শান্তা মারিয়া, ঢাকা: আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ । শরতের ফসলের সুবাস চারিদিকে। এ সময়ই শুরু হয় চীনের মধ্য শরৎ উৎসব। এটি চীনের অন্যতম প্রধান সামাজিক সাংস্কৃতিক উৎসব। এর পিছনে রয়েছে তিন হাজার বছরের ঐতিহ্য। শাং রাজবংশের শাসনামলে খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ সালে এর সূচনা। চীনা ক্যালেন্ডারে অষ্টম চান্দ্র মাসের ১৫তম রাতে তার মানে পূর্ণিমায় উৎসবটি হয়।
এটি মূলত হেমন্তে ফসল তোলার উৎসব। এসময় হেমন্তের নতুন ফসল ওঠে। চাঁদের পূর্ণতা প্রাপ্তি হলো পুনর্মিলনের আহ্বান। তাই এ উৎসবে সবাই পরিবারের কাছে ফিরে আসে। সেখানে রাতের খাবার একসঙ্গে খায়। প্রার্থনা করে সমৃদ্ধ জীবনের এবং ধন্যবাদ জানায় ভালো ফলনের জন্য।
এই উৎসবকে মুন ফেস্টিভ্যালও বলা হয়। এই সময় মুনকেক খাওয়া একটি জনপ্রিয় প্রথা। গোল চাঁদের আকারে বানানো হয় মুনকেক। ভিতরে পুর দেয়া হয় পদ্মফুলের বীজ। গ্রামে শহরে তৈরি হয় বিভিন্ন রকম মুনকেক।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন নকশায় ছাঁচে মুনকেক তৈরি করি। তবে এর আকার সবসময়ই গোল হবে। কারণ পূর্ণিমার চাঁদের মতো গোল এই মুনকেক পরিবারের সকলের মিলন মেলার প্রতীক।’
চীনা ভাষায় এই উৎসবকে বলে চু ছিউ চিয়ে। উৎসবের অনেকগুলো মিথ আছে। একটি মিথ হলো চন্দ্রদেবী ছ্যাং ই কে ঘিরে। চাঁদের খরগোশকে নিয়েও আছে মজার গল্প।
উৎসবে আলো দিয়ে সাজানো হয় ঘরবাড়ি। সেসময় খরগোশের আকারেও আলো জ্বলে। জ্বালানো হয় রঙিন লণ্ঠন।
সিসিটিভি এ সময় আয়োজন করে বর্ণাঢ্য গালা নাইট। টিভিতে বিশাল পরিসরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবারের সবাই একসঙ্গে উপভোগ করে।
প্রাচীন চীনের জনগণ মনে করতো মঙ্গলময় দেবতা ড্রাগন যে বৃষ্টি দিয়েছেন সেকারণে ভালো ফসল হয়েছে। আর এই ফলনের জন্য তারা ফসল তোলার পর পরিবারের সঙ্গে একত্র হয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতো এবং প্রার্থনা করতো। এই উৎসবে তাই ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন নাচের আয়োজন থাকে বিভিন্ন শহরে। এরসঙ্গে খুব প্রাচীন চন্দ্রপূজার লোকজ রীতিনীতিও মিশে আছে।
সব মিলিয়ে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে চীনারা উদযাপন করেন মধ্য শরৎ উৎসব।