সেপ্টেম্বর ১৪: স্থানীয় সময় গতকাল (সোমবার) আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অফলাইন ও অনলাইনে জেনিভায় অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিসের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, পাকিস্তান ও ইরানসহ ৯০টিরও বেশি দেশ ও ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত জেনিভা কার্যালয়ে চীনা স্থায়ী প্রতিনিধি ও সুইজারল্যাণ্ডের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় চীনের প্রতিনিধি ছেন সু এবারের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রদূত ছেন বলেন, বর্তমানে আফগান পরিস্থিতি এক গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্বে প্রবেশ করেছে। আফগানিস্তানে গুরুতর মানবিক সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন
“কয়েকদিন আগে, চীনসহ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করে ও যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে মহামারী প্রতিরোধ, সীমান্ত বন্দর খোলা, শরণার্থী ব্যবস্থাপনা, মানবিক সহায়তা, সন্ত্রাসদমন ও মাদকদ্রব্য খাতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতৈক্যের কথা বলা হয়েছে। এটি আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনে সুষ্ঠু বহিঃপরিবেশ গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ সংকেত বহন করে।”
রাষ্ট্রদূত ছেন বলেন, আফগানিস্তানের মানবিক সংকটের সমাধানে, আফগান পরিস্থিতির উন্নয়নে, এবং দেশটির শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন-পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকাকে সমর্থন করে চীন। এই সম্পর্কে তিনি বলেন
“আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দেওয়াকে স্বাগত জানায় চীন। জাতিসংঘের কাঠামো এবং আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বয় ও সহযোগিতামূলক ব্যবস্থাসহ আফগান সমস্যার সঙ্গে জড়িত বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে চীন আগ্রহী।”
এসময় আফগান ইস্যুতে চীনের অবস্থান তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ছেন। আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীনের প্রচেষ্টাও ব্যাখ্যা করেন তিনি। তিনি বলেন
“আফগানিস্তানের প্রতিবেশ হিসেবে চীন সবসময় দেশটির সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে আসছে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না-করার নীতিতে অবিচল আছে, সকল আফগানীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ধারণায় অবিচল আছে। চীন ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে ২০ বিলিয়ন ইউয়ানের খাদ্যশস্য, শীতকালের গরম রক্ষামূলক সামগ্রী, টিকা ও ওষুধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, উপহার হিসেবে আফগানিস্তানে প্রথম দফায় ৩০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকাও পাঠাবে চীন। আফগানিস্তানের ইচ্ছা ও চাহিদার ভিত্তিতে নিজের সাধ্যের মধ্যে আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায়ও সমর্থন দিতে চীন ইচ্ছুক।”
রাষ্ট্রদূত ছেন জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত আফগানিস্তানে সহায়তা বাড়ানো। এই সম্পর্কে তিনি বলেন
“যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর আরও বেশি দায়িত্ব রয়েছে। তাদের উচিত আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক, জীবিকা ও মানবিক সহায়তা প্রদান করা। আফগানিস্তানের জরুরি মানবিক চাহিদা পূরণ করতে হবে এবং দেশটির টেকসই উন্নয়নে সমর্থন যোগাতে হবে।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস বলেছেন, আফগানিস্তানের জনগণ বিশ্বে সবচেয়ে গুরুতর মানবিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। জাতিসংঘ ও সংশ্লিস্ট মানবিক সংস্থাগুলো আফগানিস্তানকে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)