দেহঘড়ি পর্ব-৩৩
2021-09-03 19:20:14

‘দেহঘড়ি’র এ পর্ব রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং স্বাস্থ্য-বিষয়ক ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভূবনে  বাস’।

 

## প্রতিবেদন

যৌথ টিকা উৎপাদন বাংলাদেশের স্বনির্ভর হওয়ার পথ উন্মোচন করবে

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d1

ছবি: ঢাকার একটি কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের দীর্ঘ লাইন

 

চীনের সঙ্গে যৌথ টিকা উৎপাদন কার্যক্রম সফল হলে, বাংলাদেশে গণটিকাদান কার্যক্রম গতিশীল হবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই শুরু হবে উৎপাদন কার্যক্রম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলে সরকারকে আরও কৌশলী হতে হবে। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুপক্ষকেই নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ।

 

দীর্ঘ দুই মাস পর মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পেয়ে টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়েছেন সালেহা আক্তার শিউলী। তিনি বলছেন টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করেছে নানা রকম জটিলতা।

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d2

ছবি: সালেহা আক্তার শিউলী

 

এমন অভিযোগ আরও অনেকের। আবার টিকা নিতে এসেও ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে ।

বাংলাদেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন টিকা নিচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ। টিকা নেওয়ার পর নিজেদের সুরক্ষিত ভাবছেন তারা।

 

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d3

ছবি: টিকা নিয়ে নিজেদের সুরক্ষিত ভাবছেন তারা।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে একটি দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন। চলতি বছর গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর গেল ৭ মাসে ৪ শতাংশের কিছু বেশি মানুষকে পূর্ণ ২ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ সরকার।

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d4

ছবি: ঢাকার একটি টিকাদান কেন্দ্র

 

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। সম্প্রতি দেশেই যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে চীনের সিনোফার্ম, বাংলাদেশের স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে টিকাদান কার্যক্রম গতিশীল হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম। 

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d5

ছবি: ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

 

টিকা উৎপাদনে যেতে কতদিন সময় লাগবে - এমন প্রশ্নের জবাবে ইনসেপ্টা ভ্যাকিসিন লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান হাসনিন মুক্তাদির বলেন, দিনক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব উৎপাদনে যাবেন তারা।

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d6

যৌথ টিকা উৎপাদন কার্যক্রম সফল হলে বাংলাদেশের জন্য স্বনির্ভর হওয়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে মনে করে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক। চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলে সরকারকে নিতে হবে কার্যকর পরিকল্পনা, হতে হবে আরও কৌশলী। তাহলে ৬ মাসের মধ্যেই সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মত দেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d7.jpg

ছবি: অধ্যাপক মোজাহেরুল হক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা

 

চুক্তি অনুযায়ী, চীন থেকে সেমি-ফিনিশড টিকা এনে তা বোতলজাত করবে ইনসেপ্টা। প্রতি মাসে উৎপাদন করা যাবে দেড় কোটি ডোজ টিকা। এসব টিকা সংরক্ষণ করা হবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইপিআইয়ের স্টোররুমে।

অভি/রহমান

 

 

##হেল্‌থ বুলেটিন

বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী পেলেন ম্যাগসেসে পুরস্কার

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d8

এশিয়ার নোবেল বলে খ্যাত র্যা মন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী। গত মঙ্গলবার দুপুরে ফিলিপিন্স থেকে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা এবং সাশ্রয়ী দামে সেটা সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দেওয়া হলো তাকে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ -আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন ড. ফেরদৌসী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা-বিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে কলেরার টিকা আবিষ্কারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রতিমাসে ১ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশে সরকার প্রতিমাসে এক কোটি ডোজ করোনা টিকা পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা টিকা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সকল উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

কোভিড হাসপাতালেও ভর্তি করা যাবে ডেঙ্গু রোগী: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বাংলাদেশে ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে করোনা হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম।। মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। করোনার উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেই দেশে ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য সাধারণ হাসপাতালের পাশাপাশি কোভিড হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান খুরশিদ আলম।

বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়ালো

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। এছাড়া করোনায় বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষের। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন সোয়া ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ।

স্কুলে যাচ্ছে চীনের শিশুরা

সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চীনে খুলে দেওয়া হয়েছে স্কুল। ফলে স্কুলে যেতে শুরু করেছে চীনের শিশুরা। বেইজিংয়ের প্রাইমারি স্কুল কুয়াং ওয়েই শাখায় শিশুদের স্কুল খুলে দেওয়ার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে শিশুদের এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, ইনফ্রা রেড থার্মোমিটার ব্যবহার, মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয় দেখানো হয়।

৫৬ লাখ চীনা টিকা এলো বাংলাদেশে

চীনের সিনোফার্মের তৈরি প্রায় ৫৬ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। বাণিজ্যিক চালান হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে এসব টিকা। গেল ১২ মে থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে সিনোফার্মের ২১ লাখ টিকা উপহার দিয়েছে চীন। এছাড়া কোভ্যাক্সের আওতায় তিন চালানে এসেছে চীনের ৩৪ লাখ ৬২ হাজার টিকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চীন থেকে সিনোফার্মের ১ কোটি ৮১ লাখ ৬১ হাজার ৮০১ ডোজ টিকা এসেছে বাংলাদেশে।

 

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d9.jpg

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে। বাংলাদেশে যে বংশগত রোগ নিয়ে শিশুজন্মের হার বাড়ছে তার মধ্যে থ্যালাসেমিয়া অন্যতম। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের হিসেবে, প্রতিবছর সাত হাজার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু জন্মগ্রহণ করে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি দশ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। এই বিপুল সংখ্যক থ্যালাসেমিয়া বাহক একে অন্যকে বিয়ের মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্ত শিশুর জন্মের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। যারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত উৎপাদন হয় না বলে রক্তশূন্যতা তৈরি হয়। তাই তাদের নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত নিতে হয়। এ রোগের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। তাই এ রোগ থেকে বাঁচতে প্রতিরোধই  উত্তম। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে দুই বাহকের মধ্যে বিয়ে রোধ করা গেলে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এ রোগের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হেমাটোলজি  বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গুলজার হোসেন উজ্জ্বল।

 

## ভুলের ভূবনে বাস

ভাঙ্গুন হাঁপানি সম্পর্কে ভুল ধারণা

দেহঘড়ি পর্ব-৩৩_fororder_d10

হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যার প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট ও সাঁসাঁ শব্দে নিঃশ্বাস ফেলা। হাঁপানিতে শ্বাসনালীর আস্তরণ ফুলে যায়, যার ফলে শ্বাসনালী এতটাই সংকীর্ণ হয়ে যায় যে প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাসে শ্বাসবায়ুর গতি অনেকটাই কমে যায়। গোটা বিশ্বে বিপুল সংখ্যক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের ধারণা, এ দেশে এক কোটির বেশি মানুষ হাঁপানিতে ভুগছে। অন্যদিকে আমেরিকায় এ রোগে আক্রান্ত প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। তবে এ রোগটি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা ভুল ধারণা। আজ আমরা আলোচনা করবো সেসব ভুল ধারণা নিয়ে।

হাঁপানি কি একটি মানসিক সমস্যা?

অনেকে মনে করেন, উদ্বেগ ও হতাশার কারণে হাঁপানি হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হাঁপানি কোনও মানসিক সমস্যা নয়। হাঁপানি ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফল, যার ফলে শ্বাসনালী ফুলে যায় ও সংকীর্ণ হয়ে যায়। এই প্রদাহ জিনগত এবং অ্যালার্জেন ও দূষণের মতো বিষয়গুলোর সংস্পর্শসহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেসব বিষয় ও উপাদান হাঁপানি জাগিয়ে তোলে সেগুলো হলো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বা সর্দি, দূষণ, ফুলের পরাগ, ধুলো, ধূমপান বা ধোঁয়ার সংস্পর্শ, এবং ঠাণ্ডা বায়ু। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, দুশ্চিন্তা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ কঠিন করে তুলতে পারে, তবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে হাঁপানি ফুসফুসের রোগ, মনের নয়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কি হাঁপানি সেরে যায়?

