বিদেশী আয়ের উত্থান পতনের কারণ কী?
2021-09-02 20:06:33

বিদেশী আয়ের উত্থান পতনের কারণ কী?_fororder_j6

আজহার লিমন, ঢাকা: গেল ৩ বছর ধরে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন বা রেমিটেন্স খাতে। বিশেষ করে গেল অর্থবছরের সাফল্য তাক লাগানোর মত। অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২০-২০২১ অর্থবছর জুড়ে বৈদাশিক মুদ্রা আহরণ হয়েছে ২৪ দশমিক সাত সাত বিলিয়ন ডলার বা ২ লাখ ১১ হাজার একশ ৬ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের রেমিটেন্স প্রবাহ গেল বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেক কম। গেল অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে যেখানে বাংলাদেশ ৪৫৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার আহরণ করেছে সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম এই দুই মাসে আহরিত হয়েছে মাত্র ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষক ড. মোয়াজ্জেমের কাছে জানত চেয়েছিলাম, এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণ কী?

তিনি বলেন, এখন যে নেগেটিভ গ্রোথটা দেখছি তা আসলে গত বছরের অনেক হাই গ্রোথের চেয়ে নেগেটিভ। ফলে বলা যেতে পারে এখনও আসলে রেমিটেন্স এক ধরনের প্রবৃদ্ধির ভেতরেই আছে স্বাভাবিক সময়ের বিবেচনায়। স্বাভাবিক সময়ে ১২-১৩% যে গ্রোথ থাকে, সেটা গত বছর গিয়ে ৬০ শতাংশের উপরে গ্রোথ চলে গিয়েছিলো।

বিদেশী আয়ের উত্থান পতনের কারণ কী?_fororder_j7

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা স্বীকার করছেন ২০১৯ সালের পহেলা জুলাই থেকে রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে যে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার তার একটি প্রভাব এই প্রবৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে। তবে করোনা কালে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় হুন্ডির মত অবৈধ চ্যানেলগুলোও অনেকটেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. বিদিশা ইসলাম মনে করেন, সরকারি প্রণোদনার বাইরে এমন আরও অনেক কারণ থাকতে পারে রেমিটেন্সের হঠাৎ এই উর্ধ্বমুখি প্রবণতায়।

বিদেশী আয়ের উত্থান পতনের কারণ কী?_fororder_j8

ড. সায়মা হক বিদিশা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 ড. বিদিশা বলেন, অর্থনীতি যখন বিরূপ হয়ে যায় তখন দেখা যায় দেশে যারা রয়েছে, খানা পর্যায়ে যারা রয়েছে তাদের সহায়তা করতে প্রবাসীরা খেয়ে না খেয়ে হলেও তাদের অর্থটা পাঠিয়ে দেয়। এটাও কিন্তু একটা কারণ আছে, যেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

: তার মানে আমরা বলতে পারি, উচ্ছসিত হওয়ার চেয়ে কারণ অনুসন্ধানটাও জরুরি?

কারণ খোঁজাটাও গুরুত্বপূর্ণ এবং দেখা দরকার যে অনেকে চাকরি হারিয়েছে এবং সেটার ফলশ্রুতিতে রেমিটেন্স কমছে সেটা বুঝবার জন্যও কিন্তু আমাদের একটা সময় দরকার। কারণ মৌসুমীও এটা হতে পারে।

 

এ প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, তিন চারটা কারণই একসাথে কাজ করেছে। ইনসেনটিভ কাজ করেছে, হুন্ডি যেহেতু একটা বার্টার্ড সিস্টেমের মত কাজ করে সে ধরনের ট্রানজেকশনগুলো যেহেতু গ্লোবালি বন্ধ ছিলো সেটা একটা কারণ। আরেকটা হলো, যে টা বলা হয় দেশ থেকে টাকা গিয়ে আবার দেশে ঢুকেছে কি না, এরকম ঘটেছে কি না।

 

অবশ্য রেমিটেন্সের এই প্রবাহ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে দেশের বৈদাশিক মুদ্রার মুজদেও। গেল আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভের পারিমাণ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এটা কতটা ইতিবাচক?

