চীনের কিংবদন্তি তারকা ফুটবলার রং চি সিন
2021-09-03 16:37:18

সেপ্টেম্বর ০৫: চীনে একজন বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় রয়েছেন। তাঁর নাম রং চি সিন । তিনি হলেন চীনের ফুটবল ইতিহাসের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁকে চীনের কিংবদন্তি তারকা ফুটবলার হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। আজ আমরা তাঁর জীবনের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

আজকের গল্পের শুরু ভারত মহাসাগরে। ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন একটি যাত্রীবাহী জাহাজ ভারতের মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। জাহাজে থাকা একজন চীনা পুরুষ দৌড়ে চিকিত্সকের কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, “ডক্টর! ডক্টর, আমার বৌয়ের প্রসব ব্যাথা ওঠেছে। প্লিজ! আমাদের সাহায্য করুন।” 

চীনা পুরুষটির কথা শুনে চিকিত্সক দ্রুত তাঁর স্ত্রীর কাছে পৌঁছান। পুরুষটি বলেন, “বৌ, তুমি এগিয়ে যাও!”

কিছুক্ষণ পর “ওয়া, ওয়া, ওয়া” শব্দ ভেসে আসে। শুনা যায় এক ছেলে নবজাতকের কান্না। তবে তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, এ ছেলে ৩০ বছর পর চীনের জনপ্রিয় ফুটবলার হবে। সেই শিশুটির নাম হল রং চি সিন। 

সময় নদীর মতো বয়ে চলে। এক ঝলকে ১০ বছর পার হয়ে যায়। রং চি সিনের পিতা রং তাঁর কূটনীতিক দায়িত্ব শেষ করেন ভারতে। তারপর তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে কুয়াং চৌতে বসবাস শুরু করেন। তাঁর ছেলে রং চি সিন ফুটবল খেলতে অনেক ভালবাসেন। একদিন স্থানীয় এক ক্রীড়া স্কুলের কোচ রং চি সিনের ফুটবল খেলা দেখেন। খেলা শেষে তিনি তাঁকে বলেন, “তুমি আমাদের স্কুলে ফুটবল খেলতে চাও?” রং চি সিন জানায়, “অবশ্যই, স্যার।” 

তা শুনে কোচ বলেন, “ঠিক আছে, দুদিন পর আমাদের স্কুলে একটি প্রতিযোগিতা হবে, তুমি তখন আসতে পারবে?” 

আসলে সেটি ছিল রং চি সিনের জন্য একটি ভর্তি পরীক্ষা। খেলায় তাঁর ফুটবল প্রতিভা ফুটে ওঠে। তারপর ১০ বছর বয়সী রং চি সিন আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ক্রীড়া স্কুলে ভর্তি হন। সেই থেকে তাঁর ফুটবল জীবন শুরু হয়। 

১৯৬৯ সালে তিনি ২১ বছর পূর্ণ করেন। তখন তিনি কুয়াং তোং প্রদেশের ফুটবল দলে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি চীনের জাতীয় ফুটবল দলে প্রবেশ করেন । তখন তাঁর বয়স কেবল ২৪ বছর। 

১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৮১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১২তম ফুটবল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচের আয়োজন হয়। এতে রং চি সিন চীনা দলের ফরওয়ার্ডার হিসেবে মাঠে ছিলেন। চীনা দল তখন জাপান ও উত্তর কোরিয়ার ফুটবল দলকে পরাজিত করে চতুর্থ গ্রুপে প্রথম হয়। 

পরের একটি খেলায় রং চি সিন তাঁর পায়ে ব্যাথা পান। কুয়েতি দলের সাথে খেলা শুরুর আগে চীনা দলের কোচ রং চি সিনকে বলেন, “চি সিন, যদি খেলার সময় পায়ে সমস্যা হয়, তুমি মাঠ থেকে চলে আসবে, আমি অন্য কাউকে পাঠাব, সমস্যা নেই।”

রং চি সিন মুচকি হেসে বলেন, “স্যার, কোন সমস্যা নেই, চিন্তা করবেন না।”

খেলার এক পর্যায়ে রং চি সিন একবার কুয়েতের গোল পোস্টের প্রায় ১০ মিটারের মধ্যে পৌঁছে যান। মাঠের বাইরে কোচসহ সবাই দাঁড়িয়েছিলেন। শুট!শুটঁ! বলে সবাই তাঁর উদ্দেশে চিত্কার করছিলেন।  

ঠিক সেই মুহূর্তে একটি ঘটনা ঘটে যায়। রং চি সিন হঠাত করে থেমে যান। তিনি দেখেন তাঁর পিছনে দুজন কুয়েতি ফুটবলার মাঠে পড়ে যায়। তাই তিনি প্রতিপক্ষের গোল পোস্টে বল না-মেরে আহত কুয়েতি ফুটবলারদের কাছে চলে যান। তাদের আবার দাঁড়াতে সাহয্য করেন। ফুটবল মাঠের ইতিহাসে তৈরি করেন মানবতার এক বিরল দৃষ্টান্ত। 

সেই ঘটনা স্মরণ করে রং চি সিন বলেন, “তখন আমি আমার পিছনে একটি বড় শব্দ শুনতে পাই। তখনই আমি ঘুরে দাঁড়াই। দেখতে পাই কুয়েতের দুজন ফুটবলার আঘাত পেয়ে মাঠে পড়ে গেছে। সেজন্য আমি নিশ্চিত গোল দেয়া বন্ধ করে তাদের সাহায্য করি।”

এমন বিরল দৃশ্য দেখে তখন স্টেডিয়ামের সব দর্শক তাঁকে সম্মান জানাতে থাকেন। তাঁর নামে জয় ও আনন্দ ধ্বনি দিতে থাকেন। তবে চীন সেই খেলায় ৩:০ গোলে কুয়েতকে পরাজিত করেছিল।
 
মহান এই ফুটবল তারকা ১৯৮২ সালে অবসর নেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল কেবল ৩৪ বছর। সে সময় রং চি সিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তারপর তিনি চীনের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারে তিনি একটিও হলুদ বা লাল কার্ড পাননি। তাঁর এমন সুশৃঙ্খল এবং সুষ্ঠু আচরণ চীনের ফুটবলারদের জন্য একটি মডেল সৃষ্টি করেছে।