দেহঘড়ি পর্ব-৩১
2021-08-20 19:58:02

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন নিয়ে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’ ।

## স্বাস্থ্য প্রতিবেদন

করোনাভাইরাসের যৌথ টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশ

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng

ছবি: সিএমজি বাংলা

প্রথম বারের মতো যৌথ টিকা উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে চীনের সিনোফার্ম, বাংলাদেশের স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। এ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিকে বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় এই ঐতিহাসিক চুক্তি। মহামারি মোকাবিলায় উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতেই টিকা উৎপাদনের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।

টিকা উৎপাদন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ইন্সেপ্টার চেয়ারম্যান এবং চীনের ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানি ও সিনোফার্মের প্রেসিডেন্ট।

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng1

চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং

ছবি: সিএমজি বাংলা

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ টিকা উৎপাদনে যেতে পেরে পেরে চীন আনন্দিত। তবে চ্যালেঞ্জ রয়েছে উৎপাদন পরবর্তী বিতরণ ব্যবস্থায়। পুরো কার্যক্রম সফল করতে সবাইকে আরও উদ্যমী হওয়ার আহবান জানান চীনা রাষ্ট্রদূত।

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng2

লি জিমিং , ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত

ছবি: সিএমজি বাংলা

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যৌথ টিকা উৎপাদনে যুগান্তকারী এ উদ্যোগ চীন বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে প্রয়োজন প্রায় ২৬ কোটি টিকা।

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng3

জাহিদ মালেক, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি: সিএমজি বাংলা

কিন্তু সবার প্রশ্ন, কবে শুরু এ কার্যক্রম? এ নিয়ে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান হাসনিন মুক্তাদিরের সঙ্গে কথা বলেছে চীন আন্তর্জাতিক বেতার। তিনি জানান, মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব উৎপাদনে যাবেন তারা।

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng4

ইনসেপ্টা ভ্যাক্সিন লিমিটেড

ছবি: ওয়েবসাইট

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা, যেন কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের টিকা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে তদারকি করবে সরকার। পাশাপাশি চীন থেকে টিকা তৈরির কাঁচামাল আসা যেন অব্যাহত থাকে সে ব্যাপারে সব পক্ষকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহবান জানান তারা। -

অভি/রহমান

 

## বিশেষ সাক্ষাৎকার

 

যৌথ টিকা উৎপাদন সফল হলে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে বাংলাদেশ

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng5

করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন নিয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রেক্ষাপটে টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও স্বনির্ভরতার সম্ভবনা নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুর রহমান অভি।

##হেল্‌থ বুলেটিন

বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম: মঙ্গলবার প্রথম ডোজ নেওয়া ৯৭ শতাংশই  সিনোফার্মের

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng6

বাংলাদেশে বর্তমানে যারা প্রথমবারের মতো টিকা নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশকেই দেওয়া হচ্ছে চীনের টিকা। গেল কয়েকদিন ধরে দেশে চলমান টিকা কার্যক্রম অনেকটাই নির্ভর করছে চীনে উৎপাদিত টিকার উপর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত মঙ্গলবার সারাদেশে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজারই পেয়েছেন সিনোফার্মের টিকা। সে হিসেবে নিবন্ধন করা ৯৭ শতাংশ মানুষই নিয়েছেন চীনা টিকা।

রাজনীতি না করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে কোভিডের উৎস বের করার আহ্বান

পাকিস্তানের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর উচিত কোভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে রাজনীতি না করে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রকৃত উৎস খুঁজে বের করা। ইসলামাবাদ-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ মেহমুদ উল হাসান খান বলেন, করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম ধাপের গবেষণায় চীন সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করেছে।

ডেল্টার চেয়েও ভয়ংকর ল্যাম্বডা: বিসিএসআইআর

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng7

করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পর বাংলাদেশে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পেয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ -- বিসিএসআইআর। ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট ল্যাটিন আমেরিকান দেশ পেরুর ভ্যারিয়েন্ট হিসেবেও পরিচিত।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মার্চ মাসে সংগ্রহ করা নমুনায় রাজধানীর ৪৯ বছর বয়সী একজন নারীর শরীরে সিকোয়েন্সিং করে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়। গবেষকরা বলছেন, পেরু থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। পেরুতে করোনাভাইরাস শনাক্তের ৮১ শতাংশই ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি সংক্রামক বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।তানজিদ/রহমান

 

## কী খাবো, কী খাবো না

শেষ নেই ডুমুরের গুণের

ডুমুর একটি পবিত্র ফল ইসলামসহ বেশ কয়েকটি ধর্মে। এ ফলের রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। বর্তমানে এ ফলটি বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশে। ডুমুরে থাকে ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ফল নিয়মিত খেলে বেশ কয়েকটি রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচা যায়।

দেহঘড়ি পর্ব-৩১_fororder_sheng8

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে এবং সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। নিয়মিত ডুমুর খেলে এ দুটি খনিজ পদার্থের ভারসাম্য বজায় থাকে। ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে উচ্চ রক্তচাপ।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: ডায়াবেটিসের মহৌষধ ডুমুর। ফলের পাশাপাশি ডুমুরের পাতাও উপকারী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ইনসুলিন নিতে হয়, তারা নিয়মিত ডুমুর খেলে ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ কমানো যায়।

হাড় মজবুত রাখে: ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। একটা শুকনো ডুমুর থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এটি হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে এবং হাড়কে ভঙ্গুর হয়ে যাবার হাত থেকে বাঁচায়।

রক্তশূন্যতা দূর করে: শরীরে রক্তশূন্যতা দূর করে ডুমুর। কারণ এতে থাকে উচ্চ মাত্রায় আয়রন বা লৌহ। রক্তশূন্যতা দূর করতে বেশি কার্যকর শুকনো ডুমুর। একটা শুকনো ডুমুর থেকেই ২ শতাংশ পর্যন্ত আয়রন পাওয়া যায়। তাই যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছে, তাদের উচিৎ নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় ডুমুর রাখা।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: স্তন ক্যান্সার দুনিয়াজুড়ে একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ডুমুর বাঁচাতে পারে এ সমস্যা থেকে। কারণ ডুমুরে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। আবার কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও ফ্রি র্যা ডিকেলসগুলো নষ্ট করার মাধ্যমে সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখে ডুমুর।

শারীরিক শক্তি বাড়ায়: ডুমুরে থাকে জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়ামের মতো কিছু প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। শারীরিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এসব উপাদান। যৌনশক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে এ উপাদানগুলো । 

ওজন কমায়: ডুমুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, যা ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এছাড়া এ ফলে থাকে প্রোটিন, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানের মাধ্যমে ওজন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: গবেষণা দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ডুমুর খায় তাদের হার্ট বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা অনেক কম হয়। তাই হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা ডুমুর রাখা উচিৎ। - রহমান

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।