ভোগ্য বাজারের নতুন শক্তি
2021-08-18 16:14:18

গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা জেড প্রজন্ম অর্থাত্ ১৯৯৫-২০০৯ সালে জন্মগ্রহণকারীদের কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ভাবনা তুলে ধরেছি। আসলে শুধু কর্ম নয় এ প্রজন্মের মানুষ এখন ভোগ্য বাজারের নতুন এক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের ভোগের দক্ষতা, ধারণা ও পদ্ধতি দেশের ভোগ্য বাজার ও অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তাদের ভোগ সম্পর্কিত ভাবনা নিয়ে কথা বলব।

জেড প্রজন্ম হল ডিজিটাল বিশ্বের অধিবাসী। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবে তারা ভোগের আত্নকেন্দ্রিকতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। একটি পণ্যের সাংস্কৃতিক সংযোজিত মূল্য, ও সৃজনশীলতা তাদের আকর্ষণ করতে পারে। তাই পছন্দের পণ্য, ও ব্যক্তিগত সেবা তাদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। তবে আত্নকেন্দ্রিকতা মানে তাদের কোনো একজনের নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, বরং তারা নিজের শখ অনুযায়ী এক একটি গ্রুপ গড়ে তুলে এবং এ গ্রুপ যেমন সামাজিক যোগাযোগের তেমন ভোগের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে ইন্টারনেট হিপহপ, স্ট্রিট স্টাইল, রেট্রো স্টাইল, রক স্টাইলসহ নানা স্টাইল পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং সেসব স্টাইল অনুযায়ী যুবকরা বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দেয়। গ্রুপের মধ্যে তারা নিজেদের ধারণা তুলে ধরে, এবং ভোগ ও ব্যবহারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৪ শতাংশ জেড প্রজন্মের মানুষ যখন কিছু ক্রয় করে, তখন গ্রুপের মতামত তাদের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলে।

 

আত্নকেন্দ্রিকতা মানে তারা নিজের অনুভূতিকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং শখ ও আত্নকেন্দ্রিকতার জন্য পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে চায় তারা। তারা পণের প্যাকেজের ওপর গুরুত্ব দেয়। ৬০ শতাংশ ভোক্তা স্বীকার করে, সুন্দর প্যাকেটের পণ্য কিনতে চান তারা। নিজের সৌন্দর্যের জন্যও বেশি ব্যয় করতে ইচ্ছুক জেড প্রজন্ম। তাদের মধ্যে ৯২.৪ শতাংশ মেয়ে প্রসাধনী কিনছে। সহজ ও সুবিধাজনক জীবনযাপনও তাদের প্রিয়। তাই  ডিশওয়াশার, পরিষ্কার রোবট, রান্ন রোবটসহ নানা প্রযুক্তিগত পণ্য তারা বেশি ক্রয় করে।

 

জেড প্রজন্মের মানুষেরা নিজেদের শখের জন্য বেশি ব্যয় করে। শখের অভিজ্ঞতা অর্জনে তারা টাকা ব্যয় করে। যেমন, ট্রাম্পোলিন, রাফটিং, সার্ফিং, স্কাইডাইভিং, প্যারাগ্লাইডিংসহ ক্রীড়া এবং তৈলচিত্র, পুষ্পশিল্প, অপেরাসহ সাংস্কৃতিক আইটেম তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

 

জেড প্রজন্ম মানে ইন্টানেটের প্রজন্ম। অনলাইন কেনাকাটা,  সামাজিক যোগাযোগ তথ্যমাধ্যম ও ভ্রমণের মাধ্যমে কেনাকাটা করে তারা। যেমন, ৪০ শতাংশ জেড প্রজন্মের মানুষ দোকানে পোশাক দেখে, তবে অনলাইনে এ পোশাক ক্রয় করে। ৭০ শতাংশ জেড প্রজন্মের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ তথ্যমাধ্যম থেকে কেনাকাটা করে। এ হার গত শতাব্দীর ৯০ ও ৮০-এর দশকে জন্মগ্রহণকারীদের চেয়ে অনেক বেশি।

 

পাশাপাশি, জেড প্রজন্মও সবুজ ও নিম্ন কার্বনের ভোগকে গুরুত্ব দেয়। তারা জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং টেকসই পণ্য ও প্যাকেজিংয়ের জন্য টাকা ব্যয় করতে চায়। ৪৯.৩ শতাংশ জেড প্রজন্মের মানুষ নতুন ধরনের জ্বালানি চালিত গাড়ি বা হাইব্রিড গাড়ি কিনতে চায়, তা অন্য বয়সের মানুষদের তুলনায় অনেক বেশি।

 

 জেড প্রজন্মের মানুষ চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জন্মগ্রহণ করেছে। ভবিষ্যত নিয়ে তারা আশাবাদী। তারা ক্রেডিট পদ্ধতির মাধ্যমে ভোগ্যপণ্য ক্রয়ে অভ্যস্ত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট ৫৬ শতাংশ ২২-২৫ বছর বয়সীরা কিস্তি সেবা ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। আর ৩৬ শতাংশ মানুষ বাজেটের তুলনায় বেশি ব্যয় করছে এবং ৮৬.৬ শতাংশ জেড প্রজন্ম  ক্রেডিট পদ্ধতি ব্যবহার করছে। চল্লিশ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করে ক্রেডিট পদ্ধতি এক ধরনের স্মার্ট ভোগ পদ্ধতি।

 

জেড প্রজন্ম ভবিষ্যতে ভোগ্য বাজারের মূল শক্তি হবে। তাদের ভোগের ধারণা ও পদ্ধতি জেনে আরো আকর্ষণীয় এবং প্রতিযোগিতামূলক পণ্য তৈরি করতে হবে কোম্পানিগুলোকে। চীনের তরুণরা দেশকে বেশি ভালবাসে বলে আগামিতে দেশীয় ব্র্যান্ডের জন্য আরো বড় সুযোগ আসছে। (শিশির/এনাম/রুবি)