সেপ্টেম্বর ১৯: গত ২৫ জুলাই টোকিও অলিম্পিক গেমসের পুরুষদের ৬৭ কেজি ভারোত্তোলন প্রতিযোগীতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে চীনের খেলোয়াড় সেন লি চুন স্বর্ণপদক লাভ করেন। আমরা আজ তাঁর গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
সেন লি চুন চীনের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলের হু নান প্রদেশের আন হুয়া কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। এটি একটি দরিদ্র এলাকা। তাঁর বাবা অনেক শক্ত মনোবলের অধিকারী। ২০০৩ সালে স্থানীয় শিশু ক্রীড়া স্কুলের ভারোত্তোলন দলে ভর্তি শুরু হয়। কেউ কেউ দলটির কোচ চিয়াং ই লংকে সুপারিশ করে বলেন, সেন পরিবারে একটি ছেলে আছে, তার শরীর অনেক ভাল। তাদের সুপারিশ শুনে কোচ চিয়াং একদিন সেন লি চুনের বাসায় যান। সেন লি চুনের একাধিক পরীক্ষা নেন কোচ। দশ বছর বয়সী সেন লি চুন পরীক্ষায় ভাল করেন। ফলে কোচ চিয়াং তাকে স্কুলে পাঠাতে তার বাবা-মাকে প্রস্তাব দেন। সেন লি চুনের বাবা তাতে রাজি হন। তবে সেনের মা রাজি হননি। তিনি বলেন, ভারোত্তোলন অনেক কষ্টকর, যদি আমার ছেলে ভাল করতে না-পারে, তাহলে তার উচ্চতা অনেক কমে যাবে। তখন সে একজন ভাল মেয়েবন্ধুও পাবে না। এমন কথা শুনে কোচ চিয়াং নিরাশ হয়ে চলে যান।
কয়েক দিন পর, কোচ চিয়াং ভাবেন সেন লি চুন এমন একটি ভাল প্রতিভা, সে যদি ভারোত্তোলন না-করে, তা হলে পরে অনেক পস্তাবে। এজন্য তিনি আবার সেনের বাসায় যান। কিন্তু তার মা রাজি হননি।
কোচ চিয়াং এর পর আরো পাঁচবার সেনের বাসায় যান। বারবার তার মাকে বুঝাতে থাকেন। তিনি তার মাকে নিশ্চিত করেন সেন লি চুন প্রশিক্ষণ নিলে ভাল করবে। তিনি জানতেন, সেন লি চুনের পরিবারের অর্থের অভাব রয়েছে। তাই তিনি তার সব টিউশন ফি মওকুফ করে দেন। সেন লি চুন নিজে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী। তিনি তার মাকেও অনেক বার অনুরোধ করেছেন। অবশেষে তার মা তাকে অনুমতি দেন।
সেন লি চুন ক্রীড়া স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর অত্যন্ত পরিশ্রম করেন। প্রতিদিনের প্রশিক্ষণে তিনি সবার আগে আসেন এবং সবার পরে বিদায় হন।
সেন লি চুনের ক্রীড়া স্কুলে ভর্তি হওয়ার এক বছরের মধ্যে তার বাবা অসুস্থ হন। এ ছাড়া, তার চাচাও অনেক বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার নানীরও অনেক বয়স হয়েছে। এজন্য পাঁচজনের পরিবারের সব দায়িত্ব সেন লি চুনের মাকে একা গ্রহণ করতে হয়। সেন লি চুন এ খবর পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন স্কুল ছেড়ে চলে যেতে। তিনি কারখানায় কাজ করে টাকা উপার্জনের কথা ভাবেন।
এমতাবস্থায় কোচ চিয়াং অনেক অস্থির হয়ে পড়েন। তিনি আবার সেনের বাসায় যান। তিনি সেনের মাকে বলেন, “ভাবী, আমি আপনাদের পরিবারের সমস্যা বুঝি। তবে সেন লি চুন এমন একটি মেধাবী ছেলে, যাকে আমার কোচিং জীবনে প্রথম দেখেছি। আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি, সে অবশ্যই ভাল ফল পাবে, ভবিষ্যতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে।”
কোচের কথা শুনে সেনের মা তার চোখের পানি মুছে বলেন, “স্যার, আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না, যত সমস্যাই হোক না কেন, আমি ছেলেকে প্রশিক্ষণে সমর্থন দেবই।”
তারপর সেনের মা হু নান প্রদেশের রাজধানী ছাং সায় গিয়ে দিনে তিনটি চাকরি করতে থাকেন। সব টাকা জমিয়ে বাসায় পাঠাতে থাকেন।
ক্রীড়া স্কুলে ফিরে যাওয়ার পর সেন লি চুন আগের চেয়ে আরো বেশি পরিশ্রম করতে থাকেন।
২০১০ সালে ১৭ বছর বয়সী সেন লি চুন বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৩ সালে ২০ বছর বয়সী সেন লি চুন বিশ্ব ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়ন হন। অবশেষে গত ২৫ জুলাই টোকিও অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক পান।
এমন বিজয়ের পর সেন লি চুন নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, “এটা হচ্ছে চীনের ভারোত্তোলনের চেতনা। আমার ভাগ্যকে আমি নিজ হাতে নিয়ন্ত্রণ করব।”
(আকাশ/এনাম/রুবি)