মহামারি প্রতিরোধ ও চীনের হংকং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাজনীতি.
2021-08-06 18:20:18

মহামারি প্রতিরোধ ও চীনের হংকং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাজনীতি._fororder_src=http-%2F%2Fp3.itc.cn%2Fimages03%2F20200524%2Ffd835b2acbda4166afdcd04f00949eb3.jpeg&refer=http-%2F%2Fp3.itc

গত ৩০ জুলাই  চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরো বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

 

সভায় বলা হয়, চলতি বছর থেকে চীনা অর্থনীতি অবিরাম ও স্থিতিশীলভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মান অব্যাহতভাবে বেড়েছে এবং জীবিকা কার্যকরভাবে সুনিশ্চিত হয়েছে। পাশপাশি, উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নে নতুন সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং গোটা সমাজে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। বছরের শেষার্ধের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং সামষ্টিক নীতিমালার ধারাবাহিকতা, স্থিতিশীলতা ও স্থায়ীত্ব বজায় রাখতে হবে।

 

সভায় আরও বলা হয়, সংস্কারের ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারণ করা উচিত, উচ্চ গুণগত মানের উন্মুক্তকরণে অবিচল থাকতে হবে, সম্মিলিতভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সভায় জোর দিয়ে বলা হয়, জীবিকা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ আরও জোরদার করতে হবে। 

 

 

গত পয়লা আগস্ট পালিত হয় চীনের গণমুক্তি ফৌজ প্রতিষ্ঠার ৯৪তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরো এক বিশেষ সভার আয়োজন করেছে।

 

সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাতে গণমুক্তি ফৌজের প্রতি সিপিসির সার্বভৌম নেতৃত্ব ও তার প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীর লক্ষ্য সময় মতো বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নিদের্শনা দেন।

 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন দেশ ও বাহিনীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হচ্ছে: গণমুক্তি ফৌজ প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীর লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা। তা দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের সার্বিক পরিস্থিতির সাথে জড়িত। দেশের প্রতিরক্ষা ও বাহিনীর  আধুনিকায়ন বাস্তবায়নের জন্য “নতুন তিনটি পদক্ষেপের” একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।  এ লক্ষ্য সময় মত বাস্তবায়ন দৃড়ভাবে নিশ্চিত করার দিক-নিদের্শনা দেন তিনি। 

      
তিনি আরো জানান,  “সিপিসির ১০০ বছরের ইতিহাস দেখে আমরা বুঝতে পারি, বাহনীর প্রতি সিপিসির নেতৃত্ব ও গণবাহিনী প্রতিষ্ঠা অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ।  গণবাহনীর প্রতি সিপিসির সার্বভৌম নেতৃত্ব নিশ্চিত করলেই কেবল এর অব্যাহত উন্নয়ন সম্ভব।”

 

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশকে শক্তিশালি হতে চাইলে বাহিনীকে শক্তিশালি করতে হবে। বাহিনী শক্তিশালি হলে দেশের শান্তি নিশ্চিত হয়। একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায়, দেশের প্রতিরক্ষা ও বাহিনীর উন্নয়নকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিরক্ষা ও শক্তিশালি বাহিনী প্রতিষ্ঠার গতি আরো দ্রুততর করতে হবে।  

 

গত ৪ আগস্ট চীন ও তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পরস্পরকে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন দু’দেশের নেতৃবৃন্দ।

 

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর বার্তায় বলেন, গত ৫০ বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে উন্নত হয়েছে। ২০১০ সালে দু’দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গঠনের পর বিভিন্ন খাতে সুষ্ঠু সহযোগিতা হয়েছে। গত বছর কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে পরস্পরকে সমর্থন দিয়েছে দু’দেশ এবং দু’দেশের জনগণের মৈত্রীও গভীর হয়েছে। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় কেন্দ্রীয় স্বার্থে সমর্থন দেওয়া এবং কৌশলগত সহযোগিতামূলক সম্পর্কের স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন প্রত্যাশা করেন প্রেসিডেন্ট সি।

 

মহামারি প্রতিরোধ ও চীনের হংকং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাজনীতি...

