আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৩৩
2021-08-05 17:16:40

গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

কী থাকছে এবারের পর্বে

১. গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করছেন আধুনিক যুবসমাজ

২. চীনে নারীর ক্ষমতায়ন সমৃদ্ধ করছে শিল্পকে

৩. সাক্ষাৎকার : সংগীত শিল্পী উল্কা হোসেন

৩. অলিম্পিকে চীনা নারীদের অর্জন

৫. চীনা শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান থেকে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।

সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনে সফলভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হয়েছে। এই অর্জনে নারীদেরও রয়েছে বিশাল অবদান।Top of Formচীনের দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে আধুনিক তরুণীদের অবদান নিয়ে শুনুন একটি প্রতিবেদন।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করছেন আধুনিক যুবসমাজ

আকাশ ছুঁতে চাই  পর্ব ৩৩_fororder_nvxing2

 

 

চীনের দারিদ্র্য দূরীকরণ বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়কর সাফল্য। গত বছর চীন তার সকল জনগণকে দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করেছে। চীনের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করেছে যুবসমাজ।তারা আধুনিক উচ্চ  শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ফিরে এসেছেন নিজেদের হোম টাউন বা গ্রামে। সেখানে উন্নত জ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে কৃষি উদ্যোগে সাফল্য লাভ করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন অসংখ্য নারী।

এমনি একজন তরুণী লিউ শুয়াং। উত্তর চীনের শানসি প্রদেশের সিইয়াং জেলায় তার জন্ম। তিনি তার হোম টাউনে স্কুলের শিক্ষা এবং নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সাংহাই চিয়াও থুং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন লিউ শুয়াং।

উচ্চশিক্ষিত এই তরুণী তার বাবার পরামর্শে ফিরে আসেন গ্রামে।সেখানে তিনি স্থানীয় পিচ ফলের উৎপাদনের গুণগত মান বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি তার উচ্চশিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে স্থানীয় খামারীদের জন্য একটি ই-কমার্স প্লাটফর্ম তৈরি করেন। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে উৎপন্ন্ ইয়ুলুসিয়াং ধরনের পিচের গুণগত মান উন্নয়ন এবং খামারে উৎপন্ন পিচ মার্কেটিংয়ে ব্যবস্থা করেছেন। এভাবে চীনের উচ্চশিক্ষিত যুব সম্প্রদায় নিজের নিজের গ্রামে ফিরে কৃষি খামার গড়ে তুলছেন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন ধারা নিয়ে এসেছেন।

সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনের একটি প্রচলিত কথা হলো চীনের অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছে নারীরা। চীন নারীর ক্ষমতায়নে শক্তিশালী সমর্থন অর্জন করেছে। নব্বই দশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন আকর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পরও দেশটিতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান আজকের মতো সুদৃঢ় ছিল না। চীনে নারীর আর্থসামাজিক এবং সামগ্রিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা একজন সফল নারী সু ছাং হ্যারিস-সিম্পসন। বিস্তারিত রয়েছে প্রতিবেদনে।

চীনে নারীর ক্ষমতায়ন সমৃদ্ধ করছে শিল্পকে

আকাশ ছুঁতে চাই  পর্ব ৩৩_fororder_nvxing1

 

চীনের সু ছাং হ্যারিস-সিম্পসন বহু বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলে মার্কিন মুল্লুকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুবছর কাটিয়ে ২৫ বছর পর চীনে ফিরে আসেন তিনি। তিনি যখন চীনে আসেন তখন দেশটিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ও সংস্কারের বিপ্লব চলছিল।

সাধারণত পুরুষ-অধ্যুষিত শিল্পে কাজ করেছেন সু ছাং। তিনি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত নারীদের নেতৃত্বে আসতে হলে কতোটুকু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। ১৯৯০ এর দশকে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও, চীনা নারীদের কর্পোরেট সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সুযোগ ছিল কিছুটা কম।চীনে নারীদের কণ্ঠস্বরকে আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় নিয়ে সু ছাং প্রতিষ্ঠা করেছেন SCHS Asia নামে একটি সংগঠন। যেখানে নারীরা তাদের যেকোনো মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়। এ পরামর্শের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন সু। বর্তমানে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 নারী পেশাজীবী সম্প্রদায় তৈরি করা এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রচার এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রবণতা চীনেও ব্যতিক্রম নয়। হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ নারী বিলিয়নিয়ারের বাসিন্দার দেশ চীন। সংগঠন বা কোম্পানি গুলোর মধ্যে নারী সংখ্যা গরিষ্ঠতা বাড়াতে আরও সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। আজকাল এ বিষয়টি অসংখ্য কোম্পানি উপলব্ধি করছে। এতে কোম্পানিগুলির জন্য আরও বেশি রাজস্ব অর্জন করা সম্ভব বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।  আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গবেষণা বলছে, ৭০ টি দেশের প্রায় ১৩ হাজারের উদ্যোগের মধ্যে, ৫৭ শতাংশেরও বেশি মানুষ এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন যে, জেন্ডার বৈচিত্র্যের উদ্যোগগুলি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছে। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কোম্পানি দাবি করেছে, ব্যবস্থাপনায় জেন্ডারের বিভিন্নতা থাকায় তাদের মুনাফা ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি সেইসব নারীর সঙ্গে যারা সাফল্যের আকাশ স্পর্শ করেছেন অথবা স্পর্শ করতে চান। আমাদের আজকের অতিথি সংগীত শিল্পী এবং মডেল উল্কা হোসেন। ভার্চুয়ালি তিনি যুক্ত হচ্ছেন আমাদের সঙ্গে। অনুষ্ঠানে তাঁকে স্বাগত জানাই।

