অগাস্ট ১৯: চলতি বছর হলো তিব্বতে শান্তিপূর্ণ মুক্তির ৭০তম বার্ষিকী। ৭০ বছরে বিশেষ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে তিব্বতের অর্থনীতির লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। বাসিন্দাদের আয় দ্রুত গতিতে বেড়েছে। অর্থনীতি, সমাজ ও গণ-জীবিকা খাতে ঐতিহাসিক সংস্কার ঘটেছে এবং ঐতিহাসিক সাফল্যও অর্জিত হয়েছে। তিব্বতের দ্রুত উন্নতি অধিক থেকে অধিকতর তরুণ-তরুণীদের মন জয় করা ছাড়াও, অনেক যুব সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
২০১৮ সালে লুও সোং লাসা শহরে তিব্বতের প্রথম ক্রাফট ব্রুয়ারের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। কারখানাটি লাসা শহরের পূর্বে দাজি জেলায় অবস্থিত। দৈনন্দিন যাতায়াতের পথে লুসোং লাসার অবকাঠামোর পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। তিনি বলেন,
‘শুরুতে দাজি থেকে লাসা শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত রাস্তা ভালো ছিলো না। রাস্তায় অনেক গর্ত ছিলো। বৃষ্টি বা তুষারপাতের দিনগুলোতে অনেক সমস্যা হতো। এখন সেসব সমস্যা নেই; অনেক সুবিধাজনক। এখন দাজি থেকে লাসা পর্যন্ত যেতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগে। এই পরিবর্তন অনেক উল্লেখযোগ্য।’
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, লাসা শহরে একটি বিস্তৃত ও ত্রিমাত্রিক পরিবহন নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাস্তা, রেলপথ ও বিমানপথ। শহরের চারপাশের প্রধান রাস্তাগুলি সম্পূর্ণ তৈরি হয়েছে। শহরের রাস্তার মোট মাইলেজ ৫৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি। জেলা ও থানা এবং প্রশাসনিক গ্রামের রাস্তা বিস্তারের হার এবং যাত্রীবাহী গাড়ির কভারেজ শতভাগে পৌঁছেছে।
শুধু তাই নয়, ৭০ বছরে লাসার মাথাপিছু জিডিপি এবং গ্রামীণ বাসিন্দাদের মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয় জাতীয় গড় মান অতিক্রম করেছে এবং শহর ও জেলার বাসিন্দাদের মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয় জাতীয় গড় মানের কাছাকাছি পৌঁছেছে। শিল্পকাঠামো ক্রমাগত উন্নত হয়েছে, পর্যটন শিল্প শুরু থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিকশিত হচ্ছে। ২০২০ সালে লাসায় দেশি বিদেশি পর্যটকসংখ্যা ২ কোটি ৮০ হাজার পার্সন-টাইমস এবং পর্যটন খাতে ৩০১০ কোটি ইউয়ান আয় হয়েছে।
লুও সং বলেন, মূল ভূভাগ থেকে পর্যটকরা তাদের বিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ভোক্তা। তা ছাড়া, তারা স্থানীয় বাজার সমৃদ্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন,
‘উইচ্যাটে আমাদের প্রতিষ্ঠিত দোকানে ৯০ শতাংশেরও বেশি অর্ডার মুল ভূভাগ থেকে আসে। আমাদের স্থানীয় শিল্প- বিয়ারের মার্কেট শেয়ার এখানে অনেক বড়, ক্রাফট বিয়ার এখনও এখানে তেমন জনপ্রিয় নয়। তাই ভোক্তাদের আস্তে আস্তে গাইড ও লালনের জন্য আমাদের আরও বেশি সময় দিতে হবে।’
গত ৭০ বছরে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদ লাসাসহ তিব্বতের চমৎকার ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রক্ষা, উত্তরাধিকার ও প্রচারে অনেক অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
২২ বছর বয়সী সাংতানছিচি চলতি বছর শাংহাই চিয়াওথোং ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক পাস করেন। প্রাথমিক স্কুল থেকেই মুলভূভাগে লেখাপড়া করছেন তিনি। জন্মস্থান লাসার নতুন পরিবর্তন দেখে তিনি দারুণ আনন্দিত। তিনি বলেন,
‘আমি আশেপাশের কিছু শপিং মল বা সুবিধাজনক দোকান বা এসব ছোট ছোট বিষয় দেখে অর্থনৈতিক পরিবর্তন অনুভব করতে পারি। জীবন অনেক বেশি সহজ হয়েছে। এ ছাড়া, আমি কিছু ঐতিহ্যবাহী তিব্বতি সংস্কৃতির বিকাশও অনুভব করতে পারি।’
গ্রাজুয়েশনের আগ তিনি ভবিষ্যত চাকরি নিয়ে চিন্তা করতেন। শাংহাইয়ের মতো বড় শহরে বড় কোম্পানিতে কাজ করবে কিনা—তাই ভাবতেন। তবে অবশেষে তিনি জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিব্বতের সংস্কৃতি প্রচার করা এবং তিব্বতি শিল্প উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন তিনি। তিনি নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি-যোগ্যতা দিয়ে জন্মস্থানের সংস্কৃতি প্রচারে অবদান রাখতে চান।
উল্লেখ্য, নানা তিব্বতি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে অব্যাহতভাবে আরো উজ্জ্বল প্রাণশক্তি বিকশিত হচ্ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি দেশি বিদেশি পর্যটক তিব্বত ভ্রমণ করছেন। (লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)