গতকাল (বৃহস্পতিবার) ‘নতুন উন্নয়নের কাঠামো দ্রুত গড়ে তোলা’ শীর্ষক এক রাষ্ট্রীয় ফোরাম বেইজিংয়ে শুরু হয়েছে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা চীনের সাথে সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ সময় আন্তর্জাতিক প্রশাসনে চীন আরো বেশি ভূমিকা পালন করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা ।
চীনে নিযুক্ত জাতিসংঘের সমন্বয়ক সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি তাঁর ভাষণে বলেন, চীনের গ্রামাঞ্চলের পুনরুজ্জীবন থেকে বোঝা যায়, চীনের উন্নয়নের গুরুত্ব গ্রামাঞ্চলের টেকসই উন্নয়নে রূপান্তরিত হয়েছে, তাতে সামাজিক উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যমাত্রা জাতিসংঘের কার্যক্রমের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং প্রমাণ করে সহনশীল ও দুর্বলদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি মেনে চলছে চীন। তিনি বলেন,
‘চীনে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলো চীন সরকার ও জনগণের সাথে নতুন দফার সহযোগিতা শুরু করেছে। আরো উপযোগী ও উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করবে উভয় পক্ষ। চীনে জাতিসংঘের অন্যতম প্রধান কাজগুলো হচ্ছে সবুজ কৃষির উন্নয়ন, গ্রামাঞ্চলের শিল্প উন্নয়ন, গ্রামাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ জোরদার এবং গ্রামবাসীদের আয় বাড়ানো। এসবের মাধ্যমে কৃষি উত্পাদন দক্ষতা বাড়াতে চায় জাতিসংঘ।’
জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার চীনের সাথে বহু বছরের সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক চৌ সি ইয়ুং তাঁর ভাষণে বলেন, জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা চীন সরকারের সাথে ‘২০২১-২০২৫ রাষ্ট্রীয় প্রস্তাব’ চালু করবে।
‘রাষ্ট্রীয় প্রস্তাব অনুসারে আমাদের সংস্থা কয়েকটি খাতে চীনের উন্নয়নে সহায়তা দেবে। উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা, পরিচ্ছন্ন শিল্প ও শিল্পের সবুজ রূপান্তর বস্তবায়ন করা, গ্রামাঞ্চলের পুনরুজ্জীবন ও জ্ঞানভিত্তিক কৃষির উন্নয়ন এবং সহনশীল ও টেকসই শিল্প উন্নয়নের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ইত্যাদি। সংস্থাটি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগে সহায়তা দেবে। টেকসই জ্ঞানভিত্তিক শহর উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে চীন সরকারকে যথাযথ সাহায্য দেবে এই সংস্থা, যাতে চতুর্থদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হয়।’
বিশ্ব ব্যাংকের চীনের গভর্নর মার্টিন রাইসার বলেন, গত ৪০ বছরে বিশ্ব ব্যাংক ও চীনের সহযোগিতা গভীরতর হয়েছে। এ সময় সহযোগিতার গুরুত্বও অব্যাহতভাবে সমন্বয় করা হয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে চীনের অর্থনীতির সবুজ নিম্ন কার্বন রূপান্তর।
‘গত দশ বছরের মধ্যে চীনের অর্থনীতিতে কার্বন নির্গমন ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। অনেক কার্যকর ও নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ এবং শিল্প বিভাগের কার্যকরিতা উন্নয়নের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়েছে। ভবিষ্যতে চীনের উদ্ভাবন নতুন কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। চীনের উচিত সব প্রচেষ্টা চালিয়ে উদ্ভাবন ব্যবস্থাপনা ও বৈদেশিক উন্মুক্তকরণে অবিচল থাকা।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থার উপমহাপরিচালক জিওফ্রেই অকামোটো চীনের বহুপক্ষীয় সহযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং বিশ্বের জন্য বেশি অবদান রাখার পাশপাশি স্বদেশের সুষ্ঠু উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,
‘কোভিড-১৯ টিকার ব্যাপক প্রয়োগ এবং নিম্ন আয়ের দেশের ঋণ পরিশোধে চীনের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। চীনের নেতৃত্বের ভূমিকা বিশ্বের অর্থনীতির সবুজ পুনরুদ্ধারে সহায়ক।’
চীনে নিযুক্ত জাতিসংঘের সমন্বয়ক সিদ্ধার্থ বলেন, জাতিসংঘ চীনের বৈশ্বিক অংশগ্রহণে সমর্থন দেয়। আফ্রিকা উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে জাতিসংঘ। এ প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্র, চীন, আফ্রিকার এবং ইউরোপের দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা করবে, যাতে গ্রামাঞ্চলের পুনরুজ্জীবন ও খাদ্যশস্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে কার্যকর প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলা যায়। (সুবর্ণা/এনাম/শুয়ে ফেই ফেই)