আগস্ট ১২: আজ বিশ্ব হাতি দিবস। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চীনের ইয়ুননানে ১০টিরও বেশি এশিয়ান বন্য হাতির একটি দল নিজেদের বাসস্থান ত্যাগ করে লোকালয়ের দিকে পাড়ি জমায়। সে থেকে তারা ১৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দেয়। তাতে তাদের সময় লাগে মোট ১১০ দিন। কিন্তু এত পথ পাড়ি দিয়ে তারা আবারও নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে। গত রোববার ঘটে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করবো।
হাতিদের ঘরে ফিরতে সাহায্যকারী দলের প্রধান কমান্ডার এবং ইয়ুননান প্রদেশের বন ও তৃণভূমি ব্যুরোর মহাপরিচারক ওয়ান ইয়ুং বলেন, হাতিগুলো ‘ইউয়ান চিয়াং’ নদীর দক্ষিণ তীরে ফিরে যাচ্ছে। এটি হাতিদের স্থানান্তরিত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইয়ুননান প্রদেশের এশিয়ান হাতির স্থানান্তরকাজে সহায়তা করায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের প্রতীক।
এই সম্পর্কে তিনি বলেন, হাতির স্থানান্তর চলাকালে তাদের সুরক্ষা এবং নিকটবর্তী অঞ্চলে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ইয়ুননান প্রদেশ ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৮ আগস্ট পর্যন্ত গোটা প্রদেশে ২৫ হাজারেরও বেশি পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ৯৭৩টি ড্রোন, ১৫ হাজারেরও বেশি জরুরি গাড়ি কাজ করেছে। তাতে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষকে স্থানান্তর করা হয় এবং হাতিগুলোকে ১৮০ টন খাবার দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এবারের হাতির স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জায়গার স্থানীয় অধিবাসী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মানুষ ও পশুর সম্প্রীতিতে বসবাসের নজির ফুটে উঠেছে।
হাতির দলটি কৃষকদের ফসল খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা বলেছেন, হাতি নিজের পছন্দের ফসল খাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আগামি বছর আমাদের জমিতে আবার ফসল হবে। কিছু অঞ্চলে সংশ্লিষ্ট ঐতিহ্যবাহী দিবস উদযাপন হচ্ছিল। তবে হাতি আসার খবর পেয়ে সকলে সংশ্লিষ্ট উদযাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। হাতি আসার সময় তারা বাতিগুলো বন্ধ করে উত্পাদনকাজও সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে।
এই কারণে এবারের এশিয়ান হাতির স্থানান্তরকাজকে এক বৈজ্ঞানিক, অনুসন্ধানী ও সুরক্ষা যাত্রা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি দেশি-বিদেশি সকল মহলের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এবারের হাতির স্থানান্তর প্রচার করা বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা ছিল ১৫০০টিরও বেশি। তারা ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের মূলধারার গণমাধ্যম। তাতে ইয়ুননান প্রদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার গল্প কাভারেজ পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের জীব বৈচিত্র সুরক্ষার উদ্যোগ ও কার্যকারিতা বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে।
মহাপরিচালক ওয়ান ইয়ুং বলেন, এবারের হাতির স্থানান্তরকাজ চীনের বণ্য প্রাণী সুরক্ষার একটি ক্ষুদ্র অংশ। এতে এশিয়ান হাতির সুরক্ষায় চীনের ফলাফল ও বাস্তব অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে।
এই সম্পর্কে তিনি বলেন, বহুবছরের সুরক্ষা উদ্যোগ কাজে লাগানোর পরে, এশিয়ান হাতির সংখ্যা ১৯৭৮ সালের ১৫০টির কাছাকাছি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৩০০টিরও বেশিতে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিক পর্যন্ত, এশিয়ান হাতির চলাচলের আওতা ইয়ুননান প্রদেশের ১১টি জেলায় সম্প্রাসরণ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে শিকার নিষিদ্ধ ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে হাতি আগের মতো ‘মানুষকে ভয় পাওয়া’ থেকে বর্তমানে ‘মানুষের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে বসবাসে’ অভ্যস্ত হয়েছে।
এশিয়ান হাতির ভবিষ্যত জীবন সম্পর্কে এশিয়ান হাতির বিশেষজ্ঞদলের সদস্য এবং ইয়ুননান প্রদেশের ‘সিশুয়াংপাননার’ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর জেষ্ঠ প্রকৌশলী শেন ছিং চুন বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পার্ক প্রতিষ্ঠাকাজ জোরদার করতে হবে। (ওয়াং হাইমান/এনাম/ছাই)