সেপ্টেম্বর ৯: খাদ্যনিরাপত্তা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ও সাম্প্রতিককালে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার ফলে, বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে, খাদ্য নষ্ট হ্রাসবিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৯ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর চীনের শানতোং প্রদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনের থিম হলো‘খাদ্য নষ্ট ও অপচয় হ্রাস এবং বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করা’।
সম্মেলনটি বহু পক্ষের অংশগ্রহণের প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এতে খাদ্য নষ্ট কমানোর চ্যালেঞ্জ এবং এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ও দায়িত্বসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। চীনের কৃষি ও গ্রামাঞ্চল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এবারের সম্মেলনকে কাজে লাগিয়ে খাদ্য নষ্ট কমানোসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সহযোগিতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং যৌথভাবে আন্তর্জাতিক খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করা যাবে বলে আশা করা যায়।
খাদ্য নষ্ট ও অপচয় বিশ্বব্যাপীই চলছে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে প্রকাশিত ‘খাদ্যশস্য ও কৃষি পরিস্থিতি, ২০১৯’ শিরোনামের এক রিপোর্টে বলা হয়, ফসল কাটার পর থেকে খুচরা-পূর্ব সরবরাহ পর্যন্ত বিশ্বে খাদ্য নষ্টের পরিমাণ মোট উৎপাদনের প্রায় ১৪ শতাংশ।
বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ এবং খাদ্যের প্রধান উত্পাদনকারী ও বাণিজ্যিক দেশ হিসেবে চীন সক্রিয়ভাবে বিশ্বের খাদ্য ও কৃষির উন্নয়নে অংশ নিয়ে আসছে এবং কৃষি খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চীন বৈদেশিক সহায়তা এবং কৃষির ক্ষেত্রে ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা’সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আফ্রিকা, এশিয়া, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবিয়ানসহ ৭০টিরও বেশি দেশে ও অঞ্চলে মোট দু’হাজারেরও বেশি কৃষিবিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদ পাঠিয়েছে। প্রায় এক লাখেরও বেশি বিদেশি কৃষক সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। চীনে মোট ৫০০ দফার প্রশিক্ষণ ক্লাস আয়োজনা করা হয়। মোট ১১ হাজার বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাগত কর্মী চীনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ফসল উত্পাদন, পশুপালন, কৃষিজমি ও জলসেচ, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশকে ১৫০০টিরও বেশি প্রযুক্তি দিয়েছে চীন। এর ফলে গড়ে ৪০% থেকে ৭০% ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৫ লাখেরও বেশি ক্ষুদ্র কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
তা ছাড়া, চীন সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে কৃষিবিজ্ঞান ও কৃষিপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা জোরদার করেছে এবং খাদ্য নষ্ট কমাতে দক্ষতা বাড়িয়েছে। কৃষি ও গ্রামাঞ্চল মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের প্রধান সুই পোং ফেই বলেন,
‘বহু বছর ধরে চীন ১৪০টিরও বেশি দেশ, অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ৮০টি দেশের বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা এবং ২১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে পাঁচ শ’রও বেশি সমঝোতাস্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যৌথভাবে ১৭০টিও বেশি ল্যাবরেটরি ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
কৃষি ও গ্রামাঞ্চল মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মা ইউ সিয়াং বলেন, বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীন সময়মতো খাদ্য নষ্ট হ্রাসবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্যদের, বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দের, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কোম্পানিসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সংলাপের একটি প্লাটফর্ম স্থাপন করা এবং খাদ্য নষ্ট কমানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ, সহযোগিতা, দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করা।
সম্মেলন চলাকালে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্যরাষ্ট্রসমূহের কৃষিমন্ত্রীরা, জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচির বিশেষ দূতসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ এবং উরুগুয়ে, সার্বিয়া, ফিজি, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা অনলাইনে ভাষণ দেবেন। তা ছাড়া, সম্মেলনে ‘খাদ্য নষ্ট কমানোবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের চিনান ঘোষণা’ প্রকাশিত হবে এবং খাদ্য নষ্ট হ্রাসের ক্ষেত্রে চীনের সাফল্য তুলে ধরা হবে। (লিলি/আলিম)