অগাস্ট ২৬: বিগত এক শ বছর ধরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির উন্নয়নের দর্শন ও সাফল্যের মূলমন্ত্র কী ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে চীনের কেন্দ্রীয় প্রচার মন্ত্রণালয় গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রকাশিত ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ঐতিহাসিক মিশন ও তার সাফল্য’ শীর্ষক গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনগণ থেকে উত্পত্তি, জনগণনির্ভরতা, ও জনগণের জন্য কাজ করা’ হচ্ছে সেই মূলমন্ত্র।
৪০ হাজার শব্দের এ দলিলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শত বছরের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। এতে সিপিসি’র শাসন-দর্শন, বাস্তব চর্চা এবং সাফল্যের কারণ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এ বইয়ে সিপিসি ও চীনা জনগণের সম্পর্কের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয় জানলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কোথা থেকে এসেছে, কোথায় যাবে এবং কেন চীনা সরকারের সমর্থনে হার এতো দিন ধরে বিভিন্ন সংস্থার জনমত জরিপে শীর্ষস্থানে রয়েছে, তা বোঝা যাবে।
চীনা জনগণের সামন্তবাদ ও বিদেশি আগ্রাসনবিরোধী তুমুল আন্দোলনের সময়, মার্ক্সবাদী রাজনৈতিক পার্টি হিসেবে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা হলো এ পার্টির মৌলিক বৈশিষ্ট। ‘জনগণের জন্য ভালো কাজ করতে থাকা এবং জনগণের জন্য খারাপ কাজকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করা’ ছিল চীনের বিপ্লব, নির্মাণ ও সংস্কারের বিভিন্ন সময়পর্বে সিপিসির মৌলিক নীতি। এখানেই সিপিসির কাজের লক্ষ্যের সঙ্গে জনগণের আশা মিলে যায়। বাস্তবে, সিপিসি প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকের ৫০ জন সদস্য থেকে বর্তমানের ৯.৫ কোটি সদস্যের প্রত্যেকেই জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা সাধারণ মানুষ। ‘তারা জনগণ থেকে আসে, কিন্তু প্রগতিশীল; আবার প্রগতিশীল হলেও তারা জনগণেরই একজন’। এ কারণে সিপিসি জনগণ থেকে অসীম শক্তি পেয়েছে এবং এ শক্তি দিয়ে একের পর এক কঠিনতা পার হয়ে একের পর এক সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।
বিদেশি আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে গণযুদ্ধে সিপিসি সাফল্য পেয়েছে এবং এ পার্টির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নয়াচীন। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর দেশ পুনর্গঠনে দলটি সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি গ্রহণ করে এবং ইতোমধ্যেই মডারেট স্বচ্ছল সমাজ গঠনে সক্ষম হয়। এতে সিপিসির নেতৃত্বে চীনা জনগণের প্রাণশক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রতিফলিত হয়; প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘জনগণই ইতিহাসের স্রষ্টা’।
মহামারী মোকাবিলায় চীনা জনগণের সচেতনতা ও ত্যাগ স্বীকারের সাহস সারা বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উহান সফরকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের উর্ধ্বতন পরামর্শক ব্রুস আইলওয়ার্ড বলেছিলেন, ‘উহানের রাস্তায় একজনও দেখা যাচ্ছে না, অথচ প্রত্যেকটি জানালার পেছনে মহামারী মোকাবিলায় সহযোগী উহান নাগরিক আছেন’। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস বলেছিলেন, ভাইরাস মোকাবিলায় চীনা জনগণ যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা মানবজাতির জন্য বিরাট অবদান।
ব্রিটেনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির শিক্ষাবিদ মার্টিন অ্যালব্রো মনে করেন, সিপিসির নেতৃত্বে চীনা জনগণের সাফল্যের মূল কারণ হলো, সিপিসি সবসময় পুরোপুরি জনগণের সেবা করাকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে থাকে। আসলেই, ‘কার জন্য?’ প্রশ্নটি একটি রাজনৈতিক দলের টাচস্টোন। শত বছরের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, সিপিসির সকল প্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো চীনা জনগণকে দেশ, সমাজ ও সম্পদের সত্যিকারের মালিক বানানো; তাদের জীবনকে আরও সুখের করা, সমৃদ্ধ করা।
চীনা জনগণের গড় বার্ষিক আয় ১০ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া, বিশ্বের বৃহত্তম ৪০ কোটি মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠা, বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক নিশ্চয়তাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর অন্যতম হওয়া—ইত্যাদি সাফল্যে সিপিসি’র শত বছরের সংগ্রামের মূল্য বোঝা যায়।
‘সিপিসির উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হয়েছে যে, জনগণের স্বার্থকে প্রথম স্থানে রাখলে যেন-কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব’। মার্কিন কমিউনিস্ট পার্টির যুগ্ম-সভাপতি রোসানা ক্যামব্রন চীন সফরের পর এ কথা বললেন। আসলেই, ‘জনগণ’ সিপিসির সদস্যদের রক্তে ও মনে মিশে তাদের জিনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে।
জনগণকে সবসময় মনের সর্বোচ্চ স্থানে রাখা হলো বিশ্বের বৃহত্তম পার্টি-সিপিসি’র সাফল্যের মূলমন্ত্র ও সুন্দর ভবিষ্যতের প্রাণশক্তি। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সিপিসি ও চীনা জনগণকে বিছিন্ন করার যে-কোনো অপচেষ্টা বিফল হবে; চীনা জনগণ কখনও সিপিসি-র নেতৃত্বকে পরিত্যাগ করবে না। (ইয়াং/আলিম/ছাই)