সংবাদ পর্যালোচনা জাপান যদি দূষিত পানি সমুদ্রে ছাড়ে, তবে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষতিপূরণ দাবির অধিকার থাকবে: সিএমজি সম্পাদকীয়
2021-08-26 14:17:58

সংবাদ পর্যালোচনা জাপান যদি দূষিত পানি সমুদ্রে ছাড়ে, তবে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষতিপূরণ দাবির অধিকার থাকবে: সিএমজি সম্পাদকীয়_fororder_0826-1

সংবাদ পর্যালোচনা জাপান যদি দূষিত পানি সমুদ্রে ছাড়ে, তবে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষতিপূরণ দাবির অধিকার থাকবে: সিএমজি সম্পাদকীয়_fororder_0826-2

অগাস্ট ২৬: জাপানের সংবাদমাধ্যম গত মঙ্গলবার জানায়, জাপান সরকার ও টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ‘সামুদ্রিক টানেলের মাধ্যমে ফুকুশিমা পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের দূষিত বর্জ্যপানি নিকটবর্তী সমুদ্রে ছাড়া হবে’। এভাবে দূষিত পানি সমুদ্রে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।  

যদি খবর সত্যি হয়, তবে বলতেই হবে যে, এটা বৈশ্বিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় দুঃসংবাদ। জাপান সরকার দেশি-বিদেশি বিরোধিতা উপেক্ষা করে, একপক্ষীয়ভাবে, সারা বিশ্বের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে চাইছে।  সেক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো এবং বিশ্বের সব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশের জাপানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবির অধিকার থাকবে।

গত এপ্রিল মাসে জাপান সরকার দুই বছর পর সমুদ্রে পারমাণিবক বর্জ্যপানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এ ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সমাজ এর বিরোধিতা ও নিন্দা জানাতে শুরু করে। জনমতের চাপের সামনে জাপান সরকার একদিকে দূষিত পানির ক্ষতির কথা অস্বীকার করে, অন্যদিকে সহযোগিতা করার ভুয়া ইঙ্গিত দেয়। দেশটি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার তদন্তদলকে এক বছরের মধ্যে দূষিত পানির নিরাপত্তা মূল্যায়নের আমন্ত্রণও জানায়।

 

কিন্তু বাস্তবে এটা শুধু নিজের আসল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটা কৌশল মাত্র। জাপানি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, জাপান সরকার দূষিত পানি সমুদ্রে ছাড়ার সময়সূচি অনুযায়ী সামনে এগুচ্ছে। অন্য কথায়, সারা বিশ্ব বিরোধিতা করলেও, জাপান দূষিত পানি সমুদ্রে ছাড়বেই ছাড়বে। তাতে জাপানের স্বার্থপরতা ফুটে ওঠে।

জাপানের জানা উচিত, ফুকুশিমার দূষিত বর্জ্যপানি সমুদ্রে ছাড়ার বিষয়টি শুধু তার একার বিষয় নয়; নিজের মত্স শিল্পে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো ব্যাপারও নয়। জার্মানির সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, ফুকুশিমার পাশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সমুদ্র স্রোত থাকার কারণে, দূষিত পানি ছাড়লে ৫৭ দিনের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরের অধিকাংশ এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়বে এবং ১০ বছরের মধ্যে তা সারা বিশ্বের সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়বে। পরমাণু বিশেষজ্ঞরা জানান, এ দূষিত পানির মধ্যে থাকা কার্বন-১৪ পদার্থ পরবর্তী কয়েক হাজার বছরের মধ্যে মানুষের জিনে মারাত্মক নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

বস্তুত, ফুকুশিমার দূষিত পানির ব্যবস্থাপনা সারা বিশ্বের সামুদ্রিক পরিবেশ এবং বিভিন্ন দেশের জনগণের স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত বিষয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে আলোচনা ছাড়া জাপান এ ব্যাপারে একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যদি জাপান তেমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে, তবে তার কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে পারে বিভিন্ন দেশ।

‘জাতিসংঘ সমুদ্র কনভেনশেন’ অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব আছে। কনভেনশনের ২৩৫ ধারায় স্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘সকল দেশের উচিত নিজের সমুদ্রসীমায় গৃহীত কার্যক্রম যেন অন্য দেশের ক্ষতি না-করে তা নিশ্চিত করা। এটা সকল দেশের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।’ জাপান এ কনভেনশন স্বাক্ষর করেছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব তাকেও পালন করতে হবে।

বিশ্বে এখন পর্যন্ত শুধু জাপানই পারমাণবিক অস্ত্রের শিকার হয়েছে। সুতরাং পারমাণিক বর্জ্যের ক্ষতি সম্পর্কে দেশটির ভালো ধারণা থাকার কথা। কিন্তু ফুকুশিমার বর্জ্যপানি নিয়ে দেশটি এখন পর্যন্ত যে আচরণ দেখিয়েছে, তা দায়িত্বশীল আচরণ নয়। এভাবে চলতে থাকলে, আন্তর্জাতিক আইন জাপানকে শিক্ষা দেবে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)