আগস্ট ৩১:গতকাল (সোমবার) মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন। এদিন বিকেলে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আফগানিস্তান সময় গতকাল রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে মার্কিন বাহিনীর সর্বশেষ বিমানটি সকল কর্মীদের নিয়ে কাবুল ত্যাগ করেছে।
তবে, গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহ আফগানিস্তানে বেসামরিক লোকজনদের হত্যার যে কালো ইতিহাস রচনা করেছে, তা কখনো মুছে যাবে না।
“বিস্ফোরণের সময় আমি তখন ঘটনাস্থলেই ছিলাম। তাই আমি কখনোই এ ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারব না,” বলছিলেন আহমাদ আফঘান। তিনি গত বৃহস্পতিবারের কাবুল বিমানবন্দরে আত্নঘাতী হামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) পাশতু ভাষা বিভাগের এক সাংবাদিককে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটে, তারপর মার্কিন সৈন্যরা লোকদের ভিড়ের দিকে গুলি ছুড়ে।সেনারা অত্যন্ত বর্বর, তারা সন্ত্রাসী।
ওই হামলায় কয়েক শ’ মানুষ প্রাণ হারায়।আহমাদ আফঘানসহ আরো কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে একাধিক মানুষ মারা যায় বিস্ফোরণ পরবর্তী মার্কিন সেনাদের নির্বিচারে গুলিতে।
আফগান রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিওয়াদ জাজাই জানান, “আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেসমরিক লোকদের আহত ও নিহত করেছে। তাদের উপর আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধ। তাদের অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত।”
যুক্তরাষ্ট্র আফগান যুদ্ধ শুরুর পর ইতোমধ্যে ২০ বছর পার হয়েছে।গত ২০ বছরে দেশটির অনেক বেসামারিক লোকদের গুলি করে ও যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে মার্কিন বাহিনী । পরবর্তীতে তারা এসব বর্বরোচিত হত্যাকান্ডকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে চালিয়ে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট উপাত্তে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পরিধি বাড়ানো হয়। এতে মার্কিন বাহিনী ও তার মিত্রদের হামলায় আফগান বেসামরিক লোকদের নিহতের পরিমাণ তার আগের চেয়ে ৩৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। শুধু ২০১৯ সালেই নিহত হয় প্রায় ৭০০ জন ।
সন্ত্রাবাদ দমনের অজুহাতে চালানো বিমান হামলা ও অন্যান্য সামরিক অভিযানে অনেক আফগান বেসামরিক লোক হতাহত হয়। ফলে দেশটির জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনেক ক্ষুব্ধ। আফগানিস্তানের হাসানখেল নামক গ্রামের একজন্য বাসিন্দা জানান, “২০১২ সালের ডিসেম্বরের কোনো এক সকালে আমাদের গ্রামের অধিবাসীরা আগের মতই মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। তবে মার্কিন বাহিনী মসজিদটিকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালালে ১০ জনেরও বেশি নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়। তাদের কেউই সন্ত্রাসী ছিল না। তারা ছিল একেবারে সাধারণ মানুষ।”
ওই হামলায় নিহতদের একজনের মা জানান, “আমার ছেলে একজন সাধারণ মানুষ ছিল। সে আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিল। মার্কিন বিমান বাহিনীর বোমায় সে নিহত হওয়ার পর আমাদের পরিবারে এখন শুধু বয়স্ক, নারী ও শিশু রয়েছে। উপার্জনক্ষম কেউ নেই। ফলে আমাদের জীবন অত্যন্ত দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। মার্কিনীরা খুবই জঘন্য।”
আফগান নাগরিক কুদরাত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজের স্বার্থের জন্য আফগানিস্তানে এসেছে। আফগানিস্তানের অনেক সামরিক গোষ্ঠীর পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। আফগানদের জীবন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন নয়। এজন্য তারা যেখানে সেখানে আক্রমণ চালায়। বেসামরিক লোকদেরও গুরুত্ব দেয়নি। তাই আফগানিস্তানের মানবিক দুর্যোগের দায় যুক্তরাষ্ট্রের।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে যুক্তরাষ্ট্র তার বাহিনী আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার শেষ করেছে। এ নিয়ে নেটিজেনরা সরব হয়ে ওঠেছে। তারা জানতে চাচ্ছে, আর কতো মানুষ মেরে যুক্তরাষ্ট্র শান্ত হবে?
গতকাল জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের স্থায়ী উপপ্রতিনিধি চেং সুয়াং বলেন, আফগানিস্তানের চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সাথে বিদেশি বাহিনীর দ্রুত ও বিশৃঙ্খল প্রত্যাহারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, চীন আশা করে, সংশ্লিষ্ট দেশ বুঝতে পারবে, প্রত্যাহার মানে দায়িত্ব শেষ নয়, বরং আত্ন-সমালোচনা ও নিজেদের সংশোধনের সূচনা।
চায়না মিডিয়া গ্রুপ(সিএমজি) থেকে আকাশ