গতকাল (রোববার) ১৬তম গ্রীষ্মকালীন প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমস জাপানের টোকিওতে শেষ হয়েছে। এবারের গেমসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমাদের পাখা আছে’। গত ১২ দিন ধরে খেলোয়াড়দের আচরণে এর ভালো বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।
এ সময়ে বিশ্বের ১৬২টি প্রতিনিধি দলের ৪৪ হাজার খেলোয়াড় তাদের ঘাম জড়িয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাদের শরীর অসম্পূর্ণ হলেও তাদের প্রাণের সৌন্দর্য্য দেখা গেছে পুরো আসরজুড়ে। তাদের হাসিমুখ দিয়ে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির সুবাস ছড়িয়েছেন। প্রতিবন্ধী গেমসের মশাল ধীরে ধীরে নেভে যায়, তবে ‘প্রতিবন্ধী অলিম্পিকের চেতনা’কোনো দিনই নেভানো সম্ভব নয়।
আত্ম-উন্নতির “চীনা শক্তি”
এবারের গেমসে চীন ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৬০টি রৌপ্যপদক ও ৫১টি ব্রোঞ্জপদক জয় লাভ করেছে। মোট ২০৭টি পদকের মধ্যে চীন সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বর্ণপদক জিতেছে। পদকের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে চীন। এটি ছিল চীনের প্রতিনিধি দলের পঞ্চমবার গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার ঘটনা। চীনা প্রতিবন্ধীদের অদমনীয় ও আত্মবিশ্বাসী ভাবমূর্তি বিশ্বের সামনে ফুটে ওঠেছে। তারা চমত্কার আচরণের মধ্য দিয়ে ক্রীড়ার চেতনা প্রদর্শন করেছেন। তারা অসম্ভবকে করেছেন সম্ভব।
চাং সুয়ে মেই ছিলেন সমাপনী অনুষ্ঠানে চীনা প্রতিনিধি দলের পতাকাধারী। এবারের গেমসে তিনি তার দলের সদস্যদের সঙ্গে রৌপ্যপদক অর্জন করেছেন, যা প্রতিবন্ধী অলিম্পিকে চীনের নারী হুইলচেয়ার বাস্কেটবল দলের সেরা অর্জন।
চৌ সিয়া এবারের গেমসে চীনা প্রতিনিধি দলের প্রথম স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। তিনি নারী ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগীতায় বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন।
ছেং থাওকে “বাহুবিহীন উড়ন্ত মাছ’ নাম দেওয়া হয়েছে। প্রতিবার সাঁতারের সময় তিনি মুখে তোয়াল ধরেন এবং শেষ জায়গা পৌছানোর পর মাথা দিয়ে পুলে ধাক্কা মারেন। এবারের প্রতিবন্ধী গেমসে তিনি চারটি স্বর্ণপদক লাভ করেছেন এবং চারটি অতীত রেকর্ড ভেঙেছেন, যা সারা বিশ্বে বিষ্ময় সৃষ্টি করেছে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ মা চিয়া এবারসহ দুবার গেমসে অংশ নিলেন। দ্বিতীয়বারের গেমসে তিনি আবার বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। এমন কি প্রথমবারের চেয়ে ভালো করেছেন এবার।
পশ্চিমারা শত বছর আগে চীনাদের ‘পূর্ব এশিয়ার রোগী’ নাম দিয়ে হাসাহাসি করতো। কিন্তু সেদিন আর নেই। কারণ চীনের প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদরা সর্বোচ্চ পদক ছিনিয়ে এনে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন চীনারা পরিশ্রমী, আত্মনির্ভর এবং ভাগ্য পরিবর্তনের এক বিস্ময়কর জাতি।
সংহতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ ‘অলিম্পিক গেমসের চেতনা”
গেমসে শুধু প্রতিযোগীতা নয়। এতে রয়েছে সংহতি ও বন্ধুত্ব। নারীদের তরবারির লড়াই প্রতিযোগীতায় চীনের ক্রীড়াবিদ পিয়ান চিং জর্জিয়ার ক্রীড়াবিদকে পরাজিত করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। প্রতিযোগীতা শেষে তিনি জর্জিয়ার ক্রীড়াবিদের পাশে গিয়ে তাকে সাহায্য করেন। জর্জিয়ার সে ক্রীড়াবিদও পিয়ান চিংকে আলিঙ্গন করেন।
সাঁতারু লু তোং স্বর্ণপদক গ্রহণের সময় সমান উচুতে ছবি তোলার জন্য এক পা নিচু করেন। পোল্যান্ডের টেবিল টেনিস ক্রীড়াবিদ পাভাটিকা সেমি ফাইনালে যেতে না পেরেও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী গেমসে অনেকের ওপর দৃষ্টি রাখার মূল্য রয়েছে। তাতে অনেক মহান ব্যক্তি রয়েছেন। তারা আমাদের জীবন-যাত্রায় সেরা আত্মা”।
তার এই সহজসরল কথাগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্প্রীতিময় বন্ধুত্বের প্রতিফলন। তাদের কথা ও আচরণে অলিম্পিক মটোর নতুন অংশ--আরও সংহতির প্রতিফলন রয়েছে।
প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমস শেষ হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী অলিম্পিকের চেতনা চিরদিন জ্বলতে থাকবে। বর্তমানে মানব জাতির অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বহুগুণে ক্রীড়া ও অলিম্পিক থেকে উষ্ণ শক্তি বেশি প্রয়োজন। সে শক্তি মানুষের সুস্থ মন, ও শরীর গঠন এবং মহামারির কঠিনতা কাটিয়ে উঠায় আস্থা যোগাবে।
রুবি/এনাম