আপন আলোয় ৩৫
এ পর্বে যা থাকছে:
১. চীনের সংস্কৃতি চীনের ঐতিহ্য: চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামাজিক উৎসব: মিড অটাম ফেস্টিভ্যাল।
২. অন্তরঙ্গ আলাপন: আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্মরণাঞ্জলি: স্মৃতিচারণে কবিপুত্র শিল্পী সুজিত মোস্তফা।
চীনের সংস্কৃতি-চীনের ঐতিহ্য
চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামাজিক উৎসব: মিড অটাম ফেস্টিভ্যাল
চীনের অন্যতম প্রধান উৎসব হলো মধ্য শরৎ উৎসব বা মিড অটাম ফেস্টিভাল। এটি শরৎকালীন বা হেমন্তকালীন প্রধান উৎসব। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুপ্রাচীন চন্দ্রদেবীর আরাধনা এবং ফসল তোলার রীতি রেওয়াজ। এই উৎসব হয় চীনের চান্দ্র-পঞ্জিকা বা লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অষ্টম চান্দ্র মাসের ১৫তম দিনে বা ভরা পূর্ণিমার রাতে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখে ছিল এই উৎসব।
মধ্য শরৎ উৎসবের চীনা নাম হলো চোং ছিউ চিয়ে। এই উৎসবকে ঘিরে রয়েছে চন্দ্রদেবী ছ্যাং ইকে নিয়ে চমৎকার একটি মিথ।
অনেক অনেক বছর আগে আকাশে উঠেছিল দশটি সূর্য। সেই দশ সূর্যের তাপে মানুষের জীবন হয়ে পড়লো অতিষ্ঠ। সূর্যের তাপে পুড়ে গেল ক্ষেতের ফসল, শুকিয়ে গেল নদীর জল। তখন মানুষকে দুর্দশা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন বীর তীরন্দাজ হোও ই।
তিনি তীর ধনুক দিয়ে নয়টি সূর্যকে কুপোকাত করলেন। পৃথিবীর জন্য একটি যথেষ্ট বলে রয়ে গেল একটিমাত্র সূর্য। হোওইর এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে দেবতারা হোওইকে দিলেন এক বোতল অমৃত। এই অমৃত খেলে তিনি অমর হবেন এবং দেবতায় পরিণত হয়ে অমৃতলোকে চলে যাবেন।
হোওই যদিও অমরত্ব চাইতেন কিন্তু তিনি তার স্ত্রী ছ্যাংইকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। অমর হওয়ার চেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মর্ত্যলোকে বাস করাটাই তার বেশি কাম্য ছিল। তাই তিনি বোতলটি ঘরে এনে রেখে দিলেন।
এদিকে ফাং মাং নামে হোওইর এক লোভী শিষ্য ছিল। একদিন হোওই যখন বাইরে গেছেন তখন ফাং মাং সেই অমৃত চুরি করে খাওয়ার চেষ্টা করে। ফাং মাংয়ের মতো খারাপ লোক যেন অমর হতে না পারে তাই ছ্যাংই দ্রুত অমৃত পান করে ফেলেন। তার শরীর হালকা হয়ে যেতে থাকে এবং তিনি চাঁদে পৌঁছে যান। সেখানেই বাস করতে থাকেন তিনি। তিনি পরিণত হন চাঁদের দেবীতে। বিরহকাতর হোওই তাকে স্মরণ করে চাঁদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন এবং চাঁদের প্রতি নানা রকম নৈবেদ্য উৎসর্গ করেন। চীনের মানুষ মনে করে মধ্য শরৎ উৎসবের রাতে পূর্ণিমার চাঁদে ছ্যাংইর ছায়া দেখা যায়।
সে রাতেই একমাত্র ছ্যাং ইর সঙ্গে মিলিত হতে পারেন হোওই।
এই কাহিনীর বিপরীত আরেকটি কাহিনীও আছে। সেখানে বলা হয় হোওই যখন বীর হিসেবে খ্যাতি পান তখন তাকে রাজা বানানো হয়। কিন্তু কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ছ্যাং ই মনে করেন, এই অত্যাচারী রাজা যদি অমর হয়ে যায় তাহলে জনগণের দুর্দশার শেষ থাকবে না। তাই স্বামী যেন অমর হতে না পারে সে জন্য ছ্যাং ই নিজেই অমৃত পান করেন।
হোওই রাগের বশে স্ত্রীকে মারতে চান। কিন্তু তার আগেই ছ্যাং ই পৌঁছে যান চাঁদে। রাগ ও হতাশায় মৃত্যুবরণ করেন হোওই। আর জনগণ ছ্যাংইর এই মঙ্গলময় কাজে প্রীত হয়ে তার উদ্দেশ্যে পূজা ও অর্ঘ্য দান করে, প্রার্থনা করে যেন ছ্যাংই তাদের আশীর্বাদ দেন।
মধ্য শরৎ উৎসবের রাতে পূর্ণিমার চাঁদ যখন হয়ে ওঠে বছরের সবচেয়ে ঝলমলে- তখন চীনের ছেলেমেয়েরা চন্দ্রদেবী ছ্যাং ইকে দেখতে পায় চাঁদের বুকে।
-শান্তা মারিয়া
অন্তরঙ্গ আলাপন
আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্মরণাঞ্জলি: স্মৃতিচারণে কবিপুত্র শিল্পী সুজিত মোস্তফা।
…বাবার প্রবন্ধ-সাহিত্য, তার গবেষণা- খুবই বড় ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে তিনি বিরাট পন্ডিত। তবে, সংগীতে- গীত-রচনায় তিনি অতুলনীয়। রবীন্দ্র-নজরুলের ধারাতে তার মতো শক্তিমান, তুলনীয় গীতিকার বাংলাদেশে বিরল। তাঁর মূল্যায়ন কবিতাতে হয়নি, গীতিকবিতাতে হয়নি।
তার ছবি কবিতাসহ দু’চারটি কবিতা নিয়ে যতো আলোচনা- তার তো আরও অনেক ভালো ভালো কবিতা রয়েছে!
ছবি: শিল্পী সুজিত মোস্তফা
তুমি যে আমার কবিতা, অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে, তোমার কাজল কেশ ছড়ালো বলে, সেই চম্পা নদীর তীরে, নদীর মাঝি বলে এসো নবীন কিংবা অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা- আমরা যখন এ গানগুলো শুনি তখন অনেকেই জানি না যে- কালজয়ী এ গানগুলোর স্রষ্টা আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
২৩ সেপ্টেম্বর কবি, লেখক ও শিক্ষাবিদ আবু হেনা মোস্তফা কামালের ৩২তম প্রয়াণ বার্ষিকী। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাবার স্মৃতিচারণ করলেন কবিপুত্র, বিশিষ্ট নজরুলসংগীত শিল্পী সুজিত মোস্তফা। শুনিয়েছে বাবার কালজয়ী কিছু গান।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাহমুদ হাশিম।
ছবি কবিতার আবৃত্তিশিল্পী: তামান্না ডেইজী।
প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার-সিআরই বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla আপনার মন্তব্য করতে পারেন। সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্ক জানাতে পারেন আপনার মূল্যায়ন।
পরবর্তী অনুষ্ঠানে আমরা বাংলাদেশ-চীনের সংস্কৃতিক অঙ্গনের আরো কিছু খবর এবং গুণিজনের অন্তরঙ্গ আলাপন নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন।
সম্পাদনা: তানজিদ বসুনিয়া
সাক্ষাৎকার গ্রহণ, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।