বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখু মুজিবুর রহমান ঊনিশ শো পঞ্চাশের দশকে দুইবার চীন সফর করেন। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে পিস কনফারেন্স অব দি এশিয়ান এন্ড প্যাসিফিক রিজিওন্স-এ পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তরুণ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো চীন সফর করেন। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মহান কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে গণ প্রজাতন্ত্রী চীন তাদের নতুন যাত্রা শুরু করে। সেই নবগঠিত সমাজতান্ত্রিক দেশটির আর্থ-সামাজিক জীবনের নব জাগরণ বঙ্গবন্ধুকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে। তিনি অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে গভীর ভাবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করা রাষ্ট্রের সমাজ সংস্কার ও অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ মূলক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন। সেই সময়ের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে তিনি ১৯৫৪ সালে কারাগারে রাজবন্দী থাকার সময়ে রচনা করেন।
১৯৫৭ সালে পূর্ব বাংলার শ্রমমন্ত্রী থাকা কালে পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি আরো একবার চীন সফর করেন। বঙ্গবন্ধু তার অসামান্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাজাত পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ এখানে লিপিবদ্ধ করেছেন তার সহজ সরল ও গতিশীল ভাষায়। তিনি চীনের একেবারে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন,কৃষক-শ্রমিকের শ্রমশক্তিতে বিস্মিত হয়েছেন এবং মুগ্ধ হয়েছেন চীনের সর্বস্তরের মানুষের দেশপ্রেমের গভীরতা দেখে। সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর রচনশৈলীর শক্তি, পর্যবেক্ষণের গভীরতাও পাঠককে মুগ্ধ করবে বৈকি।
এখানে চীন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘নয়াচীনের উন্নতি দেখে সত্যই আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। যদি দশ বৎসর তারা দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে গড়তে পারে তবে দেশের জনসাধারণের কোনো দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না, অশিক্ষা কুসংস্কার মুছে যাবে। এবং দুনিয়ার যে কোনো শক্তির সাথে তারা মোকাবেলা করতে পারবে সকল দিক থেকে। কারণ জাতিকে গড়ে তোলার যে প্রধান শক্তি জনসাধারণের মনোবল তা নয়াচীনের জনগণের মধ্যে আছে।’ সেই পঞ্চাশের দশকে করা এই বাণী যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে তা বর্তমানের চীনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির বইমেলায় বইটি প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি থেকে। বইটি শুধু ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেই অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ নয়, একই সঙ্গে এটি চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাইল ফলকও।
-শান্তা মারিয়া