সাজিদ রাজু, ঢাকা, আগস্ট ১৯: নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেই বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার উৎপাদন। এরই মধ্যে চীনের সিনোফার্ম, বাংলাদেশের স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। ইনসেপ্টা বলছে, মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব উৎপাদন শুরু করবেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের কী প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যে? বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে টিকা উৎপাদনের ফলে অনেকটা নিশ্চিত হলো মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালান মিন্টু। কয়েক সপ্তাহ আগেই করোনা টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন, তবে এখনো কোন তারিখ পাননি, পাননি ফিরতি এসএমএস। বলছিলেন, আগে কিছু ভুল ধারনায় দেরি হলেও এখন টিকা নিতে চান। তবে রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা না পাওয়ায় কিছুটা শঙ্কায় তিনি।
মো. মিন্টু মিয়া
“রেজিস্ট্রেশন করছি আরো এক সপ্তাহ আগে। এখনো টিকা দিতে পারি নাই। আমি একলা না, আমাদের বাসায় আরো অনেকেই করছে। কিন্তু এখনো কেউ দিতে পারে নাই। “
মিন্টু একা নন, সরকারি হিসেবেই ১৯ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ১৭ জন। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৬ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ২১৭ জন। অর্থাৎ টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে। আর পুরো দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী আছে টিকার আওতার বাইরে।
এমনই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেই করোনার টিকা উৎপাদনের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে ঢাকা-বেইজিং। চলতি সপ্তাহে ঢাকার মহাখালীতে কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্স অডিটোরিয়ামে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ইন্সেপ্টার চেয়ারম্যান এবং চীনের ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানি ও সিনোফার্মের প্রেসিডেন্ট। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি মাসে উৎপাদন করা যাবে দেড় কোটি ডোজ করোনা টিকা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার, ইনসেপ্টা ও চীনের সিনোফার্মের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে এ পরিমাণ টিকা উৎপাদনের কথা বলা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে প্রতি মাসে উৎপাদন করা হবে ৫০ লাখ ডোজ টিকা।
বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান হাসনিন মুক্তাদির। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কতোদিন লাগবে টিকা উৎপাদনে যেতে? তিনি জানান, দিনক্ষণ ঠিক না হলেও মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যতোটা দ্রুত সম্ভব উৎপাদনে যাবেন তারা।
হাসনিন মুক্তাদির
“রিগুলেটরি কিছু অ্যাপ্রোভাল আছে। ইনসেপ্টা যখন বানাবে, ইনসেপ্টার ফ্যাক্টরিতেই বানাবে। সেটা আমাদের দেশের ওষুধের জন্য যেমন রেগুলেটরি অ্যাপ্রোভাল যেমন নিতে হয়, এটার জন্যও সেরকমই নিতে হবে। সেটার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। যেহেতু এটা ইমার্জেন্সি ইস্যু সবকিছু অন্য প্রোডাক্টের মতো তো আর দেখা হবে না। আমরা যতো দ্রুত সম্ভব এগুলো কাজ শেষ করবো। মানে আজকে পারলে আজকে করবো এরকম ইমার্জেন্সি নিয়ে আমরা কাজটা করবো।“
টিকা উৎপাদনের জন্য ইনসেপ্টার অবকাঠামোগত প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ টিকার চাহিদা আছে তা খুব দ্রুতই পূরণ করা সম্ভব।
দেশের মাটিতে টিকা উৎপাদন শুরু হতে যাওয়ার এ পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্যে কতোটা প্রভাব ফেলবে? কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক উপাচার্য ড. লিয়াকত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে উৎপাদন না হলেও টিকা উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বাংলাদেশেই। তাই টিকা উৎপাদনের খরচ ও সময় দুটোই কমবে। করোনার এই সংকটকালে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেও মনে করেন তারা।
ড. লিয়াকত আলী
“এটি অত্যন্ত ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ, এই চুক্তির মাধ্যমে যেটি করা হয়েছে। ইতিবাচক এই কারণে যে, এই প্রসেসটাও তো চায়নাতে হলে, সেখান থেকে এখানে সরবরাহ করা, এটা একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তো বাংলাদেশে উৎপাদন করার যে সামর্থ্য রয়েছে সেটা কাজে লাগালে সার্বিকভাবে সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে খরচ স্বাভাবিকভাবে কমে আসবে। সুতরাং জনস্বার্থের দিক দিয়ে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যতো দ্রুত হবে,জনস্বাস্থ্য ততো দ্রুত হার্ড ইমিউনিটির দিকে যাবে।“
তবে আমদানি করা টিকার চেয়ে যেন কম খরচে সবার জন্য মান সম্মত টিকা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে সরকারকে তদারকি চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।