২৯ অগাষ্ট রাতে আফগানিস্তানে আবার বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এদিন একটি রকেট কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে। এতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২ জন নিহত এবং তিন জন আহত হয়। এর আগে ২৬ অগাস্ট কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমাহামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয় ও ১৮ জন আহত হয়। তা ছাড়া, একি হামলায় কমপক্ষে ১৭০ জন বেসামরিক আফগানি মারা যায়।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালানো শুরু করে। আফগান তালিবানের বিরুদ্ধে মার্কিনিদের অভিযোগ ছিল, তারা ওসামা বিন লাদেনকে লুকিয়ে রেখেছে। তখন অবশ্য তালিবান বলেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি নাইন ইলেভেনের ঘটনার সঙ্গে লাদেনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারে, তবে তালিবান লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রমাণ না-দিয়ে হামলা শুরু করে।
২০ বছর পর ২০২১ সালের ১৫ অগাষ্ট রাতে প্রেসিডেন্টভবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর, আফগান তালিবানের নেতারা পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির ডেস্কে গিয়ে বসেন। এ দৃশ্যের অর্থ হলো: আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ তালিবানের সর্বাত্মক বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। কাবুল বিমানবন্দরে চলমান মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমানের সঙ্গে সঙ্গে আফগান নাগরিকদের দৌড়ানোর ছবিও বিশ্বকে হতবাক করেছে। ১৯ অগাষ্ট তালিবান ‘আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। অগাষ্টের শুরুতে আফগানিস্তানের প্রথম প্রদেশের রাজধানী তালিবানদের দখলে আসার পর মাত্র ১১ দিনে তালিবান কাবুল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে ও ঘটছে তা স্পষ্টভাবে আমাদেরকে বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিয়ম’ কী বা তাদের তথাকথিত ‘অর্ডার’ইব কী। যুক্তরাষ্ট্র একটি সার্বভৌম দেশে নির্বিচারে হস্তক্ষেপ করতে পারে, তবে সেদেশের মানুষের কষ্টের দায় নিতে নারাজ। বিশ্বের নিজের সুপার পাওয়ারের ইমেজ সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে যে কোনো দেশকে অপমান করতে পারে, দমন করতে পারে, জবরদস্তি করতে পারে এবং অন্য দেশকে ধমক দিতে পারে, কিন্তু এর জন্য কোনো মূল্য দিতে নারাজ। এমন বিশ্ব অর্ডারই যুক্তরাষ্ট্র চায়। বর্তমানে কে আর যুক্তরাষ্টের এমন অর্ডার বা নিয়মে বিশ্বাস করবে?
সন্ত্রাসবিরোধিতার নামে আফগানিস্তানে যুদ্ধ ২০ বছর ধরে চলেছে। অথচ এখন মার্কিন বাহিনী তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যাচ্ছে ও তাদের মিশন সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গত ২০ বছরে আফগানিস্তান যুদ্ধে মোট এক লাখ ৭৪ হাজার মানুষ নিহত এবং এক কোটিরও বেশি মানুষ শরণার্থী হয়েছে। ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকার’-এর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে অসংখ্য বেসামরিক পরিবারকে ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুত করেছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেখে যাওয়া জগাখিচুড়ি।
আফগানিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত গণতন্ত্রের অজুহাতে আফগানিস্তানে মতো অন্যান্য দেশে সামরিক হস্তক্ষেপের পুনরাবৃত্তি রোধ করা। (ছাই/আলিম)