‘ছয় বছর বয়স থেকে গান করছি’—উল্কা হোসেন

আকাশ ছুঁতে চাই  পর্ব ৩৩_fororder_nvxing

সাক্ষাৎকার

সংগীত শিল্পী ও মডেল উল্কা হোসেন বললেন তার জীবনের কিছু গল্প। ‘ছয় বছর বয়স থেকে গান করছি’, জানান তিনি। শৈশবে বিটিভির নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মিডিয়ায় পা রাখেন তিনি। গান করেছেন টিভি, রেডিও, মঞ্চে। তবে মঞ্চে গান গাইতে সবচেয়ে ভালো লাগে তার। কারণ সেখানে সরাসরি দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতি বোঝা যায়। দর্শকদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে গান পরিবেশনও মঞ্চে সম্ভব। গান শিখেছেন প্রখ্যাত শিল্পী সোহরাব হোসেন এবং খালিদ হোসেনের কাছে। উল্কা হোসেন সাধারণত আধুনিক গান পরিবেশন করেন। অনেক বছর ধরেই মডেল হিসেবে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে মডেলিংয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উল্কা।

তিনি একজন সুগৃহিণী। সংসার ও পেশাগত জীবনে কোন টানাপোড়েন নেই তার। পরিবার থেকে যথেষ্ট সহযোগিতাও পেয়েছেন। তিনি সংসারের সব দিক সামলে তবেই সংগীত ও মডেলিংয়ের কাজ করে থাকেন বলে জানালেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস ২২ শে শ্রাবণ উপলক্ষ্যে বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি আকাশ ছুঁতে চাইয়ের শ্রোতাদের জন্য একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা চলমান টোকিও অলিম্পিকে চীনা নারীরা চমৎকার কৃতিত্ব প্রদর্শন করছেন। শুনুন এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন।

অলিম্পিকে চীনা নারীদের অর্জন

আকাশ ছুঁতে চাই  পর্ব ৩৩_fororder_nvxing3

আকাশ ছুঁতে চাই  পর্ব ৩৩_fororder_nvxing333

অলিম্পিকের চলতি আসরটি মূলত ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে আসরটি স্থগিত করা হয়েছিল। ২৪ শে জুলাই থেকে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত হওয়া গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ২৯তম আসর চলবে আগামী ৯ আগস্ট পর্যন্ত ।

অলিম্পিকের জমজমাট  আয়োজনে প্রথম চীন অংশগ্রহণ করেছিল ১৯৩২ সালে । শুরু থেকেই এই আসরে চীনা নারীর অংশ গ্রহণ ছিল বেশ লক্ষণীয়। প্রতি অলিম্পিকে উল্লেখযোগ্য চীনা নারীর অংশগ্রহণ থাকে। চলতি অলিম্পিকে ৪০৬ অ্যাথলেটদের মধ্যে নারী অংশ গ্রহণ করেছে ২৮১ জন। সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করেছে এথলেটিক্সে, মোট ২৭ জন নারী প্রতিযোগী । শেষ খবর অনুযায়ী চীনের ২৭ টা স্বর্ণ পদকের মধ্যে ২৩ টা স্বর্ণই অর্জন করেছে চীনা নারী অ্যাথলেটরা। সাথে ৭ টি রৌপ্য পদক ও ১৭ টা ব্রোঞ্জ। ক্রীড়া বিশ্লেষকরা মনে করেন, অলিম্পিকে চীনা নারীদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য চীনের নারীদের ক্ষমতায়নের বহিঃপ্রকাশ । ভবিষ্যতের প্রতিযোগীদের জন্য এই অর্জন একটি বড় অনুপ্রেরণার উৎস হবে বলে মনে করেন তারা

সুপ্রিয় শ্রোতা আগামি কাল ২২ শে শ্রবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে কবিগুরুর প্রতি নিবেদন করছি শ্রদ্ধাঞ্জলি।  বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভারসিটির বাংলা বিভাগের চীনা ছাত্রছাত্রীদের কণ্ঠে এখন শুনুন একটি রবীন্দ্রসংগীত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’ গানটি পরিবেশন করেছেন তারা।

  আকাশ ছুঁতে চাই  পর্ব ৩৩_fororder_nvxing4

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করছেন আধুনিক যুবসমাজ বিষয়ক প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

চীনে নারীর ক্ষমতায়ন সমৃদ্ধ করছে শিল্পকে বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অলিম্পিকে চীনা নারীদের অর্জন বিষয়ক প্রতিবেদন: হোসনে মোবারক সৌরভ

অডিও সম্পাদনা:  রওজায়ে জাবিদা ঐশী