চীনের খেলোয়াড় চু থিনের সংগ্রামী গল্প
2021-08-27 21:00:39

বন্ধুরা, চীনে একজন বিখ্যাত ভলিবল খেলোয়াড় রয়েছে। তার নাম চু থিন। তিনি হলেন চীনের জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক। আজ আমরা তার জীবনের সংগ্রামী গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

আজকের গল্প চীনের মধ্যাঞ্চলের একটি ছোট গ্রাম থেকে শুরু হয়েছে। গ্রামটির নাম হচ্ছে চু তা লৌ ছুন। গ্রামের একটি পারিবারে পাঁচজন মেয়ে রয়েছে। কোনো একদিন পরিবারটির তৃতীয় মেয়ে চু থিং স্কুলে যাওয়ার আগে তার বাবা তাকে বলেন, “মা, তুমি এখন ছোট নও, তোমার দুজন বড় বোন অনেক আগে কারখানায় কাজ করে পরিবারের জন্য টাকা উপার্জন করছে। তারা আমাকে জানিয়েছে, তাদের কারখানায় এখন নতুন কর্মচারী লাগবে। মা, আমরা হচ্ছি গ্রামবাসী.....”

বাবাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, মেয়েটি বিনয়ের সাথে তার বাবাকে বলে, “বাবা, আর বলবেন না। আমি বড় বোনদের মত হতে চাই না! আমি স্কুলে যেতে চাই, হাইস্কুল শেষে আমি বেইজিংয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চাই।” 

চু থিন কথা শেষ করে স্কুলের দিকে রওয়া হয়। 

সময় নদীর মতই বয়ে চলে। একলহমায় দুই বছর পার হয়ে যায়। চু থিনেরও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের লেখাপড়া প্রায় শেষ। একদিন তার স্কুলের একজন শিক্ষক একের পর এক সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন, পড়া লেখা করে তাদের কী কী পরিকল্পনা রয়েছে? চু থিন শিক্ষককে বলেন, “আগে আমি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই। আমার লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে চাই। কিন্তু আমার আব্বু চান, আমি যেন কারখানায় গিয়ে পরিবারের জন্য টাকা আয় করি। আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন? আমার কী করা উচিত?”

শিক্ষক বলেন, “আমার কাছে তোমার জন্য একটি উপায় আছে, কিন্তু তা একটু কষ্টকর। তুমি কি ভয় পাও?”
 
চু থিন বলেন, “স্যার, আমি একজন গ্রামের মেয়ে, পরিশ্রম, কষ্ট ও কোনো কিছুকেই আমি ভয় করি না।”

শিক্ষক বললেন, “ঠিক আছে, আমি তোমার জন্য কিছু একটি ব্যবস্থা করব। তোমার দুঃশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, কেমন?”

কয়েক দিন পর ওই শিক্ষক চু থিন ও তার বাবাকে নিয়ে ওই গ্রাম থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চৌ খো শহরের খেলাধুলা স্কুলে যান। সেখানে স্কুলের উপপ্রধান সিয়া লু হাই চু থিনের উচ্চতা দেখে তার অনেক খেলাধুলার পরীক্ষা নেন। পরীক্ষা শেষে তিনি চু থিনের শিক্ষককে বলেন, “ভাইযান, এ মেয়ে অনেক ভাল, তাকে আরো আগেই এখানে নিয়ে আসা উচিত ছিল।”

তারপর চু থিন চৌ খো শহরের খেলাধুলা স্কুলে ভর্তি হয়। প্রতিদিন প্রশিক্ষণ নিতে থাকে। মন দিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার কারণে তার রেকর্ড অনেক ভাল হয়। 

এক বছর পর চৌ খো শহরের খেলাধুলা স্কুলের শিক্ষক চু থিনকে হ্যনান প্রদেশের খেলাধুলা স্কুলে ভর্তির সুপারিশ করেন। কিন্তু সেখানে পড়তে ৩০ হাজার ইউয়ান টিউশন ফি দিতে হবে। 

