আজহার লিমন, ঢাকা: বাংলাদেশের অন্যতম ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির কর্ণধার গ্রেপ্তার হওয়ার পর এর লাখ লাখ গ্রাহক ও বিনিয়োগকারী কী করবেন তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে ভেতরে বাইরে। সরকারের মন্ত্রীরা বৈঠক করছেন, সংবাদ সম্মেলনে সচিবরা বলছেন নতুন করে আইন করার কথা। কিন্তু গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার খবর কী? জানতে চেয়েছিলাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুঞ্জুরুল হকের কাছে যেখানে, বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়ের কাছে ইভ্যালির কর্ণধারের দেওয়া হিসেবই বলছে, ২ লাখের বেশি গ্রাহকের কাছে দায়ের পরিমাণ কম করে ৩শ’ কোটি টাকা।
ব্যারিস্টার মুঞ্জুরুল মনে করেন প্রচলিত আইনে অর্থ আত্নসাতের এই মামলায় ইভ্যালির মালিকদের সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ সম্ভবন। তবে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও জটিল বলেও উল্লেখ করেন মিস্টার মুঞুজুরুল।
ব্যারিস্টার মঞ্জুরুল নতুন করে আইন করার ব্যাপারটিকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন। কিন্তু বাণিজ্যের নতুন নতুন ক্ষেত্র বিস্তারের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক বা নীতি নির্ধারণী সংস্থাগুলো হালানাগাদ নয় সেটাও বলছেন তিনি। ভোক্তা অধিকারকর্মী কনসাস কনজিউমারস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদও মনে করেন, উদীয়মান এ খাত নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলো না নীতি নির্ধারকরা।
পলাশ মাহমুদ
চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে পলাশ মাহমুদ বলেন, “এক পর্যন্ত অনলাইনে বেঁচাকেনা হোক কিংবা অপরাধমূলক কোন কিছু করেন তাহলে সাইবার নিরাপত্তা আইন ছাড়া এই বেঁচাকেনা বা কাস্টমার ডিলিংয়ের ব্যাপারে প্রপার বিচার পাওয়ার কোন জায়গা নেই। শুধুমাত্র ভোক্তা অধিকারে একটু অভিযোগ করা যায়।”
এমন অবস্থায়, দায়িত্ব নিচ্ছে না ই কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ইক্যাবও। সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম শোভনের দায় এড়ানো উত্তর, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তারা বারবার ধর্না দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
এই কর্মকর্তা বলেন, “আইন করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের দীর্ঘসূত্রিতা আছে। সেক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে কোন ভাবে দুষ্কৃতিকারীরা এখানে সুযোগ নিতে পারে। এগুলো আমরা প্রথম থেকে আমরা বলে এসেছি।”
:কিন্তু এখন যেভাবে বলেছেন, সেই ভাষায় বা সেইভাবে আগে বলেছেন কি না?
“হ্যা হ্যা। আমরা অসংখ্য চিঠি দিয়েছি। এর জন্য আমরা ১৭ টি মিটিং করেছি বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে।”
চলতি বছরের জুলাইয়ে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ নামে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারিসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নির্দেশনা না মানলে মার্কেটপ্লেসের নিবন্ধন বাতিলের কথা বলা হলেও নেই ভোক্তা বা বিনিয়োগকারীর দায় পরিশোধের কোন বিধান। এমন অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীর মধ্যে অনলাইন ব্যবসা নিয়ে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনে সরকার কতোটা ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে, তার ওপরই নির্ভর করছে উদীয়মান ই-কমার্স খাতের ভবিষত।