়েও কোম্পানিটি ছিল শীর্ষে। বিওই’র ভাইস চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল বিপণন কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক গুও ছাও বলেন, পণ্যের বাজারে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ।
পণ্যের নব্যতাপ্রবর্তন ও মানের ক্ষেত্রে বিওই এগিয়ে আছে। বিওই সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ট্রান্সশন ডিসপ্লে টার্মিনাল সেমিকন্ডাক্টর ডিসপ্লে থেকে ওয়েবসাইট, বিগডেটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ক্রমশ উন্নতি করেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত বিওই’র পেটেন্টের পরিমাণ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। একই বছরে কোম্পানির পেন্টেট ৯০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে এবং বিদেশে আবেদিত পেন্টেটের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
গুও ছাও বলেন, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী শিল্পের পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু বিদেশে বিওই’র ব্যবসার উন্নতি ঘটেছে। মহামারী বিওই-র সঙ্গে বিদেশি অংশীদারদের সহযোগিতা ও নব্যতাপ্রবর্তনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
২০২০ সালে মহামারী পরিস্থিতিতে বিওই, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী, দ্রুত বিগডেটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে, দেহের তাপমাত্রা মাপার স্বয়ংক্রিয় ম্যাশিন তৈরী করে। এই পণটি যুক্তরাষ্ট্রেও রপ্তানি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্র্যান্ডের মূল্যায়ন ও পরামর্শদাতা সংস্থা ব্র্যান্ড ফিনান্সের (Brand Finance) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিওইসহ অধিকাংশ চীনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সেরা ৫০০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গুও ছাও বলেন, বিশ্বায়নের পরিস্থিতিতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা উন্নয়নের আশা রয়েছে। বিদেশী বাজারও চীনের বিনিয়োগ ও সহযোগিতাকে স্বাগত জানায়। বিদেশী বাজারে ভৌগোলিক পার্থক্য, বহুমুখী সংস্কৃতি ও জটিল বাজার পরিকল্পনার ব্যবস্থা আছে। অব্যাহতভাবে প্রযুক্তি, পণ্য ও পরিষেবার প্রতিযোগিতার শক্তি উন্নয়নের পাশাপাশি পরিচালনার সামর্থ্য উন্নত করতে হবে। উন্নত ডিজিটাল বিপণন প্রযুক্তি দিয়ে বিদেশী বাজার উন্নয়ন করতে হবে, যাতে বিদেশী ভোক্তাদেরকে আরও সুন্দর সেবা দেওয়া যায়।
চীনের বিভিন্ন মহলের প্রতিষ্ঠান বিদেশী বাজারে নিজেদের জন্য দৃঢ় ও সুষ্ঠু ভিত্তি স্থাপন করেছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।