চীনের তিন বন্ধুর ভিন্ন এক রোমাঞ্চকর জার্নির সিনেমা “কফি অর টি”
2021-09-18 17:08:48

২০১৩  সালে মুক্তিপ্রাপ্ত  ‘অল টাইম দৌড়ের উপরে’ টেলিফিল্মের কথা সবার মনে আছে নিশ্চয়ই? আদনান আল রাজিব পরিচালিত তিন বন্ধুর একটি রোমাঞ্চকর জার্নির এই টেলিফিল্ম সে সময়  টিনএজারদের মধ্যে দারুন একটা হাইপ ‍তৈরি করেছিল। তখন কোন নাটক কিংবা সিনেমায় বন্ধুদের নিয়ে গল্প মানেই সেটি সুপারহিট!

 

তবে আজকে আমরা কথা বলবো চীনের তিন বন্ধুর রোমাঞ্চকর জার্নির সিনেমা “কফি অর টি” নিয়ে। তবে এই জার্নি তৌসিফ, মিশুসাব্বির, আর এলেন শুভ্রর পর্যটন ভ্রমণের মতো নয়, বলতে পারেন এর চেয়েও বেশি রোমাঞ্চের, আরও বেশি চ্যালেঞ্জের।

 

অনেক স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উই চিন বেই এখন অনেক  হতাশ । বার বার ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে এবার সিধান্ত নিলেন চলে যাবেন অনেক দূরে। বিশাল ভবনের ছাঁদে দাড়িয়ে শুরু করলেন লাফ দেয়ার ক্ষণগগণা। হতাশ বেই লাফ দেবেন ঠিক এমন অবস্থাতেই ঘটে বিপত্তি!

 

সিনেমার দ্বিতীয় চরিত্রের নাম পোং সিউ বিং। অনেকটা সরল মনের অধিকারী বিং বেইজিংয়ে ১০ বছর ধরে ডিলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। ১ লাখ ৯০ হাজার ইউয়েন জমিয়ে নতুন স্বপ্নের খোঁজে ছেড়ে দিলেন চাকরি। গ্রামে ফিরে গিয়ে শুরু করবেন নতুন ব্যবসা। নিজের সর্বশেষ ডেলিভারি আজকে, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না কাস্টমারকে । খুঁজতে খুঁজতে বিল্ডিং এর ছাদে আবিষ্কার করলেন তার কাস্টমার কে, লাফ দিতে চাওয়া বেই কে টেনে তুললেন তিনি।

আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন বেই, বিং কে সাথে নিয়ে নতুন গন্তব্য ঠিক করলেন হাইনানে।

বিং শহরের ই কমার্স আইডিয়া তার গ্রামে চালু করার পরিকল্পনা করলেন। কিন্তু গ্রামের হাট থেকে দেখে শুনে কেনা মানুষ ই- কমার্স কি সেটাই জানে না। তবে অনেক সস্তায় প্রোডাক্ট পাওয়ার আশায় অনেকে আসতে শুরু করলো বিং এর কাছে , কিন্তু যখন শুনলো পণের দাম  আগে পরিশোধ করতে হবে, তখন সবাই এড়িয়ে যেতে লাগলো ।

 

তবে এখানেই একটি নতুন আইডিয়া পান বেই। পণ্য হাতে পেয়ে টাকা পরিশোধ করারও সুযোগ থাকছে এখানে । আর এভাবে একজন গ্রাহক নিয়ে আসবেন আরেকজন গ্রাহককে। ধীরে ধীরে নতুন এই মার্কেটিং স্ট্রাটেজিতে  প্রসারিত হতে থাকে তাদের ব্যবসা।

 

এভাবেই বাড়ছিল অনলাইনে কেনাকাটার পরিধি। কিন্তু সামনে আসে গ্রাহকদের নতুন ভোগান্তি। সঠিক মাপের ড্রেস না পাওয়ার পাশাপাশি যোগ হয় আরও কিছু ভোগান্তি।

 

একবার মৃত এক ব্যক্তির নামে আসে অর্ডার। যা ডেলিভ্যারি দিতে অস্বীকার করেন ডেলিভ্যারি ম্যানরা। কিন্তু  ব্যক্তি মৃত হলেও তার পণ্য পৌছে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিং।একজন সচেতন ডেলিভারি ম্যান হিসেবে বিং মনে করে, ব্যক্তি মৃত হলেও তার পণ্য তার কাছে সরবরাহ করা উচিত।

 

এই ধারণা থেকেই বিং বেই কে সাথে নিয়ে রওনা দিল সেই দুর্গম পাহাড়ে। সেই উল্লেখিত বাড়িতে দেখা মিলল লি শাও ছুনের।

 

গ্রামের চা-কেন্দ্রিক কৃষি ব্যবস্থার রীতি ভেঙ্গে কফি চাষের উদ্যোগ নেন লি। কিন্তু এতেই গ্রামের মানুষের সঙ্গে বাধে বিপত্তি। শত শত বছর ধরে চা চাষ কে ওই গ্রামের ঐহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই ট্যাবু ভাঙ্গতে চাওয়ার করনে লি শাও ছুনকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন তার বাবা। একঘরে করে দেয় গ্রামবাসীও। ফলে কফি চাষের জন্য পাহাড়ের পথ ধরেন লি। দীর্ঘদিন সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গ্রামবাসীও ধরে নেন লি মারা গেছেন।

 

পণ্য ডেলিভ্যারি দিতে গিয়ে লি শাও ছুনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উউঠউঠে বেই ও বিংয়ের  ঘগড়েউঠে বেই ও বিংয়ের। বন্ধুত্ব উঠে বেই ও বিংয়ের। বন্ধুত্ব তৈরি হয় তিনজনের মধ্যে।

 

পরে বেইয়ের চেষ্টায় কফি অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে লি এর বানানো কফি। সেই প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক পায় লির তৈরি কফি। এবার কফি নিয়েই শুরু হয় তিন বন্ধুর যাত্রা। তারা কি পারবে তাদের এই কফি পুরো গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দিতে?

 

তাদের এই উদ্যোগের শেষ পরিনতিই বা কি হয়েছিল? তারা কি পেরেছিল সফল হতে?

 

তিন বন্ধুর এই রোমাঞ্চকর যাত্রার কথা জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে পুরো সিনেমাটি।

 

আপনি যদি ভেবে থাকেন, একটি স্লো গল্পের সিনেমা, তাহলে আপনার ধারণা ভুল প্রমানিত করবে পরিচালক দেরেক হুই । গ্রামীণ পরিবেশে একটি ভিন্ন ধরণের জার্নির স্বাদ পাবেন আপনি।

 

যারা চাকরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে চান তাদের জন্য শিক্ষণীয় একটি সিনেমা হতে পারে ‘কফি ওর টি’। অনন্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যকে, যা মুহূর্তের জন্যও চোখ ফেরাতে দেবে না আপনাকে।

 

২০২০ সালের অক্টোবরে মুক্তি পাওয়া সিনেমার কালার গ্রেডিং ও টাইটেল এনিমেশন ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রতিটি ফ্রেমে আপনি পাহাড়ি অঞ্চলের সবুজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন।

 

একটি স্নিগ্ধ বিকেলে, বাসার বারান্দায় বসে, এক কাফ কফি কিংবা চা হাতে নিয়ে বসে যেতে পারেন সিনেমাটি দেখতে। 

 

আপনি চাইলে ইংরেজি সাবটাইটেলসহ উপভোগ করতে পারেন সিনেমা টি।