ফলে একদিন সন্ধ্যায় চু থিন তার বাবাকে বলে, “বাবা, এ স্কুলে আমি যাব না, সেখানে অনেক বেশি খরচ, আমি যাব না।”
 
বাবা তাকে বলেন, “মা, আমার আগেরকার ধারণা একেবারে ভুল ছিল। তোমার শিক্ষকের সাহায্যে আমি এখন বুঝতে পেরেছি, সমস্যা নেই, টাকা আমি ব্যবস্থা করব।”

গ্রীষ্মের ছুটি শেষে চু থিন হ্য নান প্রদেশের খেলাধুলা স্কুলে ভলিবলের প্রশিক্ষন নিতে শুরু করে। প্রতিদিন সে প্রশিক্ষন নিতে থাকে। 

একদিন, চু থিনের বাবা তাকে ফোন করেন। ফোনে চু থিন কান্নাকাটি শুরু করে। বলতে থাকে, “আব্বু, আমি আর প্রশিক্ষন নিতে চাই না!”
তার বাবা তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন?চু থিন জানায়, “আব্বু, আমার অনেক কষ্ট হয়, অনেক ব্যাথা লাগে।”

এ কথা শুনার পর অনেক সময় ধরে তার বাবা চুপ করে থাকেন। তারপর তিনি বলেন, “মা ,আমরা খেলোয়াড় জীবনের এ কঠিন পথ বছাই করেছি, যত কষ্ট আর ব্যাথাই হোক না কেন, আমাদের এ পথে এগিয়ে যেতে হবেই, মা।”

চু থিনের টিউশন ফি জোগাড় করতে তার বাবা গ্রামে একটি রিক্সা ও সিএনজি মেরামতের দোকান খুলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ভারি যন্ত্র তার বাবার কোমড়ে পড়ে। ফলে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার সার্জারি হয়। চিকিত্সা ব্যয় মেটাতে তিনি এক লাখেরও বেশি ইউয়ান ঋণ নেন। কিন্তু চু থিনকে তার বাবা এ কথা বলেন নি।  

একদিন হঠাত্ করে চু থিন বাসায় ফিরে এসে দেখে তার বাবা বিছানায় শুয়ে আছেন। তাতে সে অনেক মর্মাহত হয়। তবে তার আম্মু তাকে জিজ্ঞেস করেন, সে কেন স্কুল থেকে ফিরে এসেছে? 

চু থিন জানায়, প্রশিক্ষণ খুবই কঠিন। তাই সে চুপিসারে বাসায় ফিরে এসেছে। তার মা তখন কান্না শুরু করেন। তিনি বলেন, “মা, তুমি হলে আমাদের পরিবারের একমাত্র আশা! তুমি তা জানো। তারপর তার মা তার বাবার কি হয়েছে সব চু থিনকে খুলে বলেন। 

চু থিন তা শুনার পর অনেক কান্না করে। সে বলে, “বাব ,আমি যদি ভলিবলে ভাল করতে না পারি, তাহলে আমি আপনার মেয়ে না।”
তারপর সে সর্বশক্তি দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। এবং সে ক্রমশ আরো ভাল করতে থাকে। অবশেষে চু থিন চীনের জাতীয় ভলিবল দলে জায়গা করে নেয়। 

২০১৬ সালে চু থিন ও সাথী একসাথে রিও অলিম্পিক গেমসে ভলিবল স্বর্ণপদক অর্জণ করে। সে দিন সন্ধ্যায় চু থিন চৌখো শহরের খেলাধুলা স্কুলের শিক্ষককে ওইচেটে বার্তা পাঠায়, “শিক্ষক, আমরা জয়ী হয়েছি।”
শিক্ষক তাকে বলেন, “তুমি এখন একজন ভালো খেলোয়াড়, কিন্তু একজন মহান খেলোয়ড় নও। আমি আশা করি, তুমি আরো অগ্রগতি করে লাং পিংয়ের মতো একজন মহান খেলোয়াড় হবে।” 

সেই চু থিন এবারের টোকিও অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রতিনিধি দলের পতাহা বহনের দায়িত্ব পালন করেছে। এটি আসলে অনেক গর্বের ব্যাপার। 
(আকাশ/এনাম/রুবি)