সম্প্রতি চীনের জনপ্রিয় সংবাদপত্র পিপল’স ডেইলিতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়, করোনা মহামারী এখনো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে নতুন করে আরো ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমান প্রবণতা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, আগামি দুই সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের মোট সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়াবে। তাই সামনে যে এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে- তা বোঝাই যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সমাজের একতা ও সহযোগিতাই পারে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মহামারী রোধ করতে। তবে, এমন সংকটের সময়ও কিছু কিছু মার্কিন রাজনীতিক মুখে একতার বুলি কপচালেও বিশ্বকে বিছিন্নতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 

 

প্রবন্ধ মতে, হু বিশ্বকে মহামারী জয়ের একমাত্র উপায় হিসেবে একতা ও সহযোগিতার চেতনার আলোকে একযোগে প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানায়। এক বছরেরও বেশি সময়ে মানবজাতি ও করোনাভাইরাসের মধ্যকার কঠিন লড়াইয়ে প্রমাণিত হয়েছে, এ মুহূর্তে বিজ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। কেবল একতাই মানবজাতিকে এ থেকে রক্ষা করতে পারে। 

 

তবে, যুক্তরাষ্ট্র কখনো ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে মহমারীকে প্রতিরোধ করেনি। বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র আগের মতই বিছিন্নতা সৃষ্টি করে চলছে। নিজেদের জন্য ছোট উপদল সৃষ্টি করছে। বহুপক্ষবাদের আড়ালে অনেক গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে হু’কে হুমকি দিয়ে চলছে।  
 
মানবজাতির লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। মহামারীকে পরাজিত করতে একতা ও সহযোগিতার চেয়ে বেশি শক্তিশালি অস্ত্র এ মুহূর্তে আর নেই। তাই  বিশ্ববাসী জানতে চায়, যুক্তরাষ্ট্র কখন সত্যিকারার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে মহামারী প্রতিরোধ সহযোগিতায় অংশ নিতে পারবে? তারা কবে ঐক্য বিনষ্টকারী বিছিন্নতার ভুল পথ থেকে সরে আসবে? এ দুটো প্রশ্নের উত্তরই বলে দিবে আগামি দিনের বৈশ্বিক চিত্র। 

 

এদিকে, হংকং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর তার আগেকার সরকারের  আধিপত্যবাদী কর্মকান্ড ও নীতি একেবারেই পরিবর্তন  করেনি। হংকংয়ের ব্যাপারে চীনকে অপবাদ দেওয়ার পাশাপাশি আরো বেশি আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। কিছু পশ্চিমা দেশ চীনের বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণ চালাচ্ছে। তাদের গণমাধ্যমও চীনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো অব্যাহত রেখেছে। তারা চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার এক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়।

 

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের নির্বাচন ব্যবস্থা উন্নয়ন পরিকল্পনা একেবারে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোন বিদেশি শক্তির এ ব্যাপারে অভিযোগ করার অধিকার নেই। যুক্তরাষ্ট্র যাদের ওপর অবরোধ চাপিয়েছে, তারা হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনকে বলিষ্ঠ করায় ভূমিকা পালন করছে। তাই অবরোধ একেবারেই অবাস্তব। প্রকারান্তরে হংকংয়ের ক্ষতি বয়ে আনবে। 

 

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, হংকংয়ের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য চীন সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে। তা আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪৬তম অধিবেশনে ৭০টিরও বেশি দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে হংকং বিষয় ও চীনের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধের তাগিদ দেয়া হয়। এ ছাড়া, আরো ৩০টিরও বেশি দেশ আলাদভাবে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। তারা হংকং বিষয়ে চীনের অবস্থান ও ব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেছে।

 

মার্কিন কতিপয় রাজনীতিক মুখে হংকংবাসীর পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছে, তবে বাস্তবে তাদের কর্মকাণ্ড হংকংবাসীর বিরুদ্ধে। হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনসহ ধারাবাহিক শক্তিশালি ব্যবস্থা নেয়ার পর, হংকংয়ের সমাজের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার হয়েছে। হংকং আরো স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ হচ্ছে। “এক দেশ, দুই ব্যবস্থা” হংকংয়ে আরো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এসবকে মার্কিন রাজনীতিকদের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া জবাব বলে সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়। 

 

রুবি/এনাম