বিশ্বের ধনকুবেররা আরও ভয়াবহ মহামারির আশঙ্কা করছেন; কিন্তু বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
2021-08-13 19:50:13

সম্প্রতি আমেরিকান ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট জোর দিয়ে বলেছেন যে, ভবিষ্যতে একটি নতুন মহামারী আসবে যা কোভিড-১৯ এর চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে। কারণ, এবারের মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মানুষ এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত না। এদিকে গত জানুয়ারিতে মার্কিন ধনকুবের বিল গেটস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, পরবর্তী মহামারী বর্তমান সময়ের চেয়েও ১০ গুণ খারাপ হতে পারে এবং মানবতা এ জন্য প্রস্তুত নয়। মার্কিন সমাজের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা কেন বার বার ভয়ঙ্কর মহামারির কথা বলছেন? এ বিষয়ে বিজ্ঞানী বা গবেষকদের ধারণা কি? চলুন তার জবাব খোঁজার চেষ্টা করি।

 

অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনবিসি-ত 'বাফেট অ্যান্ড মুঙ্গার: ওয়েলথ অফ উইজডম' শো চলাকালীন, বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইও মিস্টার বাফেট ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, "আরও একটি মহামারী হবে।"

তিনি বলেন, “আমরা জানি যে পারমাণবিক, রাসায়নিক, জৈবিক ও সাইবার হামলার হুমকি রয়েছে। এ সবগুলোরই ভয়ঙ্কর আশঙ্কা রয়েছে। "এটা মনে হয় না যে, মানবসমাজ এর কোনো একটি সমস্যা মোকাবিলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।"

ফোর্বস বিলিয়নিয়ারের তালিকায় নবম স্থানে থাকা এই ব্যবসায়ী, যিনি 'ওরাকল অব ওমাহা' নামে পরিচিত, তিনি সুস্পষ্ট করে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে তিনি প্রধান যে শিক্ষা পেয়েছেন তা হল- বিশ্ব (যে কোনো ধরনের) জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় একেবারেই প্রস্তুত না।

সাক্ষাৎকারে ৯০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী বলছিলেন, “আমি শিখেছি যে, মানুষ যতটা ধারণা করে তারা ততটা জানে না। (নতুন) মহামারীর সংক্রমণ দেখা যেতে পারে। ভবিষ্যতের সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সমাজ দক্ষ নয় এবং এমন ঘটনা ঘটবে- আজ অথবা কাল।"

একই অনুষ্ঠানে, ব্যবসায়ী নিশ্চিত করেন যে, কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক পরিণতি ছোট ব্যবসা ও উদ্যোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, "লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসা ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"

 

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও মার্কিন ধনকুবের বিল গেটস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, আসন্ন আরেকটি মহামারী বর্তমান মহামারির চেয়েও ১০ গুণ খারাপ হতে পারে এবং মানবতা এজন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের যে শিক্ষা দিচ্ছে তা অবশ্যই মানুষকে জানতে হবে ও শিখতে হবে।

তারা মনে করেন, "আমরা পরবর্তী মহামারীর জন্য প্রস্তুত নই"। তিনি আশা করেন,  ওষুধ, পরীক্ষা, ভ্যাকসিন, মহামারীবিদ্যার মতো বিষয়ে ব্যাপক জানাশোনার কারণে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে।

মূলত, বিভিন্ন মহলের বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী পরবর্তী মহামারীর আশঙ্কা মোটেও অমূলক নয়। পৃথিবীর জানা ইতিহাসের প্রতিটি ধাপে মানবজাতিকে ভয়াবহ সব ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ মোকাবিলা করতে হয়েছে। লক্ষ লক্ষ বছর আগের ভয়ঙ্কর সব ভাইরাস হঠাত করে সুপ্ত অবস্থা থেকে জেগে উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর ইতিহাসজুড়ে মানবজাতির পাশাপাশি টিকে আছে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া।

 

বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ, বরফ স্লাব, বরফ বার্গ, এবং পারমাফ্রস্ট গলে যাচ্ছে। এতে একদিকে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে, অন্যদিকে জমাট বরফের নীচে সুপ্ত অবস্থায় থাকা লক্ষ লক্ষ বছর আগের ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া জেগে উঠে মহামারির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, পারমাফ্রস্টের নীচের লক্ষ লক্ষ টন কার্বন বায়ুমন্ডলে ফিরে এসে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে।

বিজ্ঞানের এ গবেষণা, বিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যব্দানী এবং পৃথিবীর ইতিহাস যদি মিলিয়ে দেখা হয়, তাহলে সহজেই ধারণা করা যায় যে- একটির পর একটি মহামারী আসা আসলেই সম্ভব। তাই, বিশ্ব শক্তিগুলোকে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ও স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে উঠে মানবজাতির চিন্তায় আত্মনিয়োগ করার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে, কল্যাণকর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিশ্বকে একযোগ কাজ করতেই হবে।

 

মোহাম্মদ তৌহিদ; বার্তা সম্পাদক, সিএমজি বাংলা, বেইজিং।