চীনের গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে যুব-পরিকল্পনাকারীদের গল্প
2021-09-02 14:20:00

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে নগরায়ণের কাজ দ্রুততর হয়েছে; নতুন শহর ও জেলা গড়ে ওঠার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামোও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক উন্নত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ এখন নতুন পেশায় পরিণত হয়েছে। যুব-পরিকল্পনাকারীরা গ্রামে এসে ‘নতুন গ্রামবাসী’র দৃষ্টিতে বিভিন্ন গ্রামের সুপ্তশক্তি খুঁজে বের করে এবং স্থানীয় পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম উন্নয়ন-পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এতে চীনে সুন্দর গ্রাম গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তাবায়িত হচ্ছে। আজকের আসরে চীনের গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে অবদান রাখা যুবকদের গল্প শোনাবো।

২০২১ সালে চীনের চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার বাস্তবায়নকাজ শুরু হয়। এই পরিকল্পনায় গ্রামাঞ্চলের পুনরুজ্জীবন নীতিমালা গৃহীত হয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চল চীনের যুবক-যুবতীদের মনোযোগ নতুন করে আকর্ষণ করছে। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের পরিকল্পনাকারী হয়ে ওঠা এখন যুবক-যুবতীদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। ৩০ বছর বয়সের যুবক পরিকল্পনাকারী চাং ছু ইউয়ান মনে করেন, গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের পরিকল্পনাকারী যেন গ্রামের পুনরুজ্জীবন কার্যক্রমের অনুশীলনকারী, বিভিন্ন নীতিমালা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী এবং গ্রামের উন্নয়নের পথে বাস্তব সেতু।

লি তি জার্মানির বার্লিন শিল্প বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি জার্মানিতে স্থপতি পরিষদের ডিজাইন পুরস্কার পেয়েছেন। তবে স্নাতক হওয়ার পর চীনে ফিরে আসেন। চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে যোগ দেন তিনি এবং গ্রামীণ পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৯ সালে তিনি সহকর্মীদের সাথে দাতব্য সংস্থা গঠন করেন। আর এর মাধ্যমে শহর ও জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড় তোলার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের গ্রুপের ৮ জন সদস্যের মধ্যে ৪ জন বিদেশে পড়াশোনা করেছেন।

চীনের গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে যুব-পরিকল্পনাকারীদের গল্প_fororder_vl1

এ সম্পর্কে লি তি বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের মনে গ্রামাঞ্চলকে উন্নত করার স্বপ্ন রয়েছে। শহরের দ্রুতগতির জীবনযাপন অনেক উত্তেজনাময়, তবে গ্রামীণ জীবনে শান্তি ও সান্ত্বনা পাওয়া যায়।” তিনি বলেন, ‘আমার গ্রামীণ স্বপ্ন কেবল  উন্নত স্থাপত্য ডিজাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আবাসিক এলাকার পরিবেশের মৌলিক উন্নতি আমার কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

লি তি বলেন, গ্রামীণ পরিকল্পনাকারীর আবেগ প্রয়োজন; তবে শুধু আবেগ যথেষ্ঠ নয়, ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে হবে। তাঁর দলের কার্যক্রম ২ বছর আগে শুরু হয়। তাদের সামনে শুরু থেকেই বড় বড়া চ্যালেঞ্জ ছিল। এর মধ্যে গ্রুপের কেউ কিউ সাফল্যের ব্যাপারে হতাশা ও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে গ্রামীনণ পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করেই এগিয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন।

চীনের গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে যুব-পরিকল্পনাকারীদের গল্প_fororder_vl2

চীনের চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনায় গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের নীলনকশা রচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে চীনের গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো সমৃদ্ধ করতে হবে এবং জীবনমানও উন্নত করতে হবে। এমন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নে গ্রামীণ পরিকল্পনাকারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চলতি বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক কর্ম বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন ছাত্রী চাং ছু ইউয়ান। ২০১৫ সাল থেকে তিনি গ্রামাঞ্চলে সহকারী শিক্ষক  হিসেবে কাজ করছেন। শহরে বড় হওয়া ছাত্রী চাংয়ের জন্য গ্রামের জীবন পুরোপুরি আলাদা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যখন শহরে থাকতাম, তখন মনে হতো গ্রামাঞ্চলের জীবন দারাদ্র্যময়; শহর থেকে অনেক দূরেও বটে। তবে গ্রামে  আসার পর বুঝতে পেরেছি গ্রামের জীবন প্রাণচঞ্চল। এখানে নিজের অবদান রাখতে পারছি, যা খুবই আকর্ষণীয় ব্যাপার।’

