দেহঘড়ি পর্ব-৩০
2021-08-13 18:37:55

‘দেহঘড়ি’র এ পর্ব আমরা সাজিয়েছি স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’ এবং সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ ।

## প্রতিবেদন

৬ কোটি টিকা উপহার দেবে কোভ্যাক্স, বাংলাদেশের প্রয়োজন আরও ২০ কোটি টিকা

 

দেহঘড়ি পর্ব-৩০_fororder_d1

বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় প্রায় ৬ কোটি ডোজ করোনার টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরের আগেই বেশ কয়েকটি চালানে টিকাগুলো দেশে আসবে বলে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান।

গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ‘কোভ্যাক্স কী পরিমাণ টিকা দেবে, কয়টি চালানে কোন দেশের টিকা আসবে তার একটা হিসেব বাংলাদেশ সরকারকে চিঠিতে জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যেই ছয় কোটি ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এই ছয় কোটি ডোজ টিকা পাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তবে, পরবর্তীতে কোভ্যাক্স থেকে টিকা নিতে চাইলে সরকারকে আর্থিক মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, টিকা নিতে এ পর্যন্ত আবেদন করেছেন ৩ কোটিরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা এসেছে দুই কোটি ৯০ লাখ।

দেহঘড়ি পর্ব-৩০_fororder_d2

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৩ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে, এজন্য প্রয়োজন ২৬ কোটি টিকা। সরকারি-বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, ৬ কোটি টিকা পাওয়ার পরও দেশের প্রয়োজন পড়বে আরও ২০ কোটি টিকা। 

ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে ৩টি নতুন উৎস উন্মোচন হয়। বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স, চীন ও রাশিয়া।

দরিদ্র দেশগুলোতে টিকাদান নিশ্চিতের বৈশ্বিক জোট গ্যাভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোভ্যাক্স ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশকে ১৯০ কোটি টিকা বিতরণ করতে চায়, যার মধ্যে বাংলাদেশ পাবে ৬ কোটি টিকা। 

 

দেহঘড়ি পর্ব-৩০_fororder_d3.jpg

 

এরই মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৫৫ লাখ টিকা আর ফাইজার পাঠিয়েছে ১ লাখ টিকা। চীনের সিনোফার্ম থেকে এসেছে ৩৪ লাখ ৭১ হাজার টিকা। জাপান উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে ১৬ লাখ টিকা। সব মিলিয়ে কোভ্যাক্স থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পেয়েছে ১ কোটি ৭ লক্ষ ১৫ হাজার টিকা। 

কোভ্যাক্স এখন পর্যন্ত ১১টি টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। এগুলোর মধ্যে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া চীনের সিনোভ্যাকের টিকাও কোভ্যাক্সের আওতায় পাবে বাংলাদেশ।

গণটিকাদান কার্যক্রমে সার্কভুক্ত সাতটি দেশের বাংলাদেশ অবস্থান পাঁচে।

ভাইরাসের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে টিকা নিতে আগ্রহী হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে শিগগিরই টিকার আওতায় আনা দরকার। তাই পর্যাপ্ত টিকার মজুদ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। - অভি/রহমান

 

 

 

##হেল্‌থ বুলেটিন

বাংলাদেশে একদিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ শতাধিক

দেহঘড়ি পর্ব-৩০_fororder_d4

বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসব রোগীর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮৮ জন এবং ঢাকার বাইরের ২৫ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০৭-এ। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে প্রায় ৪ হাজার।

সিনোফার্মের আরও ৬ কোটি ডোজ টিকা কিনবে বাংলাদেশ

চীনের সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার আরও ৬ কোটি ডোজ কিনবে বাংলাদেশ সরকার। গত বুধবার অনুষ্ঠিত ২৭তম সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন করে টিকার দাম বাড়েনি বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। এর আগে চীন থেকে সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা ইতোমধ্যে এসে পৌঁছেছে। এর বাইরে কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় আরও ১৭ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা এসেছে। আর বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশকে ১১ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছে চীন।