 “আমরা সামস্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক যে চিত্রটা দেখতে পাচ্ছি অবশ্যই আমি বলবো, এটা নিয়ে আমাদের স্বস্তির একটা জায়গা রয়েছে। কিন্তু সেই স্বস্তির জায়গার পেছনে এটা কি আমাদের রপ্তানি বাড়ার জন্য, নাকি আমাদের রেমিটেন্স বাড়ার জন্য নাকি আমাদের আমদানি কমার জন্য। সব ধরনের বিষয়ই আছে কিন্তু যদি আমদানি কমাটা যদি উৎপাদনশীল খাতে হয়, অর্থাৎ উৎপাদনের জন্য জিনিসপত্র, দ্রব্যসামগ্রী আনার ক্ষেত্রে আমদানিটা হয়- তখন কিন্তু আমাদের ভাববার দরকার রয়েছে।

 

এই দুই বিশ্লেষক মনে করেন বৈধ পথে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণের জন্য সরকারি উৎসাহ অবশ্যই আশাব্যাঞ্জক। তবে হুন্ডির মত অবৈধ চ্যানেল বন্ধে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট ক্রুটি আছে বলেও মনে করেন তারা।

আজহার লিমন। চীন আন্তর্জাতিক বেতার। ঢাকা

 

 

 

 

 

 

এখন যে নেগেটিভ গ্রোথটা দেখছি তা আসলে গত বছরের অনেক হাই গ্রোথের চেয়ে নেগেটিভ। ফলে বলা যেতে পারে এখনও আসলে রেমিটেন্স এক ধরনের প্রবৃদ্ধির ভেতরেই আছে স্বাভাবিক সময়ের বিবেচনায়। স্বাভাবিক সময়ে ১২-১৩% যে গ্রোথ থাকে, সেটা গত বছর গিয়ে ৬০ শতাংশের উপরে গ্রোথ চলে গিয়েছিলো।

 

 

অর্থনীতি যখন বিরূপ হয়ে যায় তখন দেখা যায় দেশে যারা রয়েছে, খানা পর্যায়ে যারা রয়েছে তাদের সহায়তা করতে প্রবাসীরা খেয়ে না খেয়ে হলেও তাদের অর্থটা পাঠিয়ে দেয়। এটাও কিন্তু একটা কারণ আছে, যেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

: তার মানে আমরা বলতে পারি, উচ্ছসিত হওয়ার চেয়ে কারণ অনুসন্ধানটাও জরুরি?

কারণ খোঁজাটাও গুরুত্বপূর্ণ এবং দেখা দরকার যে অনেকে চাকরি হারিয়েছে এবং সেটার ফলশ্রুতিতে রেমিটেন্স কমছে সেটা বুঝবার জন্যও কিন্তু আমাদের একটা সময় দরকার। কারণ মৌসুমীও এটা হতে পারে।

 

এ প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, তিন চারটা কারণই একসাথে কাজ করেছে। ইনসেনটিভ কাজ করেছে, হুন্ডি যেহেতু একটা বার্টার্ড সিস্টেমের মত কাজ করে সে ধরনের ট্রানজেকশনগুলো যেহেতু গ্লোবালি বন্ধ ছিলো সেটা একটা কারণ। আরেকটা হলো, যে টা বলা হয় দেশ থেকে টাকা গিয়ে আবার দেশে ঢুকেছে কি না, এরকম ঘটেছে কি না।

 

 

আমরা সামস্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক যে চিত্রটা দেখতে পাচ্ছি অবশ্যই আমি বলবো, এটা নিয়ে আমাদের স্বস্তির একটা জায়গা রয়েছে। কিন্তু সেই স্বস্তির জায়গার পেছনে এটা কি আমাদের রপ্তানি বাড়ার জন্য, নাকি আমাদের রেমিটেন্স বাড়ার জন্য নাকি আমাদের আমদানি কমার জন্য। সব ধরনের বিষয়ই আছে কিন্তু যদি আমদানি কমাটা যদি উৎপাদনশীল খাতে হয়, অর্থাৎ উৎপাদনের জন্য জিনিসপত্র, দ্রব্যসামগ্রী আনার ক্ষেত্রে আমদানিটা হয়- তখন কিন্তু আমাদের ভাববার দরকার রয়েছে।