করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানে আশ্চর্য গোয়েন্দা তত্পরতা!
2021-09-03 15:07:51

সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা কোভিড-১৯-এর  উত্স অনুসন্ধানের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে। যা নিয়ে ব্যাপক হাস্যরস ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ মহামারি নিয়ে যখন সারা বিশ্ব অস্বস্তিকর সময় পার করছে, তখন এমন প্রতিবেদন কোনও কাজে লাগেনি। তার চেয়েও মজার বিষয় হলো, ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানে অপরাধী ধরার গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন।

বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

গত ২৭ অগাস্ট মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা নভেল করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের জন্য মাত্র ৯০ দিনের তদন্তের পর এক রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে ভাইরাসের কোনো উত্স খুঁজে পাওয়ার কথা বলা হয়নি। তবে বেশ কিছু সন্দেহের কথা বলা হয়। যাতে চলমান সমস্যার কোনও সমাধান হয় নি, তবে সন্দেহ প্রবণতার সৃষ্টি হয়েছে।

এই রিপোর্ট প্রকাশের পর নভেল করোনাভাইরাসের কোনও ক্ষতি না হলেও, মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিজেদের ক্ষতি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বিশ্বের এই পরাশক্তি বিশ্বব্যাপী বছরের পর বছর ধরে নানা দেশ সম্পর্কে যে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে, তাও কি এভাবেই তৈরি করা হয়? সেসব প্রতিবেদনও কি রাজনৈতিক কর্মসূচি? চীনের সিনচিয়াং ইস্যু, বাধ্যতামূলক শ্রম, তুলা চাষ, হংকং-তাইওয়ান ইত্যাদি নিয়ে একের পর এক যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে- সেগুলোও কি তাহলে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সামনে রেখে তৈরি করেছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো?

করোনাভাইরাস নিয়ে প্রকাশিত এ রিপোর্টটিকে মার্কিন নেটিজেনরা ‘মূল্যহীন কাগজ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে হোয়াইট হাউস থেকে এক বিবৃতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে করোনার উত্স নিয়ে মতভেদ রয়েছে। প্রকৃতি বা গবেষণাগার উভয় স্থান থেকেই ভাইরাস উত্পত্তি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আসলে এ দুটি স্থানের বাইরে আর কোথায় ভাইরাস থাকতে পারে তা মানবজাতির জানা নেয়। মূলত গবেষণাগারে আজ পর্যন্ত কোনো ভাইরাস তৈরি করা যায় নি। শুধু গবেষণা করা হয়, সেসব ভাইরাসও প্রকৃতির উত্স থেকেই এসেছে। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস এলো কোথা থেকে?- সে জবাব দেয়নি ৯০ দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করা গোয়েন্দারা।

তাহলে গোয়েন্দারা ৯০ দিন ধরে কী নিয়ে পরিশ্রম করলো ? সেই প্রশ্নটিও করছেন নেটিজেনরা। আরও প্রশ্ন উঠেছে- মার্কিন গোয়েন্দারা দেশে বিদেশে নানা সন্ত্রাসী ও শত্রু খুঁজে চিহ্নিত করে। আসলেই তারা প্রকৃত সন্ত্রাসী খুঁজে পায় কি? নাকি সাধারণ মানুষকে বলির পাঁঠা বানিয়ে সন্ত্রাসী নামে প্রচার করে।

ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস নিয়ে এমন প্রতিবেদন তৈরি করে মূলত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাই বিশ্বের কাছে নিজেদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে।

 

খবরে দেখা যায়, তদন্তের আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিভাগ গবেষণাগার থেকে করোনা ফাঁস হওয়ার পক্ষে এবং দুটি বিভাগ প্রকৃতি থেকে আসার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

কিন্তু তদন্তের পর এবার গবেষণাগার থেকে করোনা ফাঁস হওয়ার পক্ষে একটি এবং প্রকৃতি থেকে আসার পক্ষে চারটি বিভাগ অবস্থান নিয়েছে। এ পরিবর্তন প্রসঙ্গে জনৈক মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেন, মার্কিন সরকার বরাবরই ল্যাব থেকে করোনা ফাঁস হওয়ার অপপ্রচার করে আসছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, মার্কিন ল্যাব থেকে ফাঁস হওয়া গুরুতর ঘটনাগুলি থেকে বিশ্বের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানো।

 

এ বিষয়ে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের প্রধান বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের সামর্থ্য নেই।

গণস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের প্রধান স্টেন ভারমন্ড বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা রাজনীতি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি নিয়ে তদন্ত করে; এর গণস্বাস্থ্য ও ভাইরাসবিদ্যা গবেষণার কোনো যোগ্যতা নেই। এই কাজটি বিজ্ঞানীরা আরো ভালো করতে পারেন।

তিনি বলে, ভাইরাসের উত্স তদন্ত করা একটি ভালো ব্যাপার, তবে, এখন এ বিষয়ে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সবার উচিত বিশ্বের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের নিয়ে ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান করা। উহানের পরীক্ষাগার থেকে করোনাভাইরাস বের হওয়ার অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই।

 

এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন বিন গত সপ্তাহে নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশিত তথাকথিত ‘করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান রিপোর্ট’ একটি অবৈজ্ঞানিক রাজনৈতিক রিপোর্ট, ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র মহামারি প্রতিরোধের ব্যর্থতা অন্য দেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে এবং চীনের মুখে কালি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি ঠিক আগে ইরাকে ব্যাপক রাসায়নিক অস্ত্র থাকার মতো মিথ্যা দাবি। এই রিপোর্ট হলো- আন্তর্জাতিক সমাজকে প্রতারণা ও বিভ্রান্ত করার আরেকটি প্রমাণ।

                

নিঃসন্দেহে, এই রিপোর্টের কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। কারণ, এটি শুধুই রাজনৈতিক প্রহসন। বিশ্বের দেশগুলোর উচিত দ্রুত মহামারি প্রতিরোধ করা, জনগণকে রক্ষা করা এবং বৈজ্ঞানিকভাবে ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের পথে ফিরে আসা।