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক মৃত্যু ফের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দ্বিতীয়বারের মতো রেকর্ড ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ২৩ হাজার ১৬১ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২-এ।

১৯ আগস্ট থেকে চলবে শতভাগ গণপরিবহন, খুলছে পর্যটন-বিনোদনকেন্দ্র

১৯ আগস্ট থেকে ৫০ ভাগ ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট ও কমিউনিটি সেন্টার চালু রাখা যাবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।  বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১৯ আগস্ট থেকে সড়ক, রেল ও নৌ পথে সব ধরনের গণপরিবহণ চলাচল করতে পারবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি পালনে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১৯ দিন কঠোর লকডাউন শেষে ১১ই আগস্ট বিধি নিষেধ শিথিল করা হয়। - তানজিদ/রহমান

 

 

 

## কী খাবো, কী খাবো না

গুণে ভরা আমড়া

দেহঘড়ি পর্ব-৩০_fororder_d5

আমড়া বাংলাদেশে অত্যন্ত সহজলভ্য একটি ফল। সারাবছরই কম-বেশি এই ফলটি পাওয়া গেলেও এর প্রকৃত মৌসুম হচ্ছে জুলাই-আগস্ট। আমড়ার উপকারিতা ও গুণাগুণ অনেকেরই অজানা। এ ফলে থাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, কার্বোহাইড্রেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পেকটিন-জাতীয় আঁশ এবং অল্প পরিমাণে প্রোটিন। আমড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং মৌসুমী ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আসুন জেনে নেই আমড়ার উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে:

সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুঞ্জার বিরুদ্ধে লড়ে: সর্দি, কাশি ও জ্বর উপশমেও আমড়া অত্যন্ত কার্যকরী। বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা ছাড়াও আমড়া সর্দি, কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে, যার ফলে নানা সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায় আমড়া খেলে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আমড়ার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ও এর কার্যকারিতা নিয়ে ২০১০ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা দেখতে পান যে, আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যাকে তারা হার্টের ওষুধ রেমিপ্রিলের সাথে তুলনা করেন। গবেষণায় তারা দেখেন, আমড়া রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যার ফলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: আমড়া ভিটামিন-সি-এর ভালো উৎস। ভিটামিন-সি একটি অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিয়মিত আমড়া খেলে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির বিরুদ্ধেও শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়াই করে আমড়া।

রুচি বাড়ায়: অসুস্থ ব্যক্তি বা যারা বিভিন্ন কারণে মুখের স্বাদ হারিয়েছেন, তাদের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে আমড়ার দারুণ কার্যকর। আমড়া খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।

রক্তস্বল্পতা রোধ করে: আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন বা লৌহ থাকে, যা রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকরী। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও ঠিক রাখে।

বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: আমড়ায় থাকে পেকটিন-জাতীয় দ্রবণীয় ফাইবার বা আঁশ, যা পাকস্থলীর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। আর এর ফলে বদহজম, পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ থেকে বাঁচা যায়।

ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে: ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড়ের সমস্যা, মাংসপেশীর খিঁচুনিসহ নানা রোগ হতে পারে। তবে নিয়মিত আমড়া খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়।

ত্বক ভাল রাখে: ত্বকের ব্রণ কমাতে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখতে আমড়া দারুণ কার্যকর। আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে, যা ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে: আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন বা লৌহ থাকায় এটি রক্তস্বল্পতা রোধে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক পর্যায়ে রাখায় ভূমিকা পালন করে। - রহমান

 

 

 

 

 

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে।

দেহঘড়ি পর্ব-৩০_fororder_d6.jpg

বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বর মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রতিদিন গড়ে দুশোর বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় সংক্রমের হার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি রোগী। আর বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে প্রায় ১ হাজার রোগী।

ডেঙ্গুজ্বর একটি এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে, যাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত-প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।এ রোগ নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু সেলের রেজিস্ট্রার ইনচার্জ ডাক্তার ফারহানা আহমেদ।

 

  • দেহঘড়ি অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cnর মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।