অগাস্ট ৫: ‘বিশ্বের ছাদ’ হিসেবে পরিচিত চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। গত ২৫ মে ছিল তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির ৭০তম বার্ষিকী। বিগত ৭০ বছরে তিব্বতের ব্যাপক পরিবর্তন থেকে সে অঞ্চলে চীনের নেওয়া ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
জটিল ঐতিহাসিক পটভূমি, আফিম যুদ্ধের প্রভাব ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তিব্বতকে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়েছিল। এ অবস্থায় তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি ছিল চীনের বিভিন্ন জাতির অসাধারণ প্রচেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক সমর্থনে অর্জিত একটি মহান বিজয়।
বিগত ৭০ বছরে তিব্বতের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে বেশ কিছু নীতি কার্যকর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে রয়েছে কর, অর্থ, অবকাঠামো, শিল্প উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিত্সা, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষাসহ নানা বিষয়। তা ছাড়া, প্রতিবছর তিব্বতে আর্থিক বরাদ্দও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে বড় আকারের ধারাবাহিক প্রকল্প কাজে লাগানো হয়েছে। এটি অবিরাম আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাপনের মান উন্নত করেছে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অব্যাহত পুঁজি বিনিয়োগ ও সহায়তার সুফল। এর সাহায্যে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, আর্থিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে।
সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ে ‘তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি ও সমৃদ্ধ উন্নয়ন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়। এতে বিগত ৭০ বছরে তিব্বতের উন্নয়ন প্রক্রিয়া এবং মহান সাফল্য তুলে ধরা হয়। ‘তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার ও তিব্বতের স্থানীয় সরকারের চুক্তি’ স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিব্বত এই বিশাল পরিবর্তন অর্জন করেছে।
তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির পর থেকে, তিব্বতে ধীরে ধীরে একটি বিস্তৃত ত্রিমাত্রিক পরিবহন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেলপথ, বিমান চলাচল ও পাইপলাইন স্থাপনের মতো একাধিক পরিবহন পদ্ধতি। আজকাল, তিব্বতের প্রতিটি গ্রামে সড়ক পৌঁছে গেছে। রাস্তার মাইলেজ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮ শ’ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। তিব্বত একটি ‘তথ্য মহাসড়ক’ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছে। তিব্বতের সব প্রশাসনিক গ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক সিগন্যাল রয়েছে। ফাইবার-অপটিক ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেসের হার ৯৯ শতাংশ হয়েছে। স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী তিব্বত ব্যাপকভাবে কৃষি, পশুপালন, সবুজ শিল্প এবং তৃতীয় শিল্প উন্নত করেছে। কৃষি, বন, পশুপালন ও মত্স্য শিল্পের মোট উত্পাদনের পরিমাণ বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ২৩.৩৫ বিলিয়ন ইউয়ান। যা ১৯৬৫ সালে ছিল ২৬.৪ কোটি ইউয়ান।
সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তিব্বত সফরকালে বলেছেন, তিব্বতের উচিত নিজের সুবিধাজনক ব্যবস্থা বাড়ানো এবং দুর্বলতা এড়ানো এবং স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করা। রেলপথ, মহাসড়ক ও অন্যান্য প্রধান অবকাঠামো নির্মাণের গতি বাড়াতে হবে; বৈশিষ্ট্যময় শিল্প উন্নত করতে হবে; দেশে দূষণমুক্ত জ্বালানিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাকাজ জোরদার করতে হবে; উন্নয়ন ও নিরাপত্তার সমন্বয় করে তিব্বতের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নের পথ অনুসরণ করতে হবে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি’র) নেতৃত্বে তিব্বতে যে অসাধারণ ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে তা থেকে স্পষ্ট যে, চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জাতিগত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা শ্রেষ্ঠ মানের।
(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)