যারা ১৯৯৫-২০০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদেরকে জেড প্রজন্ম বলে ডাকা হয়ে থাকে। তাঁদের আরেকটি নাম হলো ইন্টারনেট প্রজন্ম। চলতি বছর হচ্ছে চীনের চতুর্থদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সূচনা বছর। এ বছরের প্রথমার্ধে চীনে নতুন করে ৬৯.৮ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তা সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬৩.৫ শতাংশ পূরণ করেছে।
প্রতিবছর জুন ও জুলাই মাস শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা শেষ করে স্নাতক হওয়ার সময়। জেড প্রজন্মের যুবকরা এখন কর্মসংস্থান বাজারের মূল শক্তি। চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে তারা খুব ভাল একটি প্রেক্ষাপটে বড় হয়েছে এবং ইন্টারনেট ও উন্নত প্রযুক্তি তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাদের পছন্দের চাকরি, চাকরি খুঁজার ধরন, কর্মসংস্থান সম্পর্কে তাদের ধারণা অন্য প্রজন্মের চেয়ে বেশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও মুক্ত।
শখের চাকরি তথা নমনীয় কর্মসংস্থান জেড প্রজন্মের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। তারা ইন্টারনেটের সাথে বড় হয়েছে। তাই তাদের আত্ম-সচেতনতা অনেক বেশি এবং তারা নতুন জিনিষ সহজে গ্রহণ করতে পারে। আগে মানুষ স্থায়ী চাকরি পছন্দ করতো। কিন্তু জেড প্রজন্মের মানুষেরা ঐতিহ্যিক কর্ম পদ্ধতিকে ভেঙে নিজের মূল্য অনুসন্ধান করতে পছন্দ করে। নিজের শখকে চাকরিতে পরিণত করতে ভাল লাগে তাদের।
চাকরি বাছাইয়ের সময় তারা স্ব-বৃদ্ধি এবং উন্নতির উপর বেশ গুরুত্ব দেয়। লেখাপড়ার সুযোগ বা উন্নয়নের অবকাশ কত- এমন ব্যাপারের উপর গুরুত্ব দেয় তারা। তাদের মতে নিজের জন্য কাজ করতে হয়, চ্যালেঞ্জিং চাকরি পছন্দ করে তারা। অলস কাজে তারা নিজেদের ইচ্ছাশক্তি ক্ষয় করতে চায় না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫৪.৪ শতাংশ জেড প্রজন্মের মানুষ যে কাজ করে বা করবে- তা নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেজরের সঙ্গে কম সম্পর্কিত, এমনকি কোন সম্পর্ক নেই। তারা মনে করে, যদি কাজের মাধ্যমে নতুন কিছু শিখতে পারা যায় বা নিজের মূল্যায়নের প্রতিফলন হয়- তা ভাল। তাই নতুন ধরনের কাজ করতে পছন্দ করে এবং বহুপক্ষীয় ও বহু-পেশাদার ব্যক্তি হতে চায় তারা। দক্ষতাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তারা। জেড প্রজন্মের মানুষদের মধ্যে অনেকে তুলনামূলকভাবে উন্মুক্ত ও ভাল পরিবেশে বড় হয়। তাই নিজের সুখ এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তারা। পরিসংখ্যা অনুযায়ী, কর্মসংস্থান আকর্ষণীয় হওয়ার কারণ নামে একটি র্যাঙ্কিংয়ে ভাল কাজ ও জীবনের ভারসাম্য দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তার মানে যুবকরা মানবিক এবং যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থাকে বেশি পছন্দ করে। চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং গবেষণা কেন্দ্র প্রকাশিত চীনা জেড প্রজন্মের জব সার্চ ট্রেন্ড সার্ভে রিপোর্ট ২০২১ -এ বলা হয়, ৬৩.৭ শতাংশ চাকরিপ্রার্থী অনলাইনে এইচআর কর্মীর সাথে যোগাযোগ করার পর সাক্ষাত্ করতে চায়। তার মানে তারা সামনা-সামনি চাকরি খোঁজতে পছন্দ করে।
জেড প্রজন্মের মানুষ তাড়াতাড়ি চাকরি খুঁজে না। কারণ জীবনযাপনের চাপ এত বেশি নেই তাদের। তাই স্নাতক হবার পর সরাসরি চাকরি করার ধারণাও পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক যুবক স্নাতক হবার পর শুরুতে ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করতে চায়। আদর্শ চাকরি পেতে সময় লাগে। তাই তারা ধীরে ধীরে কাজ খুঁজে।
অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে যে মহামারির প্রভাবে চলতি বছর কর্মসংস্থানের ওপর অনেক চাপ রয়েছে। চলতি বছর চীনের বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের সংখা ৯০ লাখ ৯০ হাজার, তা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আমরা মাঝে মাঝে এমন খবরও দেখি যে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী অ্যাসেম্বলি লাইনে কাজ করে বা খাবার বিতরণ করে। কোন কোন নেটিজন মনে করেন, যে বিষয়ে পড়াশুনা করেছে তার সাথে অপ্রাসঙ্গিক কাজ শুরুতে করতে হয়। পরে ধীরে ধীরে উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এটি খুব সহজ নয়। তাই সরকারের যুবকদের স্বাস্থ্যকর ও সঠিক কর্মসংস্থান বাছাইয়ে সাহায্য করা উচিত্ এবং কর্মসংস্থান স্থিতিশীল করতে প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
(শিশির/এনাম/রুবি)