হাবিবুর রহমান অভি, ঢাকা: চীনের সঙ্গে যৌথ টিকা উৎপাদন কার্যক্রম সফল হলে, বাংলাদেশে গণটিকাদান কার্যক্রম গতিশীল হবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই শুরু হবে উৎপাদন কার্যক্রম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলে সরকারকে আরও কৌশলী হতে হবে। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুপক্ষকেই নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ।
ঢাকার একটি কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের দীর্ঘ লাইন
দীর্ঘ দুই মাস পর মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পেয়ে টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়েছেন সালেহা আক্তার শিউলী। তিনি বলছেন টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করেছে নানা রকম জটিলতা।
সালেহা আক্তার শিউলী
‘আজ থেকে ২ মাস আগে টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। গতকালকে এসএমএস পাওয়ার টিকা নিতে এসেছি। আমার স্বামীও রেজিস্ট্রেশন করার প্রায় ১ মাস পর টিকা পেয়েছে’
এমন অভিযোগ আরও অনেকের। আবার টিকা নিতে এসেও ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে ।
বাংলাদেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন টিকা নিচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ। টিকা নেওয়ার পর নিজেদের সুরক্ষিত ভাবছেন তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে একটি দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন। চলতি বছর গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর গেল ৭ মাসে ৪ শতাংশের কিছু বেশি মানুষকে পূর্ণ ২ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ সরকার।
ঢাকার একটি টিকাদান কেন্দ্র
আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। সম্প্রতি দেশেই যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে চীনের সিনোফার্ম, বাংলাদেশের স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে টিকাদান কার্যক্রম গতিশীল হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম।
ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম
‘দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আর চীন-বাংলাদেশের যৌথ টিকা উৎপাদন সফল হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা যাবে’
টিকা উৎপাদনে যেতে কতদিন সময় লাগবে - এমন প্রশ্নের জবাবে ইনসেপ্টা ভ্যাকিসিন লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান হাসনিন মুক্তাদির বলেন, দিনক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব উৎপাদনে যাবেন তারা।
যৌথ টিকা উৎপাদন কার্যক্রম সফল হলে বাংলাদেশের জন্য স্বনির্ভর হওয়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে মনে করে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক।
ছবি: অধ্যাপক মোজাহেরুল হক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা
‘দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলে সরকারকে নিতে হবে কার্যকর পরিকল্পনা, হতে হবে আরও কৌশলী। তাহলে ৬ মাসের মধ্যেই সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব’
চুক্তি অনুযায়ী, চীন থেকে সেমি-ফিনিশড টিকা এনে তা বোতলজাত করবে ইনসেপ্টা। প্রতি মাসে উৎপাদন করা যাবে দেড় কোটি ডোজ টিকা। এসব টিকা সংরক্ষণ করা হবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইপিআইয়ের স্টোররুমে।
যৌথ টিকা উৎপাদনে যেন কম খরচে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবার জন্য মানসম্মত টিকা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে সরকারকে তদারকি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।