স্নাতক হওয়ার আগে তিনি চাকরি নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন ছিলেন। মনে প্রশ্ন জাগতো: কী হবেন তিনি? সরকারি কর্মকর্তা?  মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক? সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী? নাকি গ্রামীণ পরিকল্পনাকারী? বাছাই করতে পারছিলেন না। অনেক চিন্তাভাবনার পর তিনি গ্রামীণ পরিকল্পনাকারী হবার সিদ্ধান্ত নেন এবং আনহুই প্রদেশের ছিয়ানশান শহরের ওয়ানচিয়ান গ্রামে স্থানীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রশাসনিক কাজে যোগ দেন। প্রতিদিন তিনি নিজের পরিবারের সাথে গ্রামের জীবনের সুখ ও দুঃখ শেয়ার করেন। তিনি স্থানীয় গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নিজের অবদান রাখছেন।

চীনের গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে যুব-পরিকল্পনাকারীদের গল্প_fororder_vl3

নদীর পানি যেমন সমুদ্রের সাথে মিশে যায়, তেমনি গ্রামীণ পরিকল্পনাকারীরা সর্বপ্রথমে গ্রামবাসীদের সাথে মিশে যান। তারা আবেগ ও আন্তরিকতার মাধ্যমে সুন্দর গ্রাম নির্মাণে চেষ্টা করে যান। এ সম্পর্কে বেইজিংয়ের গ্রামীণ পরিকল্পনাকারী লিউ লিন জানান, তিনি আনহুই প্রদেশের গ্রামে ৩ বছর ধরে কাজ করছেন। এটা এখন তার দ্বিতীয় বাড়ি। তিনি গ্রামে এসে সর্বপ্রথমে গ্রামবাসীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ওয়ানচিয়ান গ্রাম একটি ঐতিহ্যিক গ্রাম। স্থানীয় ৭০টিরও বেশি ঐতিহ্যিক স্থাপত্য এখানে। এর মধ্যে দুটি স্থাপত্য প্রাদেশিক পর্যায়ের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তবে দীর্ঘকাল ধরে মেরামতের অভাবে এখানকার প্রাচীন বাড়িঘরের ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। গ্রামের যুবকরা শহরে চাকরি করেন। শুধু প্রবীণ ও বাচ্চারা গ্রামে বসবাস করে থাকেন।

বিস্তারিত জানার পর লিউ মনে করেন, গ্রামবাসীদের প্রাচীন বাড়িঘর আগে পুননির্মাণ করতে হবে এবং এর  জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সহযোগিতা প্রয়োজন। তখন অনেক গ্রামবাসী তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। অনেকে বরং তার সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। তবে একসময় তিনি গ্রামবাসীদের আস্থা অর্জন করেন। তিনি গ্রামবাসীদের নিয়েই হলুদ ক্রাইস্যান্থেমাম চাষ করেন ও দুটি পুরনো বাড়িঘর মেরামত করেন। এর মধ্যে একটি প্রাচীন স্থাপত্য হোস্টেলের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়, যা ব্যাপক পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।

কেবল জীবনমান উন্নয়ন বা অবকাঠামো উন্নয়ন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। তিনি স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাংস্কৃতিক জীবনকেও  সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর কর্মদল ভিচ্যাটের একটি আকাউন্ট চালু করে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যেম গ্রামের বিভিন্ন ঐতিহ্যিক উত্সব, দাতব্য কার্যক্রম এবং গ্রামবাসীদের রচিত কবিতা প্রচার করা হয়। এতে গ্রামবাসীদের আত্মবিশ্বাস ও জন্মস্থানের প্রতি ভালোবাসা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

গ্রামীণ পরিকল্পনাকারীদের কাজ অতি গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যসম্পন্ন। কারণ, গ্রামবাসীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহ্য সংস্কৃতির সংরক্ষণ অনেক লোকের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। এতে মানুষ ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থানের ধারণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

