অগাস্ট ১৭: ১৫ অগাস্ট আফগানিস্তানের তালিবানরা রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা গোষ্ঠী সমর্থিত আফগান সরকারের দ্রুত পতন হয়। এই সময় মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের দাবি জানান। অন্যদিকে বাইডেন আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির দায় ট্রাম্পের উপর চাপান এবং ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান নির্মাণের জন্য সেখানে যায় নি। সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলে আরো বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে। তুমুল রাজনৈতিক কলহ এবং অন্যদের দোষারোপের পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতিকরা তাদের সত্যিকার চরিত্র প্রকাশ করেছেন এবং তিন কোটি আফগান জনগণকে একেবারে ভুলে গেছেন বলে মনে হয়।
মার্কিন রাজনীতিকরা আফগানিস্তানে বিগত ২০ বছরে কয়েক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে এবং দু’হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা সেখানে মারা যায়। তাদের লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানকে এশিয়ার কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করা। এখন তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক ঘাটতির কারণে আফগানিস্তান থেকে চলে গেছে এবং অসহায় আফগান জনগণের ওপর বিধ্বস্ত একটি দেশ চাপিয়ে দিয়েছে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরব্যাপী ‘সন্ত্রাসদমন’ যুদ্ধ আফগানিস্তানকে আসলে কী কী দিয়েছে?
নাম প্রকাশে-অনিচ্ছুক আফগান সাবেক মানবাধিকার কমিটির একজন সদস্য সিএমজি’র সাংবাদিককে বলেন, শুরুর দিকে আফগানিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অজুহাতে মার্কিন ও ন্যাটো সেনারা আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। এখন তারা চলে গেছে। আফগানিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে কি? উত্তর হলো- না। রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, সাম্প্রতিক যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আরো অনেক মানুষ চলতি গ্রীষ্মকালে বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
একজন আফগান বিশ্লেষক আহমাদুল্লাহ ওয়াজির সাংবাদিককে বলেন, সবাই জানেন ২০ বছর আগে মার্কিন বাহিনী সন্ত্রাস নির্মূলের অজুহাতে আফগানিস্তানে এসেছিল। ২০ বছর পর তারা বলছে, তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে আসলে সন্ত্রাসবাদ এখনও রয়ে গেছে। আল-কায়েদা, আইএস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন এই অঞ্চল এবং বিশ্বকে হুমকি দিচ্ছে। এখন বোঝা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এখানে এসেছিল। তারা সেই লক্ষ্য অর্জন করুক বা না-করুক, তারা এই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তবে, বর্তমান ও ভবিষ্যতে আফগানিস্তান ও এর আশেপাশের অঞ্চলে সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদের হুমকি যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে।
আফগান পণ্ডিত আহমাদ সাফি সংবাদদাতাকে বলেন, পাশতুন হলো আফগানিস্তানের বৃহত্তম জাতি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেই জাতির বিরোধিতা করতে গিয়ে অন্য জাতিগুলোকে উস্কানি দিয়েছে এবং আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানিতে আরো বেশি লোক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। আফগানিস্তান নিঃসন্দেহে যুদ্ধের ঘূর্ণিপাকে পড়ে গেছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। একটি দেশে নিরাপত্তা না থাকলে অর্থনীতি উন্নত হতে পারে না। অর্থনীতি উন্নত না হলে জনগণ আরো দরিদ্র হয়ে যায়। এটি একটি দুষ্ট চক্র। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের যুদ্ধ হলো দেশের দারিদ্র্যের মূল কারণ।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের ‘সন্ত্রাসদমন’ যুদ্ধ সে দেশকে আসলে কি দিয়েছে? পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। এরপর সেখানে ৩০ হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষ মার্কিন সেনাদের বোমা হামলাসহ নানা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আহত হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। শুধু তাই নয়, ২০ বছরে মার্কিন সেনারা নানা অপরাধ করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০ বছর ধরে আমেরিকানরা তাদের আধিপত্য দেখিয়েছিল, কিন্তু আফগানিস্তানে অবিরাম মানবাধিকারের মৃত্যু হয়েছে, যা ভীষণ বিব্রতকর!
(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)