অগাস্ট ১৮: চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সূত্র জানিয়েছে, ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত, ‘চুরং’ রোভারটি মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশে ৯০ মঙ্গল দিন, অর্থাত্ পৃথিবীর প্রায় ৯২ দিন ধরে কাজ করেছে এবং মোট ৮৮৯ মিটার এলাকা ভ্রমণ করেছে। ফলে ১০ গিগাবাইট তথ্য পাওয়া গেছে। রোভার সফলভাবে নির্ধারিত পরিদর্শন মিশন সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে, রোভারটি ভাল অবস্থায় আছে, এখনও যন্ত্রটিতে স্থিতিশীল অবস্থা ও পর্যাপ্ত শক্তি রয়েছে। ভবিষ্যতে, এটি সম্প্রসারণ মিশন বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ ইউটোপিয়া সমভূমির প্রাচীন স্থল-সমুদ্রের সংযোগস্থলে যেতে পারবে। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
গত বছরের ২৩ জুলাই থিয়েনওয়েন-১ মহাকাশযান সাফল্যের সঙ্গে উত্ক্ষেপণ করা হয়। ২০২ দিন উড্ডয়নের পর মোট ৪৭.৫ কোটি কিলোমিটার যাত্রা করে এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে। গত ১৫ মে থিয়েনওয়েন-১ সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের দক্ষিণ ইউটোপিয়া সমভূমিতে অবতরণ করে। ৬ দিন পর ‘চুরং’ রোভার মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে অবতরণ করে এবং পর্যবেক্ষণ ও অন্বেষণ কাজ শুরু করে। যথাক্রমে ‘ল্যান্ডিং সাইট প্যানোরামা’ ছবি, ‘টপোগ্রাফি’ ফটো, ‘চাইনিজ ইমপ্রিন্ট’ এবং ‘ট্যুরিস্ট গ্রুপ ফটো’সহ অন্যান্য ইমেজ ম্যাপ পাঠিয়েছে রোভারটি।
চীনের প্রথম মঙ্গল অন্বেষণ মিশন হিসেবে ‘থিয়েনওয়েন -১’এর স্থল প্রয়োগ ব্যবস্থার প্রধান ডিজাইনার লিউ জিয়েন জুন বলেন, এখন পর্যন্ত টপোগ্রাফি, বস্তুগত গঠন, চৌম্বক ক্ষেত্র এবং আবহাওয়া-সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন,
‘যেমন, মঙ্গলগ্রহের বালির টিলা। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, এটি মূলত অর্ধচন্দ্রের মতো বালির টিলা। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের তোলা ছবিগুলো আরও উজ্জ্বল। এই উজ্জ্বলতার উৎস কোথায়? এসব বিষয় নিয়ে গবেষণার পর আমরা জানতে পারব, মঙ্গলের জলবায়ু কেমন, অতীতে মঙ্গলের জলবায়ুর পরিবর্তন কেমন হয়েছিল।’
এখন পর্যন্ত ‘চুরং’ রোভারটি মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশে ৯০ মঙ্গল দিন অবস্থান করছে এবং এর মাইলেজ প্রায় ৯০০ মিটার অতিক্রম করেছে। একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো সূর্যের ট্রানজিট ফেনোমেনন এক মাসেরও বেশি সময় পর ঘটবে। যার ফলে ‘থিয়েনওয়েন-১’ মহাকাশযানের সঙ্গে প্রায় ৫০ দিন ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হয়ে যাবে। সেই সময়ে অরবিটার এবং রোভার ‘সেইফ মোডে’ চলে যাবে এবং অনুসন্ধান কাজ বন্ধ করে দেবে। ‘থিয়েনওয়েন-১’ মার্স রোভারের প্রধান ডিজাইনার সুন জে চৌ বলেন,
‘সূর্যের ট্রানজিট ফেনোমেনন ঘটার সময় সূর্যের বিকিরিত শব্দের কারণে তারবিহীন যোগাযোগ-ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই মার্স রোভার আগামী এক মাস স্বনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকবে এবং নিয়মিত নিজের সুষ্ঠু অবস্থা বজায় রাখবে।’
আসন্ন চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বেইজিং এরোস্পেস ফ্লাইট কন্ট্রোল সেন্টারের প্রধান প্রকৌশলী ছুই সিও ফোং বলেন, ট্রানজিট সময় যত বাড়বে, প্রোবের ওপর তত বেশি প্রভাব পড়বে। এ ব্যাপারেও তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
তা ছাড়া, অরবিটারটি ‘চুরং’ মার্স রোভারের ওপর রিলে যোগাযোগ পরিষেবা প্রদান করে আসছে। এটি সূর্যের ট্রানজিট ঘটার পর একটি নতুন মিশন আনলক করবে। অর্থাৎ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রিমোট সেন্সিং মিশন কক্ষপথে প্রবেশ করে মঙ্গলগ্রহে রিমোট সেন্সিং অনুসন্ধান চালাবে। তখন, মঙ্গলগ্রহের রূপবিজ্ঞান এবং ভূতাত্ত্বিক কাঠামো, ভূপৃষ্ঠের উপাদান গঠন এবং মাটির ধরন বিতরণ, বায়ুমণ্ডলীয় আয়নমণ্ডল এবং মঙ্গলের স্পেস এনভায়রনমেন্ট ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া যাবে।
(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)