সেপ্টেম্বর ৬: চলতি বছরের ‘চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্য মেলা’ ২ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি হল বিশ্বের পরিষেবাবাণিজ্য খাতের বৃহত্তম এবং নানা বিষয়ভিত্তিক এক আন্তর্জাতিক মেলা।
এবারের মেলার জন্য বেইজিংয়ের শৌকাং শিল্পপার্কে ৯৪ হাজার বর্গমিটার-জুড়ে প্রদর্শনী এলাকা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা সেবা, টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার ও তথ্য সেবা, আর্থিক সেবা এবং সংস্কৃতি ও পর্যটন সেবা-সহ আটটি বিষয় প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব প্রদর্শনীতে নানা উল্লেখযোগ্য বিষয় আছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
সিএমজি’র সাংবাদিক মেলার ‘স্বাস্থ্য পরিষেবা বিশেষ প্যাভিলিয়নে’ যান। সেখানে বিভিন্ন বড় বড় চিকিত্সা যন্ত্রের প্রতিষ্ঠান ও চিকিত্সামূলক প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রযুক্তি ও পণ্য নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক পরীক্ষা, চিকিত্সা, স্বাস্থ্য পরিচালনা, নিউক্লিক এসিড নমুনা সংগ্রহ করা ইত্যাদি।
প্যাভিলিয়নে চীনের সিনোফার্মের প্রদর্শনী এলাকা অনেক দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এবারের মেলায় সিনোফার্মের আওতাধীন চায়না বাইওটিক্স নানা নতুন পণ্য নিয়ে এসেছে।
প্রদর্শনীতে কোম্পানির একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, তারা এবার প্রধানত তাদের সর্বশেষ করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট ইমিউনোগ্লোবুলিন অর্থাত্ সুনির্দিষ্ট আইজিই (Specific IgE) নিয়ে হাজির হয়েছেন। এটি হলো করোনাভাইরাসের নিউমোনিয়া চিকিত্সার এক বিশেষ ধরণে ওষুধ। করোনাভাইরাসের টিকাগ্রহণের পর ইমিউন পাওয়া লোকজনের রক্তে এই উপাদান পাওয়া যায়। এর বৈশিষ্ট্য হলো চিকিত্সার কার্যকারিতা ভালো ও লো টক্সিসিটি।
করোনাভাইরাসের নিউমোনিয়া চিকিত্সার বিশেষ ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন বা টিকা হলো মহামারি প্রতিরোধের কার্যকর অস্ত্র। এবার সিনোফার্মের চায়না বাইওটিক্স নিয়ে এসেছে চীনের নিজস্ব গবেষণায় তৈরি করোনাভাইরাসের এম-আরএনএ (mRNA) টিকার সর্বশেষ অগ্রগতি। ওই ব্যক্তি জানান,
বর্তমানে তাদের শাখা কোম্পানি এম-আরএনএ টিকা নিয়ে গবেষণা করছে। এর নিজস্ব মেধাস্বত্ত্ব আছে। বর্তমানে কোম্পানিটি এম-আরএনএ টিকা গবেষণার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এবং একটি বড় আকারের উত্পাদন কারখানা নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করছে।
প্রদর্শনী এলাকায় অনেক দর্শক সিনোফার্মের চায়না বাইওটিক্সের বিশেষভাবে স্থাপিত ভিআর (VR)–এর মাধ্যমে টিকার উত্পাদন প্রক্রিয়া দেখতে পেরেছে। আশা করি, এসব বৈজ্ঞানিক শক্তির কল্যাণে চীনের গবেষণায় তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ও ওষুধ বিশ্বের মহামারি প্রতিরোধে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে।
এ ছাড়া, বেইজিংয়ের চিসুইথান হাসপাতালের প্রদর্শনী স্টোরে একটি মিনিম্যালি ইনভেইসিভ সার্জিক্যাল রোবট (Minimally invasive surgical robot) অনেক দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হাসপাতালের উপপ্রধান উ সিন পাও জানিয়েছেন, আগে শ্রোণীচক্রের হাড় অপারেশনের জন্য রোগীর দেহে বড় ক্ষত তৈরি করতে হতো। এতে রোগীর বেশি ব্যথা লাগত এবং অস্ত্রোপচারের পর সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগতো। এখন এই রোবটের সাহায্যে ছোট ক্ষতের মাধ্যমে এসব অস্ত্রোপচার করা যায়।
প্রতিবারের পরিষেবা মেলায় চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও চিকিত্সা স্টোর লোকজনের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্টোরে দর্শকরা দর্শনশক্তি, শ্রবণশক্তি ও স্পর্শশক্তির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ ও চিকিত্সাপদ্ধতি সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে পারে।
এবারে মেলার স্বাস্থ্য প্যাভিলিয়নে আরো অনেক উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি দেখানো হচ্ছে। যেমন, নতুন জন্ম নেওয়া শিশুর পা থেকে রক্ত নিয়ে একসঙ্গে ৫৯৬ ধরণের বংশগত রোগ শনাক্ত করার যন্ত্র ইত্যাদি। আশা করি, এসব স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা পরিষেবা সারা বিশ্বের মহামারি প্রতিরোধ ও মানবজাতির স্বাস্থ্য খাতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)