গ্রামীণ পরিকল্পনাকারীরা কিভাবে তাদের কাজ করেন? সেটি অনেকের কাছে অপরিচিত ব্যাপার। এ সম্পর্কে লি তি বলেন, ব্যাপক অংশগ্রহণ, টেকসই পদ্ধতি সৃষ্টি গ্রামীণ পরিকল্পনাকারীর জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামে কোনো প্রকল্প চালু করার আগে গ্রামবাসীদের স্বার্থ ও দক্ষতা বিবেচনায় রাখতে হয়।

‘এখন অনেক স্থাপতি গ্রামে তথাকথিত ‘ইন্টারনেট জনপ্রিয় স্থাপত্য’ নির্মাণ করতে পছন্দ করেন, তবে আমি সেটা পছন্দ করি না’, লি তি বলেন। কারণ, এ ধরনের স্থাপত্য স্বল্পকালের মতো পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে, গ্রামবাসীরা তা থেকে উপকৃত হয় না। তা ছাড়া, অন্যান্য গ্রামে একই ধরনের উন্নয়নের পদ্ধতি সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয় না। তাই এমন স্থাপত্য গ্রামের বাস্তব চাহিদার সাথে মানানসই নয়।

গ্রামের উন্নয়ন ও পরিকল্পনার কাজে অবশ্যই গ্রামবাসীদের পরামর্শ সংগ্রহ করতে হবে বলে লি মনে করেন। গ্রামবাসীদের চাহিদা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা রচনা করতে হবে। মাঝে মাঝে নির্মাণকাজের কিছু প্রক্রিয়ায় গ্রামবাসীদের ব্যাপক অংশগ্রহণও দরকার। এভাবে তারা গ্রাম নির্মাণ ও রূপান্তরের পদ্ধতি বুঝতে সক্ষম হবেন।

গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণের আরেকটি সুফল হলো, তারা গ্রামে আসা পর্যটকদের পরিষেবা দিতে পারে। গ্রামের নারীরা প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করে প্রবীণ ও শিশু পর্যটকদের সহায়তা দিতে পারে। অনেক কাজ গ্রামবাসীরা নিজে করতে পারে। গ্রামীণ পরিকল্পনাকারীদের কাজ শেষ হলে, গ্রামবাসীরা নিজেদের গ্রামকে আরও সুন্দর করতে ভূমিকা রাখতে পারে।

গ্রামের উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ শেষ করে পরিকল্পনাকারীরা গ্রামবাসীদের হাতে প্রকল্প হস্তান্তর করেন। তারা নতুন গ্রামে গিয়ে নতুন পরিকল্পনা রচনা করেন। বর্তমানে লি তি’র মতো পরিকল্পনাকারী দল শহরের যুব-কর্মীদের সাথে ব্যাপক যোগাযোগ করার মাধ্যমে নতুন ডিজাইনারদের গ্রামে আসতে উত্সাহ দিচ্ছে। এতে আরো বেশি পেশাদার পরিকল্পনাকারী গ্রামের উন্নয়নের কাজে অবদান রাখতে পারবে; বিভিন্ন মহলের যৌথ প্রয়াসে গ্রামের উন্নয়নকাজ সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে।

 

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারীর প্রিয় খামার

শি ইয়ান চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। স্নাতক হওয়ার পর তিনি গ্রামে গিয়ে নিজের প্রিয় খামার তৈরি করেন। এখন নতুন স্টাইলের কৃষক হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানোর সময় কৃষিকে মেজর হিসেবে বেছে নেন শি। তখন থেকে প্রায় ২০ বছর ধরে কৃষির সাথে জড়িত কাজ করছেন। স্নাতক হওয়ার পর তিনি স্বপ্নের মতো খামার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাঁর খামারে কোনো সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেন না, সবুজ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শাক সবজি চাষ করেন। ক্রেতাদের কাছে টাটকা ও স্বাস্থ্যকর শাকসবজি পাঠান তিনি।

তাঁর খামার বেইজিংয়ের উপকন্ঠ এলাকায় অবস্থিত। খামারে কাঠের তাঁবু, চেয়ার ও বহুবর্ণ বাতি দেখা যায়। অনেক যুবক-যুবতী তাঁর খামারে নিজেদের বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।

