অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের
2021-08-12 20:08:10

আজহার লিমন, ঢাকা: চলমান টিকা কার্যক্রমের মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, কয়েক ধাপের করোনার অভিঘাতে পুনরুদ্ধারের গতিও থমকে গেছে। এমন অবস্থায় সামনের দিনগুলোতে কতটা চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে এখানে?

 

হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে কোন জনগোষ্ঠীর সিংহভাগকে টিকার আওতায় আনার আলোচনা আছে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে। এবং এটি প্রায় ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকারও ২০২২ সালের মধ্যেই জনগোষ্ঠীর এই অনুপাতকে টিকা দিতে চায়। সে হিসেবে আগামী দেড় বছরে প্রায় ১৩ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। আর এই সংখ্যক মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দিতে দরকার প্রায় ২৬ কোটি ডোজ। কিন্তু গেল জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিভিন্ন উৎস থেকে যে পরিমাণ টিকা সংগ্রহ করতে পেরেছে তা ৩ কোটির বেশি নয়। এ টিকার মাধ্যমে পুরোপুরি টিকার আওতায় এসেছে মোটামুটি অর্ধকোটি মানুষ। প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য এবং নিবন্ধন করে টিকার জন্য অপেক্ষায় আছে প্রায় পৌনে ৩ কোটি মানুষ। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার ৩ শতাংশ মানুষকেও টিকার আওতায় আনতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোজাহেরুল হকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এমন অবস্থায় সরকার গৃহিত লক্ষ্যমাত্রায় অর্জনে চ্যালেঞ্জ কতটা?

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের_fororder_jingji8

অধ্যাপক মোজাহেরুল হক, প্রাক্তন পরিচালক, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

তিনি বলেন, এখানে দুটো চ্যালেঞ্জ। ২৬ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহটা যেমন একটা চ্যালেঞ্জ আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিকভাবে জনগণকে টিকা দেওয়াটা বা টিকা ব্যবস্থাপনাটা। বাংলাদেশের টিকা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, ব্যবস্থাপনাটাও ভালো আছে। কিন্তু এই ধরনের ব্যবস্থাপনাটা নাই, যেখানে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সুতরাং এটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এবং আমরা এই কয়দিনে যা লক্ষ্য করেছি ব্যবস্থাপনায় বেশ অনিয়ম আছে। বিশৃঙ্খলা আছে।

 এটা স্পষ্ট অর্থনীতি সচল করা এবং মানুষের জীবন জীবিকার বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও করোনার টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে বারবার বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিচ্ছে সরকার। এর প্রভাবে সবশেষ অর্থবছরে করোনার প্রথম বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও চলতি অর্থবছরের শুরুতেই মন্দা দেখা দিচ্ছে উৎপাদন ও রপ্তানি খাতগুলোতে। এমন অবস্থায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কতটা পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শরমিন্দ নির্লোমী মনে করেন, অনেক আলোচনা থাকলেও সরকার গৃহিত পুনরুদ্ধার প্রকল্প কাজে আসছে না।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের_fororder_jingji9

অধ্যাপক শরমিন্দ নির্লোমী, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক নির্লোমী বলেন, গত বছর বা এই বছরে যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কথা বলা হচ্ছিলো তখন একটা অনুমিতি ছিলো আমাদের। সেটা হলো করোনা পরিস্থিতি প্রভূত উন্নয়ন হবে। এমন কি এটাও আশা করা হচ্ছিলো ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এনে সাধারণ মানুষ অর্থাৎ সবাইকে এবং আমরা মোটমুটি একটি কম বিপদের ব্যবস্থাপনার দিকে আমরা যেতে পারবো। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে সেটাতে ভ্যারিয়েন্টও যেমন শক্তিশালী হচ্ছে তেমনি ম্যানেজমেন্টও তেমনভাব ভাবতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে আসলে আমাদের আগের যে অনুমিতির ওপর ভিত্তি করে আমরা যে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার দিকে যাচ্ছিলাম তা আর কার্যকর থাকছে না।

:আপনার কথায় এটা স্পষ্ট পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে? কিন্তু এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?

টিকা সার্বজনীন করা, যত দ্রুত সম্ভব। এবং জবাবদিহির আওতায় এনে একদম শক্তিশালী একটি স্বাস্থ্যখাত করা যেখানে সকল মানুষের অ্যাকসেসটা থাকবে। আর অর্থনৈতিক স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে যে বিনিয়োগগুলো স্বাভাবিকভাবে চলছিলো সেগুলো অর্থাৎ সমস্ত কাজগুলোকে খুলে দেওয়া। ধাপে ধাপে এগুলো করতে হবে। আবার ধাপে ধাপে বলতে এটা বোঝাচ্ছি না যে, আমার টিকাদান কার্যক্রমে দুই বছর লাগবে এই দুই বছরের আগে কিছু করবো। এগুলো সবই চলমান রেখে করতে হবে কিন্তু একদম একটি পরিস্কার পরিকল্পনা থাকতে হবে। এত মানুষের এই দেশে কত ভ্যাকসিন কোন সময় আগে। কোন সময় কাকে দেব এর কি পরিকল্পনাটা একেবারেই সম্ভব না?

:তার মানে অর্থনৈতিক খাত ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আগেভাগে টিকা দেওয়া উচিত। আপনি কি এটাই বলতে চাইছেন?

শ্রমিক অগ্রাধিকার তালিকায় কেন আসবে না। সকল শ্রমিকের স্বাস্থ্যই কি গুরুত্বপূর্ণ নয়? আমার ছাত্রের স্বাস্থ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, শ্রমিকের স্বাস্থ্যও তেমন গুরুত্বপূর্ণ।

 

এরই মধ্যে রপ্তানির বাজার বড় অর্থনীতির দেশগুলো টিকাদান কার্যক্রমে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে তারা টিকাদানে এগিয়ে আছে এমন দেশের সঙ্গেই বেশি বাণিজ্য সম্প্রসারিত করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এমন অব্স্থায়, বাংলাদেশের জন্য যে বাজার হারানোরও যে শঙ্কা আছে, সে কথাও বলছেন অর্থনীতিবিদেরা।

আজহার লিমন। চীন আন্তর্জাতিক বেতার।