তিন নভোচারী নিয়ে শেনচৌ-১২ মহাকাশযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গ
2021-09-18 15:51:19

তিন নভোচারী নিয়ে শেনচৌ-১২ মহাকাশযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গ_fororder_111111111111

তিন নভোচারী নিয়ে শেনচৌ-১২ মহাকাশযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গ_fororder_122222222222

সেপ্টেম্বর ১৮: ৯০ দিনেরও বেশি সময় ধরে মহাকাশে অবস্থানের পর পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন চীনের তিন নভোচারী।  তাদেরকে নিয়ে ‘শেনচৌ ১২’ মানববাহী মহাকাশযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলটি গতকাল (শুক্রবার) সফলভাবে ‘তুং ফেং’ সাইটে অবতরণ করে। মহাকাশচারী নিয়্য হাইশেং, লিউ পোমিং ও থাং হুংপো নিরাপদেই মাতৃভূমির মাটিতে পা রাখেন।

শুক্রবার দুপুর ১টা ৩৪ মিনিটে বিশাল প্যারাসুটের সাহায্যে শেনচৌ-১২ নভোযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলটি নভোচারীদের নিয়ে  ধীরে ধীরে ‘তুং ফেং’ সাইটে অবতরণ করে। এর পরপরই উদ্ধারকর্মীরা ‘শেনচৌ ১২’ নভোযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের দরজা খুলে দেন। চিকিত্সরা প্রাথমিকভাবে মহাকাশচারীদের শরীরের অবস্থা পরীক্ষা করেন। তিন জন মহাকাশচারীর অবস্থা ভাল ছিল।

‘শেনচৌ ১২’ মানুষবাহী মহাকাশযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের সুষ্ঠুভাবে অবতরণ সম্পর্কে এই ব্যবস্থার উপ-মহানকশাকার রুং ওয়েই ‘নিখুঁত’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,

 

‘আজকের আবহাওয়া বেশ ভাল। ফিরে আসা, সোজা করা, ব্রেক করা এবং পৃথক করা থেকে প্যারাসুটের খুলে দেওয়া এবং মাটিতে অবতরণের আগে ইঞ্জিনের পুনরায় নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়া ভীষণ চমত্কার হয়েছে।’

রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের অবতরণ হচ্ছে মানুষবাহী মহাকাশযান মিশনের চূড়ান্ত পর্যায়। এটি মিশন সফল হওয়ার প্রতীকও বটে।  ‘শেনচৌ ১২’ মানুষবাহী মহাকাশযানের রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের আকৃতি যেন উপরে সংকীর্ণ এবং নিচে প্রশস্ত এমন এক ‘বড় বেলের’ মতো। রিএন্ট্রি ক্যাপসুল বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পরের পর্যায় হচ্ছে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে কঠিন পর্যায়। মহাকাশযান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গোষ্ঠীর পাঁচ বিভাগের ‘শেনচৌ ১২’ মানুষবাহী মহাকাশযানের উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি গ্রুপের পরিচালক ইয়াং হাইফেং বলেন, এসময় বায়ুর ঘনত্ব অধিক থেকে অধিকতর বেশি। রিএন্ট্রি ক্যাপসুল ও বায়ুর মধ্যে প্রচণ্ড ঘর্ষণ হয় এবং এতে হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়। রিএন্ট্রি ক্যাপসুলের চারপাশে তখন আগুন জ্বলতে থাকে।

বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের প্রক্রিয়া আসলে মহাকাশযানের জন্য গতি কমানোর একটি প্রধান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় মহাকাশযানের গতি সেকেন্ডে ৭.৯ কিলোমিটার থেকে নেমে দাঁড়ায় ২০০ মিটারে।

মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে প্যারাসুট খুলে দেয় রিএন্ট্রি ক্যাপসুল। এ সময় গতি নেমে দাঁড়ায় সেকেন্ডে ৩.৫ মিটারের কাছাকাছি। মাটি থেকে ১ মিটার উচ্চতায় রিভার্স থ্রাস্ট ইঞ্জিন চালু হয়। এভাবেই রিএন্ট্রি ক্যাপসুল নিরাপদে অবতরণ করেছে।

মানুষবাহী মহাকাশযান প্রকল্পের অবতরণ ব্যবস্থার উপ-মহানকশাকার বিয়ান হানছেং বলেন, এটি চীনে মানুষবাহী স্পেস স্টেশনের চাবিকাঠি প্রযুক্তি পরীক্ষা এবং স্পেশ স্টেশান নির্মাণ পর্যায়ে ফিরে আসা প্রথম মানুষবাহী মহাকাশযান। পাশাপাশি, এবারের অবতরণকে ‘তুংফোং’ অবতরণ সাইটের প্রতিষ্ঠাকাজের জন্য এক বহুমুখী পরীক্ষা বলে মনে করা হয়। এই সম্পর্কে তিনি বলেন

 

‘তুং ফোং অবতরণ সাইট পর্যায়ক্রমে অনুসন্ধান, নেভিগেশন, টেলিযোগাযোগ ও অবকাঠামো নির্মাণকাজসহ ২০টিরও বেশি প্রযুক্তিগত সংস্কার করেছে। এই পক্রিয়ায় ধারাবাহিক কঠিন বিষয়ের সমাধান করা হয়েছে। বিশেষ করে এটি অবতরণের চূড়ান্ত ১ কিলোমিটারে গতিপথের হিসাব ও অবস্থার ছবি তোলার কাজ করেছে। এই ক্ষেত্রে চীনের প্রযুক্তিগত মান ব্যাপক উন্নত হয়েছে।’

তা ছাড়া, পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে সুষ্ঠুভাবে রেডিয়াল ইন্টারসেকশান প্রযুক্তির পরীক্ষা করেছে ‘শেনচৌ ১২’ মানুষবাহী মহাকাশযান। পরবর্তীতে ‘শেনচৌ ১৩’ মানুষবাহী মহাকাশযানে এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)