আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫
2021-08-21 17:29:53

 

নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও দৃষ্টিভঙ্গী আশংকাজনক

১. জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফারাহানা হাফিজের সাক্ষাৎকার

২. বিয়েতে আগ্রহ হারাচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম

৩.গান

৪. হংকং লিজেন্ড

৫. ইউগুর

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান থেকে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।

আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সব সময় কথা বলি নারীর সাফল্য,  সমস্যা, সম্ভাবনা, সংকট নিয়ে। সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী নারীর অগ্রযাত্রাকে প্রভাবিত করে। নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী যেমন তাকে জীবনের পথে এগিয়ে দেয় তেমনি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী তার চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে।

সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এখন আমরা কথা বলছি জেন্ডার স্পেশালিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী ফারহানা হাফিজের সঙ্গে।

নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও দৃষ্টিভঙ্গী আশংকাজনক-ফারহানা হাফিজ, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ

আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫_fororder_funv1

আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫_fororder_funv2সাক্ষাৎকার:

ফারহানা হাফিজ বলেন, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী নির্ভর করে নারীর শ্রেণী, পেশা, অবস্থানের উপর। যেমন শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীকে সমাজ যেভাবে দেখে একজন গ্রামীণ নারীকে বা প্রান্তিক অবস্থানের নারীকে সেভাবে দেখে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনও হয়েছে। শৈশবে তিনি দেখেছেন যে নারীর অনেক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল। যেমন, স্বাস্থ্যসেবা। তখন নারী অনেক পেশায় প্রবেশ করতে পারতো না। সেদিক থেকে সমাজ অনেক এগিয়ে গেছে। নারীরা এখন সব পেশাতেই প্রবেশ করছে এবং সফল হচ্ছে।

কিন্তু বিপরীতক্রমে তিনি বর্তমানে দেখছেন নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। একধরনের বিদ্বেষমূলক মনোভাবও দেখা যাচ্ছে। তারমতে ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দেখতে চায়। যেমন, সমাজ চায় নারী কখনও প্রশ্ন করবে না, নিজের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হবে না, তার প্রতি কৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না। তাহলে সেই নারী ‘ভালো নারী’ হিসেবে পরিচিত হবে। আর নারী যদি নিজের ইচ্ছা মতো জীবন যাপন করতে চায়, নিজের শরীর বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে সমাজ তাকে সহ্য করবে না, তার প্রতি সহিংস হয়ে উঠবে।’ বাংলাদেশে সম্প্রতি চিত্রনায়িকা ও মডেলদের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং সে বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী বিষয়ে তিনি মনে করেন, কেউ যদি অপরাধী হয় তাহলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আইন তার নিজের গতিতে চলবে। কিন্তু একই অপরাধ পুরুষ করলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী ও নারী করলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী একরকম থাকে না- এটা বৈষম্য। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীকে ব্যবহার করে গণমাধ্যম এক ধরনের মিডিয়া ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে ফেলে। নারীর চরিত্র হনন এবং তার প্রতি বিদ্বেষমূলক যে প্রচারণা সেটা খুব ভয়ংকর। ‘নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও দৃষ্টিভঙ্গী আশংকাজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।সেটা অবশ্যই নারীর উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্ত করে। এই বিদ্বেষমূলক ভূমিকা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে চাই সমাজের অগ্রসর চিন্তার বিকাশ।  

বিয়েতে আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম

আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫_fororder_funv3

সাম্প্রতিক কিছু সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে , চীনে তরুণ প্রজন্ম বিয়ের ব্যাপারে কিছুটা  আগ্রহ হারাচ্ছে। তরুণীরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রতি বেশি উৎসাহিত বোধ করছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসে, তারা বিয়েটাকে অনেক ক্ষেত্রে বোঝা  মনে করছে এবং নির্ভার থাকতেই বেশি পছন্দ করছে। 

চীনের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তনের পাশাপাশি তাদের মনমানসিকতারও পরিবর্তন হচ্ছে।  বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম স্বাধীন জীবন যাপনকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। স্বাধীন জীবনযাপনকেই তরুণ প্রজন্ম বেশি উপভোগ করায় বিয়ের প্রতি তাদের উৎসাহ কমে যাচ্ছে।  তারা অনেক ক্ষেত্রে বিয়েটাকে অতিরিক্ত দায়বদ্ধতা মনে করছেন। এমনকি স্বাধীনতা কমে যাওয়া্র শঙ্কা থেকেও তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন।

মিনিস্ট্রি অব সিভিল অ্যাফেয়ার্সের সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালের পর থেকে বিয়ের হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বিয়ের প্রতি তরুণ প্রজন্মের উৎসাহ কম। প্রেম এবং রোমান্সের প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রেই তারা বিয়ে করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। এরমধ্যে মেয়েদের হারই বেশি।   ২০২০ সালে ৮. ১৩ মিলিয়ন নারী বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন।  ২০১৩ সালে যার সংখ্যা ছিল ১৩.৪৭ মিলিয়ন।  এক দিকে বিয়ের হার যেমন কমছে অন্যদিকে বিবাহ বিচ্ছেদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।  গেল বছর ৩ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন দম্পতির উপর চালানো এক গবেষণায় এটি উঠে আসে।   বেশিভাগ তরুণীরা প্রেমে উদ্বুদ্ধ হলেও বিয়েতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।   

স্টেট কাউন্সিল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ রেন চিপিং -এর অধীনে একটি গবেষণা দলের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মেয়েরা সাধারণত  ২৫ থেকে ২৯বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করে।  নিজেদেরকে আকর্ষণীয় করতে এবং সম্পদ বৃদ্ধি করতে কঠোর পরিশ্রম করে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। 

সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনবো  শিল্পী  জামিয়াং দোলমার কণ্ঠে একটি রোমান্টিক গান। এখানে প্লাম ব্লোজম বা প্লাম ফুল ফোটার কথা বলা হয়েছে।

আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫_fororder_funv8

 

খেলাধুলা, ক্রীড়া শৈলী, শরীরচর্চা চীনে খুব জনপ্রিয়। চীনের যুবসমাজ থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদরা এসেছেন। নারী –পুরুষ নির্বিশেষে চীনের সমাজে ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহ রয়েছে। এখন আমরা শুনবো হংকং লিজেন্ড ক্রীড়াবিদ সারাহ লির সম্পর্কে।

হংকং লিজেন্ড ক্রীড়াবিদ সারাহ লি

আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫_fororder_funv5

সদ্য সমাপ্ত টোকিও অলিম্পিকে চীনের ক্রীড়াবিদ সারাহ লি ওয়াই জে’র ব্রোঞ্জ পদক জয় হংকংবাসীকে আনন্দে উদ্বেল করেছে। কারণ সারাহ লিকে হংকংবাসী ‘সাইক্লিং গডেস’ নামে ডেকে থাকেন।

৩৪ বছর বয়সী সারাহ লি একজন কৃতী সাইকেল চালক। তিনি ২০১৩ ও ২০১৯ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এশিয়ান গেমসে ২০১০, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের আসরে বিভিন্ন ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জিতেছেন। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকেও উইমেন’স কেইরিন ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জয় করেন।

 সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় চীনের ন্যাশনাল গেমসের আসরেও অংশগ্রহণ করবেন সারাহ লি।

১৯৮৭ সালের ১২ মে হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করা লি একজন প্রফেশনাল ট্র্যাক সাইক্লিস্ট। ২০০৪ সালে তিনি একজন ফুলটাইম অ্যাথলিট হন। 

শৈশব থেকেই বিভিন্ন ক্রীড়ায় পারদর্শিতা দেখিয়ে হংকংয়ের যুব সমাজে জনপ্রিয়তা পান লি। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ এই নারী সাইক্লিস্ট এখন চীনের তরুণ সাইকেল চালকদের মধ্যে বিশেষ করে নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে অনুকরণীয় এক আইডল।

 

চীনের একটি ক্ষুদ্র জাতি হলো ইউগুর। এরা হলুদ উইগুর নামেও পরিচিত। উইগুর জাতির সঙ্গে ইউগুর জাতির ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। এই জাতির ঐতিহ্য রক্ষায় একজন নারী কিভাবে অবদান রাখছেন শুনুন সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন

ঐতিহ্য ধরে রাখছেন সংগ্রাহক সুইলিং

আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫_fororder_funv6

আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫_fororder_funv7

চীনের কানসু প্রদেশে বাস করে ইউগুর জাতির মানুষ। এই জাতির লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। বলা হয়ে থাকে তুর্কি ও মঙ্গোল জাতির সংমিশ্রণে ইউগুর জাতির উৎপত্তি যারা অধিকাংশই তিব্বতি বৌদ্ধ। এদের রয়েছে দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ লোকজ ঐতিহ্য। এই লোকজ ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন এই জাতির একজন প্রবীণ নারী খ সুইলিং। ঐতিহ্যবাহী শিল্প সামগ্রীর সংগ্রাহক হিসেবে সারা চীনে তিনি সুপরিচিত।

৬০ বছর বয়সী সুইলিং তার জাতির ঐতিহ্যবাহী শিল্প সামগ্রী সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছেন সংগ্রহশালা। কিন্তু অনেক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তিনি এখান থেকে কোন শিল্পসামগ্রী বিক্রি করেন না।

তিনি বলেন, ‘ইউগুররা মূলত কানসু প্রদেশে বসবাস করে। আমাদের কোন লিখিত ভাষা নেই। তাই আমাদের রীতিনীতিগুলো ধরে রাখা বেশ কঠিন। আমি যদি এগুলো বিক্রি করি তাহলে পরবর্তি প্রজন্ম কিভাবে আমাদের সংস্কৃতি বিষয়ে জানতে পারবে?’

তিনি ১৪ বছর বয়স থেকে তার জাতির শিল্প সামগ্রী সংগ্রহ করছেন। নিজের উপার্জনের একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন এই কাজে। সুইলিং একজন প্রতিভাবান শিল্পীও বটে। শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কারও জয় করেছেন। নকশী কাজ দিয়ে তার সংগ্রহের সুচনা। আবার তিনি নিজেও নকশী কাজে পারদর্শী। তার জাতির নকশী কাজের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন এবং সেটিকে পরবর্তি প্রজন্মের কাছে পৌছেও দিচ্ছেন। তিনি সংগ্রহ করেছেন ইউগুর লোকজ পুতুল, নকশী কাজ, ও নানা রকম শিল্পসামগ্রী যার মূল্য ১.৭ মিলিয়ন ইউয়ান।খ সুইলিং এভাবেই তার জাতির ঐতিহ্য ধরে রাখার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে চলেছেন ও অন্যদের সামনেও স্থাপন করছেন অনুস্মরণীয় দৃষ্টান্ত।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

বিয়েতে আগ্রহ হারাচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

ঐতিহ্য ধরে রাখছেন সংগ্রাহক সুইলিং এবং হংকং লিজেন্ড ক্রীড়াবিদ সারাহ লি বিষয়ক প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা:  রওজায়ে জাবিদা ঐশী