মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বের শীর্ষ ব্যর্থ দেশ যুক্তরাষ্ট্র
2021-08-13 15:33:53

২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারি অব্যাহত থাকলেও চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল পুনরুদ্ধার বজায় রয়েছে। সারা বিশ্ব এতে নতুন সুযোগ পেয়েছে।

 

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হলে চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মহামারি প্রতিরোধে সহযোগিতা করার পাশাপাশি সহযোগিতা ও উন্মুক্তকরণের দরজা খুলে দিয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বার বার জোর দিয়ে বলে আসছেন, মহামারি নিয়ে রাজনীতি করা শুধুই বিভিন্ন দেশের অভিন্ন স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। চীন নিজ দেশে আরো উচ্চ মানের উন্মুক্ত ধরনের নতুন অর্থনৈতিক-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের জন্য আরো বেশি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

 

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ‘দাভোস কর্মসূচি’ সংলাপে সি চিন পিং বলেন, চীন সবসময় অর্থনীতির বিশ্বায়নকে সমর্থন করে, উন্মুক্তকরণের মৌলিক নীতিতে অবিচল থাকে। চীন অব্যাহতভাবে বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগের সুবিধা জোরদার করবে, উচ্চ মানের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ বাস্তবায়ন করবে।

 

প্রেসিডেন্ট সি আরো বলেন, নতুন যাত্রায়, আমাদের উচিত শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও উভয়ের কল্যাণের চেতনায়, স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতি মেনে চলা, শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া এবং মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা।

 

সিঙ্গাপুর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৫৬তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত ৯ আগস্ট চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেদেশের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

 

সি চিন পিং বলেন, প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর ধরে সিঙ্গাপুর তার  জনগণ ও দেশ নির্মাণ, ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে লক্ষ্যণীয় সফলতা অর্জন করেছে।

 

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মুখে চীন ও সিঙ্গাপুর হাতে হাত রেখে প্রতিরোধ করেছে এবং দুদেশের উচ্চ মানের সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে। তা এক দূরদর্শী, কৌশলগত এবং অনুকরণীয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

 

তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুরের সাথে সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেয় চীন এবং আমি আপনার সাথে দুদেশের সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে এগিয়ে নিতে চাই।”

 

মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বের শীর্ষ ব্যর্থ দেশ যুক্তরাষ্ট্র

মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বের শীর্ষ ব্যর্থ দেশ যুক্তরাষ্ট্র_fororder_src=http-%2F%2Fp2.itc.cn%2Fq_70%2Fimages03%2F20201011%2F9266e47da4a34d54b64ad8e87d227176.jpeg&refer=http-%2F%2Fp2.itc

কোভিড-১৯ মহামারি এখনো সারা বিশ্বে ছড়াচ্ছে। তবে কিছু কিছু মার্কিন গণমাধ্যম প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বের প্রথম স্থানে থাকার অপপ্রচার চালাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড-১৯ প্রতিরোধকাজের বাস্তবতা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন বেইজিংয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে বিশ্বের শীর্ষ ব্যর্থ দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নামটি তালিকার প্রথমে স্থান পেয়েছে।

 

 চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়, থাই হ্য ইন্সিটিটিউট, ও ইন্টালিজেনসিয়ার যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম? দেশটির কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বাস্তবতা’ শিরোনামে এই প্রতিবেদন। তেইশ হাজার শব্দের এই  প্রতিবেদনে রয়েছে পাঁচটি অধ্যায়। তাতে ২০টি বিষয়ের বিশদ আলোচনা স্থান পায়। তাতে নানা তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্থানে থাকার অপপ্রচারকে খন্ডন করা হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে ব্যাপক তথ্যউপাত্তের সাহায্যে প্রমাণিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বের শীর্ষ ব্যর্থ দেশ। যার ব্যর্থতার প্রত্যক্ষ কারণ হচ্ছে মার্কিন সরকারের কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, নীতি প্রণয়ন এবং উত্স অনুসন্ধানসহ নানা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের পরিপন্থী তত্পরতা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক পরিমাণের আক্রান্ত ও মৃতদের তথ্য আড়ালে রয়েছে মার্কিন অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক লড়াই। বিশেষ করে, দলীয় লড়াইয়ের কারণে কোভিড-১৯ মহামারির রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। যার ফলে যাদের প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা ছিলনা, তারাও প্রাণ হারিয়েছেন।

