আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি এনাম এবং আকাশ।
আকাশ: বন্ধুরা, এখন বিশ্ববাসী টোকিও অলিম্পিক গেমসের ওপর নজর রাখছে। এবারের খেলায় চীন অনেক ভালো করে পদক জয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তাই সবার আগ্রহ এখন চীনের দিকে। অনেকেই জানতে চাচ্ছে চীন অলিম্পিক গেমসে কখন কীভাবে প্রথম অংশগ্রহণ করেছে? ইতিহাসে কী কী সেরা অর্জন রয়েছে চীনের? এবং চীনে গণশরীরচর্চা ও তরুণতরুণীদের খেলাধুলা উন্নয়নের ব্যবস্থা কী? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আজ আমরা বিস্তারিত আপনাদের সাথে আলাপ করব , কেমন?
শুরুতেউ আমাদের এনাম চীনের অলিম্পিকে অংশগ্রহণের ইতিহাস ও এখন পর্যন্ত সেরা অর্জনগুলো সম্পর্কে আপনাদের অবগত করবেন।
এনাম: ১৯৩২ সালে চীন সর্বপ্রথম অলিম্পিক গেমসে অংগ্রহণ করে। লিই ছাং ছুন ছিলেন চীনের প্রথম অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়।
১৯৮৪ সালে লস এঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গমেসে চীনের খেলোয়াড় সু হাই ফেং পুরুষদের শুটিংয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। চীন এবারের অলিম্পিক গেমসেও প্রথম স্বর্ণপদক লাভ করে। আর এটি ছিল এবারের অলিম্পিক গেমসের একেবারে প্রথম পদক।
২০০৮ সালে চীন সাফল্যের সাথে বেইজিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজন করেছে। এতে চীনের মোট ৬৩৯ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। তারা চীনের অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা খেলা উপহার দেয়। তখন তারা মোট ৫১টি স্বর্ণ, ২১টি রৌপ্য ও ২৮টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে।
আকাশ: এনাম ভাই, আপনি চীনের গণখেলাধুলা বা গণশরীরর্চচার পরিকল্পনা, বিশেষ করে, তরুণদের খেলাধুলার উন্নয়নের ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের বন্ধুদের জানাতে পারবেন কি?
এনাম: অবশ্যাই। আসলে খেলাধুলার উন্নয়ন বা গণশরীরর্চচার বিষয়ে চীন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটি চীনা জনগণের জীবনধারার একটি অংশ। খেলাধুলা নিয়ে চীনাদের আগ্রহ নিয়ে আমি বলতে চাই, সত্যিই তা তাদের জীবনধারার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
আকাশ: ১৯৯৫ সালে চীনের “গণ শরীরর্চচা পরিকল্পনা গাইডলাইন”প্রকাশ করা হয়। এটি ছিল চীনের শরীরচর্চা উন্নয়নের জন্য প্রথম গাইডলাইন।
গত ২৬ বছর ধরে গণশরীরচর্চা জনগণের জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। ১৯৮১ সালে চীনের প্রথম শহর ম্যারাথন প্রতিযোগিতা বেইজিংয়ে আয়োজিত হয়। তখন মাত্র ৮৬ জন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু এখন বেইজিং আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে প্রত্যেক বছরে ৩০ হাজার প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে ।
২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে নিয়মিত শরীরচর্চায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ কোটি। দেশব্যাপী খেলাধুলার মাঠ আছে ৩১ লাখ ৬২ হাজার।
আকাশ: এনাম, আপনি তরুণদের খেলাধুলার উন্নয়নের কথা বলেছেন। আমি এ বিষয়েও কিছু কথা বলতে চাই। চীনের প্রাথমিক ও হাই স্কুলে শরীরচর্চাকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে শারিরীক শিক্ষা নামে একটি কোর্স থাকে। এতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কীভাবে সঠিকভাবে শরীরচর্চা করতে পারে এবং ফুটবলসহ নানান খেলাধুলা শিখিয়ে থাকেন। পাশাপাশি, প্রতিটি সেমিস্টার শেষে শারীরিক শিক্ষার পরীক্ষাও রয়েছে। তাতে সবাইকে পাস করতে হয়। এজন্য ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশে পরিণত হয়। তা তরুণতরুণীদের খেলাধুলা উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ।
আকাশ: এবারের টোকিও অলিম্পিকে চীনের পারফর্মেন্স কেমন হল এ পর্যন্ত?
এনাম: আমরা সবাই এখন টোকিও অলিম্পকি গেমসের উপর নজড় রাখছি। এবারে চীনের অলিম্পিক প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা মোট ৭৭৭ জন। এর মধ্যে খেলোয়াড় ৪৩১ জন। তারা এবারের গেমসের ২২৫টি ইভেন্টে অংশগ্রহন করবেন। চীনের বাইরে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসে এবারের চীনা প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
এবারের অলিম্পিকের প্রথম স্বর্ণপদকটি জয় করেছেন চীনের নারী শুটার ইয়াং ছিয়ান। তিনি গত ২৪ চব্বিশ জুলাই নারীদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন।
৪ তারিখ পর্যন্ত, এবারের অলিম্পিক গেমসে চীন মোট ৩২টি স্বর্ণ, ২১টি রৌপ্য, ও ১৬টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে পদক অর্জনের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে।
এনাম: বন্ধুরা, আর মাত্র ছয় মাস পর বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের আয়োজন হবে। আমি তার প্রস্তুতিমূলককাজ ও ফোকাস নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু তথ্য শেয়ার করতে চাই।
বন্ধুরা, বর্তমানে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের সব স্টেডিয়াম ও মাঠের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এবারের অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরুর আগেই খেলার পর স্টেডিয়ামগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা করা হয়। খেলা শেষে বেইজিং অলিম্পিক ভিলেজকে একটি আবাসিক ভবনে রূপান্তর করা হবে। ইয়ান ছিং শীতকালীন অলিম্পিক ভিলেজকে একটি হোটেলে পরিণত করা হবে। চাং চা খো শীতকালীন অলিম্পিক ভিলেজ আবাসিক ভবন ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে পরিণত হবে। পাশাপাশি, ট্র্যাফিকসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেইজিংসহ আয়োজক সব শহরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ বয়ে আনবে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চালু হয় বেইজিং-চাং চা খো দ্রুত গতির রেলপথ। দ্রুত গতির এই রেলপথ বেইজিং ও চাং চা খোয়ের আদানপ্রদান ও উন্নয়নকে ত্বরানিত করবে।
এ রেলপথ চালু হওয়ার পর থেকে চাং চা খো শহরের ছং লি জেলায় অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত, ছং লি জেলায় প্রতি পাঁচ জনে একজন বরফ ও তুষার ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট খাতে কাজ পেয়েছে। যেমন: স্কি কোচ, হোটেল কর্মকর্তা ইত্যাদি।
বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস সারা চীনে বরফ ও তুষার ক্রীড়াকে অনেক প্রমোট করছে। এ বছরের শুরু পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট উপাত্ত মতে, চীনে ৬৫৪টি মানসম্মত বরফের মাঠ রয়েছে, তা ২০১৫ সালে চেয়ে ৩১৭ শতাংশ বেশি। সারা দেশে মোট ৮০৩টি ইন্ডোর ও আউটডোর স্কি মাঠ রয়েছে, তা ২০১৫ সালের চেয়ে ৪১ একচল্লিশ শতাংশ বেশি।