২০০২ সালে কৃষির প্রতি আবেগের কারণে হ্যপেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন শি ইয়ান। ২০০৬ সালে চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়াশোনার সময় শিক্ষকদের সাথে ১০টিরও বেশি গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং গবেষণার কাজ করেন। তখন থেকে চীনের কৃষির খাতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে আসছেন তিনি।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ পান শি। তখন তিনি স্থানীয় খামারের পরিচালনা-পদ্ধতি বিস্তারিত জানার জন্য মার্কিন কৃষকদের সাথে কৃষিক্ষেতে কাজ করেন। দিন-রাত মার্কিন খামারে কাজ করার পর অর্গানিক সবজি চাষ করার পদ্ধতি শিখে নেন। স্থানীয় আবাসিক কমিউনিটির সমর্থনে মার্কিন খামারের ক্রেতারা খামারের শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হন। প্রতিবছর ক্রেতারা টাকা দিয়ে খামারের কাজে অংশ নিতেন এবং স্থানীয় কৃষকরা সময়সূচি অনুসারে ভিন্ন ধরনের অর্গানিক শাকসবজি ফলিয়ে এসব ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এভাবে খাদ্যশস্য ও শাকসবজির নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো। কৃষকরাও উত্পাদিত শাকসবজি বিক্রি নিয়ে উদ্বিগ্ন হতেন না। দু’পক্ষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বজায় থাকতো।

এমন উত্পাদন-পদ্ধতি শি’কে উত্সাহিত করে। তিনি এ পদ্ধতি চীনে প্রয়োগ করতে চাইলেন। ২০০৯ সালে বেইজিংয়ের ফেংহুয়াংলিং পাহাড়ের কোলে একটি খামার গড়ে তোলেন তিনি। সেখানে সবুজ সার দিয়ে শাকসবজি চাষ করা শুরু করেন।

তিনি অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশি কোম্পানিতে চাকরির অফার পেয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কৃষকের জীবন বেছে নেন।

খামারের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, “শুরুর দিকে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। কারণ, ক্রেতারা আগে টাকা দিতে চাইত না। কারণ, তারা ভয় পেতো।” কিন্তু তিনি দমে যাননি। গ্রামাঞ্চলের জীবনমান উন্নয়নে তিনি তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন এবং খামারের কাজ চালিয়ে যান।

খামারের কৃষকদের সাথে যৌথ প্রয়াসে প্রথম বছরের অর্গানিক শাকসবজি ফলে; বিভিন্ন ক্রেতার বাড়াতে তা পৌছে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে আরও বেশি ক্রেতা খামারের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন। খামার বড় হতে থাকে এবং কৃষকদের আয়ও দিন দিন বাড়তে থাকে।

বর্তমানে এ খামার ইন্টারনেটে অনেক জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের অন্যতম। বার্ষিক আয় ২০ লক্ষাধিক ইউয়ান। গত বছর মহামারীর কারণে অনলাইনে শাকসবজি বুকিং দেওয়া ক্রেতার সংখ্যাও দ্রুত বেড়েছে। তাই শাকসবজি বিক্রির পরিমাণ গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

শহরবাসীদের শাকসবজি চাষ করার আগ্রহ মেটাতে তাঁরা বেইজিংয়ের ছাওইয়াং এলাকার প্রাথমিক স্কুল ও শপিং মলে পরীক্ষামূলক কৃষিক্ষেতও চালু করেছেন। প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের শিক্ষাভবনের ছাদে প্রত্যেকে এক বর্গমিটার কৃষিক্ষেত পায়, সেখানে তাদের প্রিয় শাকসবজি চাষ করতে পারে। প্রতি সপ্তাহে খামারের কর্মীরা তাদের জন্য বিশেষ ক্লাস নেন। এসব ক্লাসে কৃষিকাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এমন পদ্ধতিতে ছোটবেলা থেকে বাচ্চারা কৃষিকাজ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায় এবং কৃষিকাজের প্রতি তাদের আগ্রহও তৈরি হয়।

এ সম্পর্কে শি ইয়ান বলেন, “কৃষিকাজে তাড়াহুড়া করে সফল হওয়া যায় না। ধৈর্য নিয়ে করলে স্বীকৃতি ও সাফল্য পাওয়া যায়। এতে নতুন জীবনের সন্ধান পাওয়া যায়।”

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা এখানে শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান যারা মিস করেছেন, তারা আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। ওয়েবসাইট ঠিকানা www.bengali.cri.cn,ফেসবুকে CRIbangla মাধ্যমে চীন ও বিশ্ব সম্পর্কে আরও অনেককিছু জানতে পারেন। তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, আগামী সপ্তাহে আবার কথা হবে,যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)