 

ইন্টালিজেনসিয়া একাডেমী ও চিনান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছেন থিং থিং এ দিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,‘যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ ব্যর্থতার দুইটি কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রথমত: যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ভারসাম্যহীন। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলীয় লড়াই, ফেডারেল সরকার ও স্থানীয় সরকারের লড়াই, এবং মার্কিন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প সরকার নিজের ব্যর্থতা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার কারণে মহামারি মোকাবিলা করতে জরুরি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। দ্বিতীয়ত, বিশ্বজুড়ে গণস্বাস্থ্য প্রশাসনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেনি যুক্তরাষ্ট্র। কেবল নিজেদের ব্যর্থতা ঢেকে রেখে অন্যকে দোষারোপ করেছে।”

 

 প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বের প্রর্থম ব্যর্থ দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রথম দোষারোপকারী দেশের মর্যাদাও লাভ করেছে! সেসঙ্গে মহামারি ছড়ানো, মহামারি নিয়ে দাঙ্গা ঘটা, নকল তথ্য সরবরাহ, এবং মহামারির উত্স অনুসন্ধানে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবেও প্রথম স্থান লাভের গৌরব অর্জন করেছে দেশটি!

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভাইরাস ছড়ানো রোধ না-করে অন্য দেশে মহামারির অবস্থা গুরুতর হতে দিয়েছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পরেই দুই কোটিরও বেশি মার্কিন নাগরিক অন্যান্য দেশে যায়। ফলে দেশটি কোভিড-১৯ ছড়ানোর দায় এড়াতে পারে না।

 

যুক্তরাষ্ট্রের দ্য এক্সিকিউটিভ ইন্টালিজেন্স রিভিউ ম্যাগাজিনের ওয়াশিংটন ব্যুরো চিফ উইলিয়াম জোস এক ভিডিও ভাষণে বলেন, করোনা ভাইরাসকে রাজনৈতিক যন্ত্র হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে চীনের উন্নয়ন এবং বিশ্বের উন্নয়নে চীনের অবদান ব্যাহত হয়।

তিনি বলেন,‘তারা চীনের উন্নয়ন রুখতে চায়। আন্তর্জাতিক সমাজে প্রশংসনীয় ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের বাস্তবায়নকে তারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়।  ট্রাম্প সরকার কথিত ‘ উহান থেকে করোনা’ ছড়িয়ে পড়ার ঘোষণা করেছে। তবে, বিশ্বব্যাপী উহানের আগেই করোনার উপস্থিতি ছিল। ট্রাম্প সরকারের কিছু কিছু কর্মকর্তা করোনা ভাইরাস উহানের জৈব পরীক্ষাগার থেকে’ বেরিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। উহানে সফর করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দল ও সেখানে কর্মরত বিদেশী গবেষকগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।”

 

চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোং ইয়াং ব্যাংকিং একাডেমীর নির্বাহী প্রধান  ও চীন-যুক্তরাষ্ট্র সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী মহাপরিচালক ওয়াং ওয়েন বলেন, এই প্রতিবেদন প্রকাশের লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড-১৯ প্রতিরোধকাজের দিকে  ফিরে তাকানো এবং তা থেকে ভবিষ্যত গঠন করা।

 

 তিনি বলেন, “আমরা উত্স অনুসন্ধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড-১৯ প্রতিরোধকাজের বাস্তবতা তুলে ধরেছি। কারণ তা বৈশ্বিক ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাদানুবাদ নয়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভাইরাস থেকে আরও বেশি মানুষকে রক্ষা করা।”