সেপ্টেম্বর ০২:গত ২৫ আগস্ট আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ১৯ বছর বয়সী মেয়ে সালগি বারান সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। আজ আমরা তার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
গত ২৫ আগস্ট আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ১৯ বছর বয়সী মেয়ে সালগি বারান সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বারান প্রথমে টেলিভিশন থেকে তার ফল জানতে পারে। তখন সে অনেক উত্তেজিত ছিল। পরিবারের সবাই এসে তাকে আলিঙ্গন করে। চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) এক সাংবাদিককে বারান জানায়, “বারো বছরের প্রচেষ্টায় ভাল ফল পেয়েছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত।”
আফগানিস্তানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার নাম হচ্ছে কনকোর। এ পরীক্ষার মোট নম্বর হচ্ছে ৩৬০ । আর বারান ৩৫২.৫৮ পেয়ে সারা দেশে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। বারান হচ্ছে দেশের ইতিহাসে প্রথম পাশতুন মেয়ে, যে ভর্তি পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, পাশতুন হল আফাগানিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি। তালিবানের অধিকাংশ সদস্য হচ্ছে পাশতুন।
বারানের এমন চমত্কার ফলাফল সারা দেশে সাড়া ফেলেছে। তালিবানের সংবাদ সংস্থা ও আফগানিস্তানের প্রধান প্রধান তথ্যমাধ্যমসমূহ তার এ সফলতার গল্পকে ব্যাপকভাবে প্রচার করছে।
দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইসহ অনেক রাজনীতিক ও বিখ্যাত ব্যক্তি তাকে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন।
বারান হামিদ কারজাই কাবুল বিশ্ববিদালয়ে চিকিতসা বিজ্ঞানে পড়ার জন্য বাছাই করেছে। মেধাবী এই কিশোরী জানায়, “আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান পাওয়া, দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে কাবুল বিশ্ববিদালয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া, আর তৃতীয় লক্ষ্য... আপাতত তৃতীয় লক্ষ্য নেই।”
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে তখন তালিবান দেশ শাসন করছিল। ওই সময়ে আফগানিস্তানে প্রাথমিক, ও মাধ্যমিক স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীরা লেখাপড়া বা চাকরি করতে পারতো না। তবে, গত ২৯ আগস্ট তালিবানের নবনিযুক্ত উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল বাকি হাক্কানি বলেন, নারীরা লেখাপড়া করতে পারবে। তবে ছেলে-মেয়রা একসঙ্গে একই শ্রেণী কক্ষে পড়ালেখা করতে পারবে না।
সালগি বারান জানায়, যদি এখনকার নেতৃবৃন্দ তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন, নারীরা লেখাপড়া ও চাকরি করতে পারলে, তা অত্যন্ত ভাল ব্যাপার হবে।
মেধাবী এই কিশোরী জানায়, “যদি সম্ভব হয়, আমি আমার লেখাপড়া শেষ করব। মাঝ পথে থেমে যাব না। যদি দেশের পরিস্থিতি ভাল না হয়, তাহলে আমি আশা করি, বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারব। মোট কথা, আমি কিছু শিখতে চাই। আশা করি, ভবিষ্যতে দেশের জন্য কিছু করতে পারব আমি।”
বারান আফগানিস্তানের লাঘমান প্রদেশের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের মতই, সেখানেও মৌলিক চিকিতসা সেবার অভাব রয়েছে। তার যখন সাত বছর বয়স, তখন তার বাবা একটি চিকিতসা দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন তার বাবার জ্বর হয়েছিল। চিকিত্সক তার বাবার শরীরের টেস্টের ফল না দেখে তাকে গ্লোকোজ ইনজেকশন দেয়। কিন্তু আদতে তার বাবার রক্তের সুগার বেশি ছিল। ফলে তিনি মারা যান। ঠিক এ কারণে বারান চিকিত্সক হতে চায়। সে একজন ভাল ডক্টর হতে চায়।
বারান আসলে একজন ভাগ্যবতী মেয়ে। কারণ তার পরিবার তাকে লেখাপড়া করতে সব ধরনের সমর্থন দিয়েছে। আফগানিস্তানের জনসংখ্যা প্রায় ৩.৬ কোটি। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ হচ্ছে নিরক্ষর। নারীদের মধ্যে এ হার হচ্ছে ৯৬ শতাংশ। ২০১৭ সালের একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, সেদেশের চারটি প্রদেশের সাড়ে ৩ লাখ ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারে না, তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ হচ্ছে মেয়ে।
বারান জানায়, “আমি একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যাতে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে। পাশাপাশি, আমাদের অনেক ছেলেমেয়েদের বই নেই, কলম নেই। তাদের অনেক ছোট বয়সে চাকরি শুরু করতে হয়। আমি আশা করি, আমাদের দেশ দ্রুত উন্নত হবে, যাতে এ সব বাচ্চাদের আর কষ্ট করতে না-হয়। তারা সবাই স্কুলে যেতে পারবে।”
অন্য মেয়েদেরও উতসাহিত করতে চায় বারান। তার মতে, “দেশ নির্মাণে আমাদের প্রচেষ্টার জন্য আমাদের দেশ অপেক্ষা করছে। আমরা হচ্ছি দেশের আশা। আমাদের নিজদের আত্ননির্ভরশীল হতে হবে। যাতে আমাদের দেশ উন্নত হয়। আফগানিস্তান হচ্ছে আমাদের অভিন্ন মাতা। পরিস্থিতি আরো অবনতি হোক এটি অবশ্যই কেউ চায় না। তাই আসুন, আমরা একসাথে প্রচেষ্টা চালাব একটি নতুন আফগানিস্তানের জন্য।”
চায়না মিডিয়া গ্রুপ(সিএমজি) থেকে আকাশ