সেপ্টেম্বর ৮: ‘আমেরিকান ড্রিম’ একটি বিশ্বাস যা সাধারণ আমেরিকানরা বিশ্বাস করেন। কেবল আমেরিকানরা নয়, ‘আমেরিকান ড্রিম’ ছিল অসংখ্য অভিবাসীর স্বপ্নের চালিকাশক্তি। ক্লাসিক হলিউড চলচ্চিত্র ‘দ্যা গডফাদার’-এ একজন সফল অভিবাসী বলেছেন, “আমি আমেরিকাকে ভালবাসি, এবং আমেরিকা আমার জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছে।” তবে, এখন ‘আমেরিকান ড্রিম’ ধীরে ধীরে একটি অলীক কল্পনায় পরিণত হয়েছে।
৩১ অগাস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক ভাষণে বলেন, মার্কিন সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার পরিকল্পনা একটি ‘অসাধারণ সাফল্য’। এই কথা এমনকি আমেরিকানরা বিশ্বাস করেন না। বাইডেনের সমর্থনের হার সেনা প্রত্যাহারের কারণে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। একটি প্রশ্ন উঠতে পারে: যুক্তরাষ্ট্র কখন তার ‘অসাধারণ সাফল্যের’ স্বপ্ন থেকে জেগে উঠবে?
২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হলো ‘৯/১১ ঘটনা’-র ২০তম বার্ষিকী। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি গবেষণাবিষয়ক অধ্যাপক হুয়ান কোল বলেন, “৯/১১ হামলার পর বিগত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র আরও দরিদ্র হয়েছে; বেড়েছে সামরিকীকরণ ও মেরুকরণ।”
গত ২০ বছর হলো যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে ‘জড়িয়ে পড়া’ দুই দশক। গত ২০ বছরে ‘সন্ত্রাস-বিরোধিতার’ নামে যুক্তরাষ্ট্র বড় আকারের যুদ্ধ চালিয়েছে; আফগানিস্তানে, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী কোনো নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করেনি। যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা হলো আরব ও মুসলিম অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ভয়ের রাজনীতি জোরদার করা। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র যে-যুদ্ধ শুরু করে তার মূল লক্ষ্য ছিল আপাতদৃষ্টিতে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা। তবে, ২০ বছরের সামরিক অভিযানের পর, এটা বলা যাবে না যে, আফগানিস্তানে কোনো সন্ত্রাসবাদ নেই।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ একই বছরে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। তবে ২০ বছর পর, মার্কিন প্রত্যাহারের শেষ কয়েক দিনে, কাবুলে একটি সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে। ‘ইসলামিক স্টেট’ এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। যা দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২০ বছরের যুদ্ধ অনেক দেশকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে, টুইন টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষের ওপর মার্কিন আট বছর ধরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার পুনর্নির্মাণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে ধ্বংসাবশেষ তার সৃষ্টি করেছে, মধ্যপ্রাচ্যের জনগণকে তা পুনর্নির্মাণ করতে কত সময় লাগবে?
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন আন্তর্জাতিক ও পাবলিক বিষয়ের গবেষণালয়ের উপাত্ত অনুসারে, ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ২৪১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৭১ হাজারেও বেশি বেসামরিক ছিল। ৯/১১ পরবর্তী যুদ্ধে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমিলিয়া এবং ফিলিপিন্সে ৩৭ মিলিয়ন মানুষ গৃহহারা হয়েছে। ওবামা প্রশাসনের শেষ বছর থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ বছর পর্যন্ত, এ সময়ের মধ্যে রেকর্ড তথ্য অনুসারে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান হামলায় নিহত বেসামরিক লোকের সংখ্যা ৩৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ লক্ষ আফগান প্রতিবেশী বিদেশে পালিয়ে গেছে অথবা সীমান্তবর্তী এলাকায় শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে বা বলতে গেলে পালিয়ে বেঁচেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের যা থেকে পালিয়ে যাওয়া উচিত নয় তা হলো, তারা যে মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। ‘অসাধারণ সাফল্য?’ এখনই জেগে ওঠা উচিত! যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলারও দায়ভার নিতে হবে।
(জিনিয়া/আলিম/শুয়েই)