এটা একটি প্রচলিত ধারণা যে, হাঁপানি একটি শৈশবকালীন রোগ, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেরে যায়। এটা সত্য যে, শিশুদের মধ্যে হাঁপানি একটা সাধারণ রোগ। যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে আনুমানিক ৫৫ লাখ এ রোগে ভুগছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, প্রায় ৫৪ শতাংশ শিশু প্রতি বছর এক বা একাধিকবার হাঁপানির আক্রমণের সম্মুখীন হয়, যেখান প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার ৪৩ শতাংশ। তবে বাস্তবতা হলো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁপানি সারে না। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো পরিবর্তিত হতে পারে বা কম ঘন ঘন হতে পারে, তবে রোগটি থেকেই যায়। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মধ্যে হাঁপানির তীব্রতা হ্রাস পেতে পারে। তবে লক্ষণ ছাড়াই দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও হাঁপানির লক্ষণগুলি আবারও দেখা দিতে পারে এবং খুব মারাত্মক হতে পারে। সিডিসি জানাচ্ছে, হাঁপানি থেকে প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি হারে মারা যায়। আবার অ্যাজমা এমন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে, যাদের মধ্যে ছোটবেলায় এ রোগের কোনও উপসর্গই ছিল না।

হাঁপানি চিকিৎসায় স্টেরয়েড গ্রহণ কি বিপজ্জনক?

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও অন্যান্য ফেডারেল এজেন্সিগুলোর গবেষকরা এটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, হাঁপানির লক্ষণগুলো প্রতিরোধে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কর্টিকোস্টেরয়েড গ্রহণ করা (ইনহেল) প্রয়োজনীয়। কিন্তু স্টেরয়েড একটি খারাপ খ্যাতি অর্জন করেছে। অনেকে উদ্বিগ্ন যে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কর্টিকোস্টেরয়েড গ্রহণ শিশুদের বেড়ে উঠাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বা তারা এটাতে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। হাঁপানি চিকিৎসায় যে কর্টিকোস্টেরয়েডগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো আসলে শরীরে উৎপাদিত হরমোনের মতোই। বিশটিরও বেশি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে উচ্চমাত্রায় কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করেছে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় তাদের উচ্চতা যারা কখনও এটা ব্যবহার করেনি তাদের সঙ্গে মাত্র ১ সেন্টিমিটারেরও কম পার্থক্য ছিল। তবে এর বিপরীত দিক হলো, যেসব শিশু এটা ব্যবহার করে না, হাঁপানি নিজেই তাদের বেড়ে উঠাকে বিলম্বিত করতে এবং আগেআগেই বয়ঃসন্ধির সূচনা করতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নেওয়া কর্টিকোস্টেরয়েডগুলোর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এ ওষুধ গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে কণ্ঠ কর্কশ হওয়া, মুখে ছত্রাকের সংক্রমণ এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়া।

ব্যায়াম করা হাঁপানিতে আক্রান্তদের জন্য কি নিরাপদ?

ব্যায়াম সাধারণত হাঁপানি জাগিয়ে তোলে। তাই অনেকে বিশ্বাস করেন যে, হাঁপানি থাকলে ব্যায়াম করা বা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা নিরাপদ নয়। কিন্তু একটি সক্রিয় জীবন যাপন করার জন্য হাঁপানি কোনও প্রতিবন্ধক নয়; বরং এটা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব হাঁপানি রোগী অবসর সময়ে শারীরিক ক্রিয়াকলাপে অংশ নেয়, তাদের হাঁপানির প্রকোপ এড়ানোর সম্ভাবনা যারা ব্যায়াম করে না তাদের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। স্থূলতা হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম স্থুলতার ঝুঁকি কমিয়ে প্রকান্তরে হাঁপানির ঝুঁকি কমায়। তবে হাঁপানিতে আক্রান্তদের অতিরিক্ত ব্যায়াম করা উচিৎ না কখনও। - রহমান

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

 

 

সঞ্চালনা: শিহাবুর রহমান

 

অডিও সম্পাদনা: হাবিবুর রহমান অভি